স্বামীকে পেটানোয় বিশ্বে তিন নম্বরে ভারতীয় মহিলারা! জেনেনিন পুরুষদের আইনি অধিকার সম্পর্কে

বাংলা হান্ট ডেস্ক: বর্তমান সময়ে সোশ্যাল মিডিয়ায় একটি ভিডিও তুমুলগতিতে ভাইরাল হচ্ছে। যেখানে দেখা গিয়েছে একজন মহিলা তাঁর স্বামীকে ব্যাট দিয়ে বেধড়ক পেটাচ্ছেন। জানা গিয়েছে যে, ওই চাঞ্চল্যকর ভিডিওটি রাজস্থানের আলওয়ারের। পাশাপাশি, ভিডিওটিতে যে ব্যক্তিকে দেখা গিয়েছিল তিনি হলেন একটি সরকারি স্কুলের প্রিন্সিপাল। পরে জানা যায় যে, তাঁর নাম অজিত সিং।

মূলত, বাড়িতে থাকা সিসিটিভি মারফত দেখা যায়, তাঁর স্ত্রী সুমন তাঁকে ব্যাট দিয়েই প্রহার করেছেন। জানা যায় যে, ৯ বছর আগে সুমনের সঙ্গে বিয়ে হয় অজিতের। বিয়ের পর কিছু সময়ের জন্য স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে সবকিছু ঠিকঠাক থাকলেও তারপর পরিস্থিতির অবনতি হতে থাকে। এমতাবস্থায়, অজিতের দাবি, প্রায়ই তাঁর স্ত্রী তাঁকে মারধর করেন।

১০ শতাংশ মহিলা তাঁদের স্বামীকে মারধর করেন:
তবে, শুধু অজিতই একমাত্র ব্যক্তি নন যিনি তাঁর স্ত্রীর হাতে প্রহৃত হয়েছেন। বরং, আমাদের দেশে এমন অনেক পুরুষ আছেন, যাঁরা তাঁদের স্ত্রীর হাতেই মারধরের শিকার হন। আমরা যদি ন্যাশনাল হেলথ সার্ভে (NFHS-5)-এর পরিসংখ্যান দেখি, তাহলে দেখা যায় যে ১৮-৪৯ বছর বয়সী মহিলাদের মধ্যে প্রায় ১০ শতাংশ মহিলা তাঁদের স্বামীকে কোনো না কোনো সময় মারধর করেছেন। এমনকি, কোনো কারণ ছাড়াই এই মারধরের ঘটনা ঘটেছে।

এই সমীক্ষায় প্রায় ১১ শতাংশ মহিলা স্বীকার করেছেন যে, তাঁরা গত এক বছরে তাঁদের স্বামীর সাথে হিংসাত্মক আচরণ প্রদর্শন করেছেন। সমীক্ষায় আরও জানানো হয়েছে, বয়স বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে স্বামীকে মারধর করেন এমন মহিলার সংখ্যাও বৃদ্ধি পায়। মূলত, ১৮-১৯ বছর বয়সী নারীদের মধ্যে ১ শতাংশেরও কম তাঁদের স্বামীর গায়ে হাত তুলেছেন। কিন্তু, ২০-২৪ বছর বয়সী ৩ শতাংশ মহিলা স্বামীকে মারধর করেছেন।

অপরদিকে, ২৫-২৯ বছর বয়সী ৩.৪ শতাংশ, ৩০-৩৯ বছর বয়সী ৩.৯ শতাংশ এবং ৪০-৪৯ বছর বয়সী ৩.৭ শতাংশ মহিলা তাঁদের স্বামীর গায়ে হাত তুলেছেন। প্রসঙ্গত উল্লেখ্য যে, গ্রামাঞ্চলের মহিলারা (৩.৭ শতাংশ) শহরের মহিলাদের (৩.৩ শতাংশ) তুলনায় তাঁদের স্বামীদের উপর বেশি আক্রমণ করেন।

জাতিসংঘের গবেষণায় উঠে এসেছে চমকপ্রদ পরিসংখ্যান:
২০১৬ সালে, জাতিসংঘ কর্তৃক পরিচালিত একটি সমীক্ষায় স্বামীদের বিরুদ্ধে স্ত্রীদের হিংসাত্মক ঘটনার একটি চমকপ্রদ পরিসংখ্যান প্রকাশ করা হয়েছিল। ওই পরিসংখ্যান অনুসারে জানা যায়, মিশরে বেশিরভাগ স্বামীকে গার্হস্থ্য কলহের জেরে মারধর করা হয়। এই তালিকায় দুই নম্বরে ব্রিটেন এবং তৃতীয় স্থানে রয়েছে ভারত। অর্থাৎ স্ত্রীর হাতে মারধরের ক্ষেত্রে ভারতীয় স্বামীরা বিশ্বে তিন নম্বরে রয়েছেন।

স্বামীর আইনগত অধিকার:
স্বামী বা স্ত্রী উভয়ের দ্বারাই প্রহারের ঘটনা অপরাধ হিসেবে বিবেচিত হয়। যদিও, স্ত্রীদের ক্ষেত্রে গার্হস্থ্য সহিংসতার আইন থাকলেও কিন্তু স্বামীদের ক্ষেত্রে তা নেই। তবে পারিবারিক সহিংসতার ক্ষেত্রে স্বামী হিন্দু বিবাহ আইনের ১৩ ধারায় বিবাহবিচ্ছেদ চাইতে পারেন। ওই ধারায় লেখা আছে, যদি অপর পক্ষ পিটিশনকারীর সঙ্গে মারধর, শারীরিক বা মানসিক হেনস্থা করেন, তাহলে তিনি ডিভোর্স পেতে পারেন।

HusbandWife 3

পাশাপাশি, IPC-র ১২০ বি ধারায় স্ত্রীর ষড়যন্ত্রের বিরুদ্ধে স্বামী মামলা করতে পারেন। ১৯১ ধারার অধীনে, স্বামী যদি মনে করেন যে, তাঁর স্ত্রী বা অন্য কেউ তাঁর বিরুদ্ধে আদালতে বা পুলিশের কাছে মিথ্যা প্রমাণ উপস্থাপন করছে, তাহলেও তিনি মামলা করতে পারেন। ধারা ৫০৬-এর অধীনে, যদি স্ত্রী, তাঁর স্বামী বা পরিবার বা সম্পত্তির ক্ষতি করার হুমকি দেন, তাহলে সেই স্বামী তাঁর স্ত্রীর বিরুদ্ধে মামলা করতে পারেন। সিআরপিসি ধারা ২২৭ অনুযায়ী, স্ত্রী যদি ৪৯৮এ-এর অধীনে মিথ্যা মামলা দায়ের করেন তবে স্বামী সিআরপিসির ২২৭ ধারার অধীনে স্ত্রী’র বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের করতে পারেন।


Sayak Panda
Sayak Panda

সায়ক পন্ডা, মেদিনীপুর কলেজ (অটোনমাস) থেকে মাস কমিউনিকেশন এবং সাংবাদিকতার পোস্ট গ্র্যাজুয়েট কোর্স করার পর শুরু নিয়মিত লেখালেখি। ২ বছরেরও বেশি সময় ধরে বাংলা হান্ট-এর কনটেন্ট রাইটার হিসেবে নিযুক্ত।

সম্পর্কিত খবর