বাংলাহান্ট ডেস্কঃ বর্তমানে মারণ রোগ করোনা ভাইরাস (COVID-19) সমগ্র বিশ্বে ছেয়ে গেছে। বিভিন্ন গবেষকরা এই ভাইরাসের প্রতিষেধক আবিষ্কারের চেষ্টায় প্রতিনিয়িত কাজ করে চলেছেন। তবে এরই মধ্যে করোনার সাময়িক প্রতিষেধক রূপে ভারত থেকে হাইড্রক্সি ক্লোরোকুইন দেওয়া হয়েছে বিভিন্ন দেশকে। তবে বিশেষজ্ঞরা প্লাজমা থেরাপির (Plasma therapy) কথাও জানিয়েছিলেন। করোনা আক্রান্ত ব্যক্তি সুস্থ হওয়ার পর, তাঁর শরীর থেকে প্লাজমা নিয়ে আক্রান্ত ব্যক্তির দেহে তা প্রতিস্থানপন প্রকিয়া। এই প্রক্রিয়ার মাধ্যমে সম্প্রতি কিছু মানুষ সুস্থও হয়েছেন।
গুজরাটের (Gujarat) আহমেদাবাদের বাসিন্দা ২৩ বছরের শ্রুতি ঠাক্কর সাফল্যের সাথে করোনা ভাইরাসের সাথে যুদ্ধে জয়ী হয়ে প্লাজমা দান করেছেন। ভারতের প্রথম প্লাজমা দানকারী মহিলা হিসাবে এই যুবতির নাম উঠে এসেছে। শ্রুতি ফ্রান্সের প্যারিসে লাক্সারি ব্র্যান্ড ম্যানেজমেন্টে মাস্টার্স কোর্স করছিলেন। করোনা ভাইরাসের সংক্রমনে তিনি আক্রান্ত হয়ে, ১৯ শে মার্চ দেশে ফিরে আসেন।
শ্রুতি জানান, “আমাকে সরাসরি বিমানবন্দর থেকে সিভিল হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল। তবে আমাকে বলা হয়েছিল যে, এটি নিয়মিত ফ্লু এবং আমার বাড়িতে গিয়ে বিশ্রাম নেওয়া উচিত। যাইহোক, পরের দিন আমি কাশি এবং গলাতে ব্যথা হওয়ার মতো আরও লক্ষণগুলি অনুভব করি এবং আবার হাসপাতালে ফিরে যাই”। গত ২১ শে মার্চ, রিপোর্টে করোনা পজেটিভ আসার পরে, শ্রুতিকে সিভিল হাসপাতালের করোনা ওয়ার্ডে স্থানান্তরিত করা হয়। শ্রুতি জানায়, “যদি আমি বলি যে কোনও ভয় নেই তবে আমি মিথ্যা বলব। আমার মনে আছে রাত ১১ টায় আমার রিপোর্ট পেয়েছিলাম এবং তারা সঙ্গে সঙ্গে আমাকে অন্যান্য করোনা রোগীর সাথে ওয়ার্ডে স্থানান্তরিত করে। এটি একটি কঠিন পর্ব ছিল”।
গত ৬ ই এপ্রিল শ্রুতি সম্পূর্ণ করোনা মুক্ত হওয়ার পর বাড়ি ফিরে আসে। এবং সে এই কঠিন যুদ্ধে তাঁকে সহায়তা করার জন্য চিকিৎসক এবং নার্সদের অনেক ধন্যবাদ জানিয়েছেন। শ্রুতি বাড়ি ফেরার ১০ দিন পর চিকিৎসকরা তাঁর কাছে প্লাজমা থেরাপির বিষয়ে বলেন। তারা তাঁকে অন্যান্য করোনা আক্রান্ত রোগীর বিষয়ে বলেন। শ্রুতি তৎক্ষণাৎ রাজি হয়ে যায় প্লাজমা দেওয়ার জন্য। শ্রুতি জানান, ‘গান্ধিনগরের স্বাস্থ্য কমিশনারও আমার সাথে যোগাযোগ করেছিলেন এবং পদ্ধতি সম্পর্কে আমাকে আশ্বস্ত করেছিলেন’।
নির্ধারিত দিনে স্মৃতি হাসপাতালে গিয়ে পদ্ধতির আগে একটি সাধারণ রক্ত পরীক্ষা, একটি সোয়াব পরীক্ষা এবং একটি পূর্ণ দেহ চেক আপ করিয়েছিলেন। তিনি জানান, “তারা আমাকে পুরোপুরি স্যানিটাইজ করা ঘরে নিয়ে গিয়ে আমাকে চেয়ারে বসতে বলে। তারপর চিকিৎসকরা একটি ব্যাগে প্লাজমা সংগ্রহ করে এবং এতে আমার কোন রক্তক্ষয়ও হয়নি। আমার শরীরের রক্ত, প্লাজমা নেওয়ার পর পুনরায় শরীরে ফিরে গিয়েচ্ছিল। পদ্ধতিটি খুবই সহজ ছিল এবং আমাকে হাসপাতাল কর্মীরা পর্যাপ্ত পরিমাণে তরল, খাবার এবং ভিটামিন দিয়েছিল। চিকিতসকরা আমাকে জানিয়েছিল, আমার শরীরে এখন যে অ্যান্টিবডি উৎপন্ন হচ্ছে, তা অনেক বেশি ক্ষমতা সম্পন্ন। তারা আমার শরীর থেকে নূন্যতম প্লাজমা প্রায় 400 মিলি নিয়েছিলেন’।
শ্রুতির এই প্লাজমা দানে তাঁর শরীরের কোনরূপ ক্ষতি হবে বলে জানিয়েছে চিকিৎসকরা। খুব শীঘ্রই তা পূর্ণ হয়ে যাবে। শ্রুতির থেকে নেওয়া প্লাজমা, ওই হাসপাতালে চিকিৎসারত ৫০ বছর বয়সী এক করোনা রোগীকে দেওয়া হয়েছিল, যিনি ভেন্টিলেটারের সহায়তায় ছিলেন। আশা করা যাচ্ছে তিনি খুব দ্রুতই সুস্থ হয়ে উঠবেন। শ্রুতি আবেদন জানিয়েছে, ‘বাড়িতে থাকুন, নিশ্চিত হয়ে নিরাপদে থাকুন এবং আপনি যদি প্লাজমা দানের যোগ্য হন, তবে দয়া করে এটি সম্পর্কে দুবার ভাববেন না। আপনি সম্ভাব্যভাবে জীবন বাঁচাতে পারেন’।