বাংলা হান্ট ডেস্ক: চিনের ক্রমবর্ধমান আগ্রাসনের মধ্যে, মেলবোর্নে অনুষ্ঠিত Quad Foreign Ministers Meeting-এর বৈঠকে ভারত তার অবস্থান স্পষ্ট করেছে। বৈঠকের পর যৌথ সাংবাদিক সম্মেলনে মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিঙ্কেনের উপস্থিতিতে ভারত স্পষ্ট জানিয়ে দেয় যে, আমেরিকার জন্য রাশিয়ার সঙ্গে বন্ধুত্বে কখনোই ছেদ পড়বেনা।
এছাড়াও, বিদেশ মন্ত্রী এস জয়শঙ্কর ইন্দো-প্যাসিফিক অঞ্চলের নিরাপত্তায় আরও বড় ভূমিকা পালনের জন্য চতুর্বার্ষিক জোটের প্রয়োজনীয়তার উপর জোর দিয়েছেন। এমনিতেই গুরুত্বপূর্ণ এই অঞ্চলে চিন তার সামরিক শক্তি বাড়ানোর চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। এমনকি, দক্ষিণ চিন সাগরের প্রায় পুরোটাই দাবি করে আসছে চিন।
তবে, তাইওয়ান, ফিলিপাইন, ব্রুনাই, মালয়েশিয়া এবং ভিয়েতনামও এর বিভিন্ন অংশ দাবি করেছে। জানা গিয়েছে, দক্ষিণ চিন সাগরে কৃত্রিম দ্বীপ ও সামরিক স্থাপনা নির্মাণ করেছে বেইজিং। এদিকে, পূর্ব চিন সাগর নিয়ে জাপানের সাথেও বেইজিংয়ের সামুদ্রিক বিরোধ রয়েছে। প্রকৃতপক্ষে চিনের এই আগ্রাসন মোকাবিলা করতেই গঠন করা হয়েছে Quad (Quadrilateral Security Dialogue)। এতে ভারত, জাপান, আমেরিকা ও অস্ট্রেলিয়াও যুক্ত।
ভারতের বিদেশ মন্ত্রী এস জয়শঙ্কর সহ অস্ট্রেলিয়ার বিদেশ মন্ত্রী মারিস পেইন, জাপানের বিদেশ মন্ত্রী ইয়োশিমাসা হায়াশি এবং মার্কিন বিদেশ মন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিঙ্কেনও তাঁদের আলোচনার আগে অস্ট্রেলিয়ার প্রধানমন্ত্রী স্কট মরিসনের সঙ্গে দেখা করেছেন এবং কোয়াড নেতাদের রূপরেখার বাস্তবায়ন নিয়ে আলোচনা করেছেন।
এছাড়াও, মেলবোর্নে কোয়াড পররাষ্ট্রমন্ত্রীদের চতুর্থ বৈঠকে বেশ কয়েকটি বিষয় নিয়ে আলোচনা হয়েছে। এর মধ্যে ইন্দো-প্যাসিফিক অঞ্চলকে উন্মুক্ত রাখা, নিরবচ্ছিন্নভাবে ভ্যাকসিন সরবরাহ, মানবিক সহায়তা, সন্ত্রাসবিরোধী প্রচেষ্টা নিয়েও বিস্তারিত আলোচনা হয়। চিনের ক্রমবর্ধমান হঠকারী মনোভাবের প্রেক্ষাপটেই এই বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়েছে। বৈঠকের পর এক যৌথ বিবৃতি জারি করা হয়। সেখানে মুম্বাই ও পাঠানকোট হামলার বিশেষ উল্লেখ ছিল। পাশাপাশি, সব দেশকে সন্ত্রাসবাদীদের নিরাপদ আশ্রয় সরাতে বলা হয়েছে।
এছাড়াও, ইউক্রেন ও মায়ানমারের অবস্থা নিয়েও হয় আলোচনা। এমনিতেই রাশিয়ার সঙ্গে ভারতের ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক রয়েছে। এই প্রসঙ্গে ব্লিঙ্কেন জানিয়েছিলেন, রাশিয়া যে কোনও সময় ইউক্রেন আক্রমণ করতে পারে। পাশাপাশি, পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস জয়শঙ্করকে ভারতের অবস্থান সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করা হলে তিনি জানান যে, ভারত ইতিমধ্যেই জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদে (UNSC) তার পক্ষ উপস্থাপন করেছে। ভারত চায় সব দেশের নিরাপত্তার বিষয়ে খেয়াল রাখা হোক।
পাশাপাশি, চিন-রাশিয়া অংশীদারিত্ব এবং এর মোকাবিলায় Quad কী করছে এমন প্রশ্নের জবাবে জয়শঙ্কর জানিয়েছেন, এই গোষ্ঠী কারও বিরুদ্ধে নয়। এতে সব আঞ্চলিক দেশের সার্বভৌমত্ব রক্ষার আহ্বান জানানো হয়েছে।
তবে, মায়ানমার ইস্যুতে ভারতের অবস্থান আমেরিকার চেয়ে ভিন্ন ছিল। যদিও, অস্ট্রেলিয়ার অবস্থান ভারতের সঙ্গে মিলে যায়। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য এবং কানাডা মায়ানমারে সামরিক অভ্যুত্থানের লক্ষ্যে স্থানীয় কর্মকর্তাদের দায়বদ্ধতার জন্য নিষেধাজ্ঞা আরোপের প্রস্তুতি নিচ্ছে।
এদিকে, ভারত স্পষ্ট করে দিয়েছে যে, তারা জাতীয় নিষেধাজ্ঞার নীতিকে সমর্থন করে না। পাশাপাশি, ভারত জানিয়ে দিয়েছে যে, তারা কোনো দেশ বা দেশের গোষ্ঠীর পক্ষ থেকে কোনো একতরফা নিষেধাজ্ঞা গ্রহণ করে না। এই ক্ষেত্রে, শুধুমাত্র জাতিসংঘের নিষেধাজ্ঞাগুলি মেনে চলা হয়।
উল্লেখ্য, জয়শঙ্কর ১০ থেকে ১৩ ফেব্রুয়ারি বিদেশমন্ত্রী হিসাবে অস্ট্রেলিয়ায় তাঁর প্রথম সফরে রয়েছেন। তিনি অস্ট্রেলিয়া, জাপান ও মার্কিন বিদেশমন্ত্রীদের সাথে চতুর্থ Quad Foreign Ministers Meeting বৈঠকে অংশ নেন।