ইংরেজি না জানায় হতে হয়েছিল অপমানিত! আজ তিনিই ১ লক্ষ কোটি টাকার কোম্পানির মালিক

বাংলা হান্ট ডেস্ক: প্রত্যেক সফল মানুষের সাফল্যের পেছনে থাকে এক অদম্য লড়াইর কাহিনি, যেখানে তাঁকে পেরিয়ে আসতে হয় সমস্ত প্রতিবন্ধকতাকে। প্রবল নিষ্ঠা এবং পরিশ্রমের জেরেই তাঁরা পৌঁছে যেতে সক্ষম হন সফলতার শীর্ষে। পাশাপাশি, তাঁদের এই লড়াকু মানসিকতা উদ্বুদ্ধ করে সকলকেই।

বর্তমান প্রতিবেদনেও আজ আমরা এমন একজন ব্যক্তির প্রসঙ্গ উপস্থাপিত করব যিনি একাধিক প্রতিবন্ধকতাকে তুড়ি মেরে উড়িয়ে দিয়ে আজ কঠোর পরিশ্রমের ভিত্তিতে সাফল্যের সাথে গড়ে তুলেছেন নিজের সাম্রাজ্য। শুধু তাই নয়, আজ তাঁর তৈরি করা মাধ্যম ব্যবহার করে উপকৃত হচ্ছেন দেশের কোটি কোটি মানুষও।

   

বিজয় শেখর শর্মা, উত্তরপ্রদেশের আলিগড় জেলার একটি মধ্যবিত্ত পরিবারে জন্মগ্রহণ করেছিলেন। তাঁর মা ছিলেন একজন গৃহবধূ এবং বাবা ছিলেন একজন স্কুল শিক্ষক। বিজয় দ্বাদশ শ্রেণি পর্যন্ত হিন্দি মাধ্যমের বিদ্যালয়েই পড়াশোনা সম্পন্ন করেছিলেন। এদিকে, বিদ্যালয়ের গন্ডী শেষ করার পর, তিনি উচ্চশিক্ষার জন্য দিল্লি কলেজ অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে (ডিসিই) ভর্তি হন।

কিন্তু, প্রথম থেকেই হিন্দি মিডিয়াম স্কুলে পড়াশোনার জন্য বিজয় শেখর শর্মা ইংরেজিতে খুব একটা সাবলীল ছিলেন না। যে কারণে পড়াশোনার সময়ে ইংরেজি বলতে এবং বুঝতে অসুবিধা হত তাঁর। এমনকি, যখন অধ্যাপকরা তাঁকে কলেজে ইংরেজিতে প্রশ্ন করতেন তখন তাঁকে বেশ সমস্যাতেও পড়তে হত। মাঝে মাঝে অবস্থা এতটাই বেগতিক হয়ে পড়ত যে, কলেজের ক্লাসেই সকলের ঠাট্টার পাত্র হয়ে উঠতেন তিনি।

এরপরই ইংরেজিতে পড়ার জন্য তিনি তাঁর কিছু বন্ধুর সাহায্য নেন এবং হিন্দি থেকে ইংরেজিতে কঠিন শব্দ অনুবাদ করে তাদের অর্থ বুঝতে শুরু করেন। ধীরে ধীরে ইংরেজিতেও ভালো দখল তৈরি করে নেন বিজয়।যদিও, ইঞ্জিনিয়ারিং পড়ার সময়ে তিনি পড়াশোনার চেয়ে ব্যবসায় বেশি আগ্রহী ছিলেন। সেই সময় তিনি নিজের একটি ওয়েবসাইট Indiasite.net তৈরি করেন। যার মাধ্যমে তিনি অর্থ উপার্জনও করতেন। যদিও, ওয়েবসাইট তৈরির দু’বছর পরই তিনি এটি কয়েক লক্ষ টাকায় বিক্রি করে দেন।

তারপরে তিনি ২০০০ সালে ONE97 কমিউনিকেশন প্রতিষ্ঠা করেন, যা মোবাইল মারফত বিভিন্ন খবর, ক্রিকেট স্কোর, রিংটোন, জোকস এবং পরীক্ষার ফলাফল প্রদান করত। এটিই মূলত Paytm-এর মূল কোম্পানি। দক্ষিণ দিল্লিতে একটি ছোট ভাড়ার ঘর থেকে সংস্থাটি শুরু করেছিলেন বিজয়। সেখান থেকেই আজ তিনি তাঁর কঠোর পরিশ্রমের ভিত্তিতে দুর্দান্ত সাফল্য অর্জন করেছেন।

Vijay Shekhar Sharma

এরপরই ২০১১ সালে, তিনি স্মার্টফোনের সাহায্যে একটি পেমেন্ট মডেলে কাজ করার সিদ্ধান্ত নেন। এই প্রজেক্টে কাজ করার সময়, তিনি মোবাইল পেমেন্টের একটি ব্লুপ্রিন্ট তৈরি করেছিলেন, যা Paytm নামে জনপ্রিয় হয়। তারপর ২০১৪ সালে Paytm মোবাইল ওয়ালেট চালু করে।

বর্তমানে Paytm ভারতীয় বাজারে বিপুল জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। প্রায় প্রতিদিনই গ্রাহক সংখ্যা বাড়ছে Paytm-এর। পাশাপাশি, বর্তমান ডিজিটাল যুগে Paytm-এর জন্য পেমেন্ট সংক্রান্ত সমস্যা যে অনেকটাই মিটেছে তা একবাক্যে স্বীকার করে নেন ব্যবহারকারীরা। আর এর পেছনেই রয়েছে বিজয় শেখর শর্মার বিরাট অবদান। এদিকে, তিনি যেভাবে নিষ্ঠা এবং কঠোর পরিশ্রমের মাধ্যমে এই বিপুল সাম্রাজ্য বানিয়েছেন তা নিঃসন্দেহে উদ্বুদ্ধ করবে দেশের নবীন প্রজন্মদেরও।

Sayak Panda
Sayak Panda

সায়ক পন্ডা, মেদিনীপুর কলেজ (অটোনমাস) থেকে মাস কমিউনিকেশন এবং সাংবাদিকতার পোস্ট গ্র্যাজুয়েট কোর্স করার পর শুরু নিয়মিত লেখালেখি। ২ বছরেরও বেশি সময় ধরে বাংলা হান্ট-এর কনটেন্ট রাইটার হিসেবে নিযুক্ত।

সম্পর্কিত খবর