বাংলাহান্ট ডেস্ক: দেশকে অর্থনৈতিক দুরবস্থা থেকে কিছুটা স্বস্তি দিতে গতকালই পেট্রোলের দামের উপর ভর্তুকি দেওয়ার ঘোষণা করেছিলেন পাক প্রধানমন্ত্রী শেহবাজ শরিফ (Shahbaz Sharif)। রমজান মাসে আমজনতাকে স্বস্তি দিতে এই পদক্ষেপ করেছিলেন প্রধানমন্ত্রী। শুধু তাই নয়, আটার উপরেও ভর্তুকি দেওয়ার কথা ঘোষণা করেছিলেন তিনি। পাক সরকারের এই পদক্ষেপই তাদের আরও বিপদের দিকে ঠেলে দিল। আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (IMF) এমনিতেই তাদের ঋণ দিতে চাইছিল না।
শেহবাজ শরিফের গতকালের পদক্ষেপের পর তাদের উপর বেজায় চটেছে আইএমএফ। ফলে এ বার আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের থেকে আর্থিক সাহায্য পাওয়া আরও কঠিন হয়ে গেল পাকিস্তানের জন্য। পাকিস্তানকে বেল আউট প্যাকেজ দেওয়ার কয়েকটি শর্ত দিয়েছিল আইএমএফ। তার মধ্যে একটি ছিল এই যে কোনও জিনিসের উপরই কোন রকম ভর্তুকি দেওয়া চলবে না। কিন্তু গতকাল তহবিলের সেই আদেশ অমান্য করতে দেখা গেল পাক সরকারকে।
এতেই বেজায় চটেছে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল। তাদের কথায়, এই পদক্ষেপ করার আগে তাদের সঙ্গে আলোচনা করার প্রয়োজন বোধ করেননি পাক প্রধানমন্ত্রী। তাই এ বার তারা কতটা আর্থিক সাহায্য পাবে, তা নিয়ে সন্দেহ প্রকাশ করেছেন অর্থনীতিবিদরা। উল্লেখ্য, গতকাল পেট্রোলের উপর কোটি কোটি টাকার ভর্তুকি ঘোষণা করেন শেহবাজ শরিফ। জানিয়ে দেন, ছোট গাড়ির ক্ষেত্রে ৫০ টাকা ছাড় পাওয়া যাবে পেট্রোলের দামে। একইসঙ্গে আটার উপর ৭ হাজার ৩০০ কোটি টাকা ভর্তুকি ঘোষণা করেন তিনি।
পাক মিডিয়া রিপোর্ট অনুযায়ী, এই পদক্ষেপই তাদের আর্থিক সাহায্য পাওয়ার পথে বাধা হয়ে দাঁড়াল। খাইবার পখতুনওয়ালা এবং পাঞ্জাব প্রদেশ সরকার আটার উপর ৭ হাজার ৩০০ কোটি টাকার ভর্তুকি ঘোষণা করেছিল। সূত্রের খবর, শেহবাজ শরিফের এই পদক্ষেপের উপর প্রশ্ন তুলেছে আইএমএফ। তাদের প্রশ্ন, প্রায় নিঃস্ব হয়ে যাওয়া একটি দেশ ভর্তুকি দেওয়ার অর্থ কোথা থেকে পেল? একইসঙ্গে তারা এও জানতে চেয়েছে, এই প্রকল্পগুলির বাস্তবায়ন কীভাবে হবে। আইএমএফ-এর প্রতিনিধি এস্থার পেরেজ বলেন যে পাকিস্তান প্রশাসন তাদের সঙ্গে কোনও আলোচনাতেই যায়নি।
পেরেজ আরও বলেন, কেলেঙ্কারি এড়াতে আইএমএফ পাকিস্তানের কাছে এই প্রকল্পের চালনা, খরচ, লক্ষ্য এবং সুরক্ষার ব্যাপারে জানতে চেয়েছে। পাকিস্তান সরকার জানিয়েছে, এই প্রকল্পগুলির মাধ্যমে দেশের দরিদ্র শ্রেণিকে স্বস্তি দেওয়া হচ্ছে। কিন্তু তাদের এই পদক্ষেপের পর তাদের পক্ষে ঋণ পাওয়া আরও দুঃসাধ্য হয়ে গেল। প্রসঙ্গত, এর আগেও শেহবাজ শরিফের সরকার এমন অনেক রাজনৈতিক পদক্ষেপ করেছিল যার জন্য তাদের ঋণ দেওয়া থেকে পিছিয়ে এসেছিল আইএমএফ।
আইএমএফ জানিয়েছে, পাকিস্তান সরকার তাদের বন্ধু-রাষ্ট্রগুলির কাছে ৬০০ কোটি টাকার আর্থিক সাহায্য চাইতে পারে। পাকিস্তানের রাজনৈতিক পরিস্থিতিও এখন বেশ উত্তপ্ত। বিগত কয়েক দিন ধরে প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী ও পিটিআইয়ের নেতা ইমরান খানকে (Imran Khan) গ্রেফতার করা নিয়ে চলেছে রাজনৈতিক তরজা। তাঁর সৃষ্ট চাপের ফলে পাকিস্তানে যে কোনও সময়ে নির্বাচনের ঘোষণা করা হতে পারে। এটি যদি হয়, তাহলে অচিরেই গদি হারাবেন শেহবাজ। তাই ভোটব্যাঙ্ক ধরে রাখতে তিনি পেট্রোল ও আটার উপর ভর্তুকিগুলি ঘোষণা করলেন। এমনই মত রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞদের।