সিনেমা ফেল! বাংলায় ঢুকতেই চলন্ত গাড়ি থেকে উধাও ১০ কোটি টাকার আইফোন, হাইকোর্টে সংস্থা

বাংলা হান্ট ডেস্কঃ লুটের ঘটনা সিনেমাকেও হার মানাবে। চলন্ত গাড়ি থেকে উধাও ১০ কোটি টাকার আইফোন (iPhone)। এও সম্ভব? বাংলা থেকে আইফোন লুটের গোটা ঘটনা শুনে স্তম্ভিত কলকাতা হাই কোর্ট (Calcutta High Court)। গত বছর ২৬ সেপ্টেম্বর ঘটে যাওয়া সেই ঘটনার এখনও কোনও কিনারা করতে পারেনি পুলিশ। এবার হাইকোর্টে মামলা উঠলে জেলার পুলিশ সুপারের নজরদারিতে তদন্তের কড়া নির্দেশ দিয়েছেন কলকাতা হাইকোর্টের বিচারপতি জয় সেনগুপ্ত।

ঠিক কি ঘটেছিল? জানা গিয়েছে গত সেপ্টেম্বর মাসের ২৬ তারিখ চেন্নাই থেকে একটি লরি করে মোট ৯.৭০ কোটি টাকা মূল্যের অ্যাপলের আইফোন কলকাতার (Kolkata) উদ্দেশে নিয়ে আসা হচ্ছিল। এত বিপুল অর্থের আইফোন থাকায় লরির গতিবিধির উপর নজরদারি চালাতে অত্যাধুনিক ‘জিপিএস সিস্টেম’ ব্যবহার করে তা গন্তব্যে পাঠানোর ব্যবস্থা করে পরিবহণ সংস্থাটি। এমনভাবে সমস্ত সিস্টেমটি রাখা হয়েছিল যাতে লরিটি ৫ মিনিটের বেশি কোথাও দাঁড়ালেই পরিবহণ সংস্থার অফিসে সঙ্গে সঙ্গে পৌঁছে যাবে সতর্কবার্তা। যা দেখে চালকের সাথে যোগাযোগ করা হবে। সেই ভাবেই রওনা দেয় লরিটি। সব কিছু ঠিকঠাক চললেও পশ্চিমবঙ্গে প্রবেশ করতেই বিপত্তি।

ওই পরিবহণ সংস্থার অভিযোগ, রওনা হওয়ার পরদিন ভোর ৬টায় পশ্চিম মেদিনীপুরের নতুন বাজার এলাকার একটি পেট্রল পাম্পে লরিটি নির্ধারিত সময়ের থেকে বেশি সময়ের জন্য দাঁড়িয়ে ছিল। সেই দেখেই বেজে ওঠে সতর্কবার্তা। তৎক্ষণাৎ যোগাযোগ করা হয় চালকের সাথে। কিন্তু একাধিকবার লরির চালককে ফোন করা হলেও কোনও সাড়া মেলেনি। এরপর কোনও উপায় না পেয়ে পরিবহণ সংস্থাটি ৪৫ মিনিট বাদে ডেবরা থানায় সমস্ত বিষয়টি জানায়।

অভিযোগ পেয়ে ঘটনাস্থলে পৌঁছায় পুলিশ। লরিটি উদ্ধারও করা হয়। তবে সেখানে গিয়ে ফাঁকা লরি উদ্ধার করে পুলিশ। কোনও আইফোন সেখানে ছিল না। এমনকি লরি চালক, খালাসি কারোর দেখা মেলেনি। অভিযোগের ভিত্তিতে পুলিশ তদন্তে নামলেও কোনও সুরাহা করতে পারেনি। ওই পরিবহণ সংস্থার আইনজীবী আদালতে জানান, পুলিশ প্রথমে এফআইআর নেয়নি। গত ১০ অক্টোবর এফআইআর দায়ের হলেও এখনও কোনও খোঁজ দিতে পারেনি। কাউকে গ্রেফতারও করা হয়নি।

high court

আরও পড়ুন: ‘নওশাদভাই দাঁড়ালে…’, এক চালেই ঘুরে যাবে খেলা? ভোটের আগেই অভিষেকের ভবিষ্যৎ বলে দিলেন শুভেন্দু

পরিবহণ সংস্থার আইনজীবী আদালতে আশঙ্কাপ্রকাশ করে বলেন, চলন্ত অবস্থাতেই ফোন গুলি চুরি করা হয়েছে। কারণ তার আগে গাড়িটি কোথাও নির্ধারিত সময়ের বেশি দাঁড়ায়নি। পশ্চিমবঙ্গে ঢোকার পরে হঠাৎ ওই লরির পাশাপাশি আরেকটি লরি চলে আসে। দীর্ঘক্ষণ ওই দুই লরি পাশাপাশি চলছিল। মনে করা হচ্ছে এই অবস্থাতেই প্ল্যানমাফিক এই কাজ করা হয়েছে।

ঘটনায় পুলিশি তদন্তের ওপর ভরসা করতে না পেরে হাইকোর্টের দ্বারস্থ হয় ওই পরিবহন সংস্থাটি। গত বৃহস্পতিবার হাই কোর্টে বিচারপতি জয় সেনগুপ্তর এজলাসে মামলাটি উঠলে সংস্থা তরফে আইনজীবী জানান, সারা দেশজুড়ে পরিবহণের সঙ্গে যুক্ত ওই সংস্থার ভালো সুনাম রয়েছে। তবে এইভাবে লুটের ঘটনায় তাদের সংস্থা প্রশ্নের মুখে পড়েছে। এই ঘটনার তদন্ত সিআইডি বা অন্য কোনও সংস্থাকে দিয়ে করানোরও আবেদন জানায় সংস্থাটি। যদিও রাজ্য জানায় তদন্তে নেমে ইতিমধ্যেই তারা অনেক ফোনের ‘আইএমইআই কোড’ নিষ্ক্রিয় করেছে।

রাজ্য পুলিশ আদালতে জানায়, ঘটনার পর কালোবাজারিতে অনেক ফোন দেশের একাধিক রাজ্যে বিক্রি হয়ে গিয়েছে। চুরি যাওয়া কয়েকটি ফোনের হদিস মিলেছে দিল্লিতে। তবে সেক্ষেত্রে পশ্চিম মেদিনীপুর জেলার পুলিশ সুপারের পক্ষে এই ঘটনার জন্য দিল্লিতে গিয়ে তদন্ত করা সম্ভব নয়। সব শুনে বিচারপতি সেনগুপ্ত আপাতত জেলার পুলিশ সুপারকে এই তদন্তে নজরদারি করার নির্দেশ দিয়েছেন। মামলার পরবর্তী শুনানি ফেব্রুয়ারীতে।

Sharmi Dhar
Sharmi Dhar

শর্মি ধর, বাংলা হান্ট এর রাজনৈতিক কনটেন্ট রাইটার। উত্তরবঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সাংবাদিকতায় স্নাতকোত্তর। বিগত ৩ বছর ধরে সাংবাদিকতা পেশার সঙ্গে যুক্ত ।

সম্পর্কিত খবর