বাংলা হান্ট নিউজ ডেস্কঃ আজ আইপিএলের মঞ্চে (IPL 2023) সত্যি সত্যিই অসম্ভবকে সম্ভব, অবাস্তবকে বাস্তবে পরিণত করেছেন কেকেআরের (KKR) মিডল অর্ডারের স্তম্ভে পরিণত হওয়া রিঙ্কু সিং (Rinku Singh)। রশিদ খানের (Rashid Khan) হ্যাটট্রিক কেকেআরকে আজ কার্যত ম্যাচ থেকে ছিটকে দিয়েছিল। ট্রাই ব্যর্থ হতে চলেছিল নীতিশ রানা এবং ভেঙ্কটেশ আইয়ারের লড়াই। বিজয় শঙ্কর ও সাই সুদর্শনের ব্যাটিং এবং আলঝারী জোসেফ ও রশিদ খানের বোলিংয়ে ভর করে ম্যাচ নিজেদের পকেটে প্রায় ভরে নিয়েছিল গুজরাট টাইটান্স।
শেষ ওভারে জয়ের জন্য কলকাতা নাইট রাইডার্সের প্রয়োজন ছিল ২৯ রান। উমেশ যাদব ওভারের প্রথম বলে একটি সিঙ্গেল নিয়ে রিঙ্কুকে স্ট্রাইক আনেন। এরপর ওভারের যশ দয়ালের বাকি ডেলিভারিগুলিকে বাউন্ডারির বাইরে পাঠিয়ে ইতিহাস তৈরি করে দেন এই উত্তরপ্রদেশের ক্রিকেটার। অথচ একসময় এই কেকেআর ভক্তরাই চূড়ান্ত সমালোচনা এবং ব্যাঙ্গে ভরিয়ে দিয়েছিল তাকে। দীর্ঘদিন কেকেআরের দলে থাকা সত্ত্বেও প্রথম চার বছর প্রায় মাঠে নামার সুযোগ পাননি বললেই চলে।
২০১৮ সাল থেকে নাইট রাইডার্স শিবিরে আছেন। প্রথম চার মরশুমে তিনি ৮০ লাখ টাকার চুক্তিতে দলে ছিলেন। তার ঘরোয়া পারফরম্যান্সের দ্বারা প্রভাবিত হয়ে, কেকেআর তাকে আইপিএল ২০২২-এর আগে অকশনে তাকে ফের ৫৫ লাখ টাকা দিয়ে তাকে দলে সামিল করেছিল। যদিও রিঙ্কু বর্তমানে আর্থিকভাবে অত্যন্ত সচ্ছল, কিন্তু তার শৈশব এবং কৈশোর জীবন একেবারেই সোনার চামচ মুখে দিয়ে কাটেনি। রিঙ্কু ১৯৯৭ সালে উত্তর প্রদেশের আলিগড়ে খানচাঁদ সিং-এর পরিবারে জন্মগ্রহণ করেছিলেন, যিনি লখনউয়ের একটি এলপিজি গ্যাস এজেন্সি থেকে এলপিজি সিলিন্ডার সরবরাহের কাজ করতেন। ওই শহরেই রিঙ্কু তার বাবা-মা এবং চার ভাইবোনের সাথে গ্যাস এজেন্সির স্টোরেজ কম্পাউন্ডে দুটি ছোটো ঘরে থাকতেন।
আর্থিক দিক দিয়ে অত্যন্ত দুর্বল একটি পরিবারে বেড়ে ওঠায় তার ভাই তাকে ঝাড়ুদার এবং পরিচ্ছন্নতাকর্মীর কাজে যুক্ত করে দিয়েছিল। রিঙ্কু যখন ক্রিকেট খেলতে শুরু করেন, তখন তিনি অনেক কঠিন পরিস্থিতির সম্মুখীন হন। কিন্তু খেলার প্রতি তার উদ্যম এবং ভালোবাসা কখনও থেমে থাকেনি। একবার দিল্লিতে একটি স্থানীয় টুর্নামেন্টে সেরা খেলোয়াড় হওয়ার জন্য তিনি একটি মোটরবাইক জিতেছিলেন, যেটি তিনি তার বাবাকে ভারী গ্যাস সিলিন্ডার বিতরণের জন্য দিয়ে দিয়েছিলেন। <span;>নিজের প্রতিভার কারনে মাত্র ১৭ বছর বয়সে উত্তরপ্রদেশের রাজ্য দলে সুযোগ পেয়েছিলেন ছোট্ট রিঙ্কু।
২০১৭ সালে পাঞ্জাব কিংস তাকে দলে নিলেও মাঠে নামার সুযোগ দেয়নি। তার পরের মরশুমেই কলকাতা তাকে ৮০ লক্ষ টাকায় কিনে নেয়। এই প্রসঙ্গে রিঙ্কু পরে বলেছিলেন “ভেবেছিলাম ২০ লাখ টাকা পাবো, কিন্তু আমাকে ৮০ লক্ষ টাকায় দলে নেওয়া হলো! মনের মধ্যে প্রথম যে চিন্তা এসেছিল তা হল আমি আমার বড় ভাইয়ের বিয়েতে অবদান রাখতে পারি এবং আমার বোনের বিয়েতেও কিছু সঞ্চয় করতে পারি এবং আমি একটি ভাল বাড়িতেও থাকতে পারবো।” আর আজকে নাইটদের ম্যাচে জিতিয়ে আবেগপ্রবণ রিঙ্কু বলেন, “আমার বাবা অনেক সংগ্রাম করেছেন, আমি একজন কৃষক পরিবার থেকে এসেছি। প্রত্যেকটি বল, যেগুলো আমি মাঠের বাইরে পাঠিয়েছি, সবকটি সেই লোকদের জন্য উৎসর্গ করলাম, যারা আমার জন্য অনেক ত্যাগ স্বীকার করেছেন।”