বাংলাহান্ট ডেস্কঃ শেষ হতে চলেছে রাজ্যের ৪ টি জেলায় ৩০ টি আসনে ভোট গ্রহণ। দিনভর একাধিক কেন্দ্র থেকে উঠে এল রাজনৈতিক হিংসার খবর। যার মধ্যে অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ হয়ে উঠেছিল নন্দীগ্রামে কেন্দ্রের বয়াল। গত তিনদিন ধরে নিজের কেন্দ্র নন্দীগ্রামের (Nandigram) রেয়াপাড়ায় ভাড়া বাড়িতে থেকে ভোট প্রচার চালিয়ে এসেছেন তৃণমূল সুপ্রিমো মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তবে ভোটের দিন দুপুরে পর্যন্ত তিনি ভাড়া বাড়িতেই ঘরবন্দী ছিলেন। দুপুর সেখান থেকে ভোটগ্রহণের পরিস্থিতি সরেজমিনে খতিয়ে দেখতে বেরিয়ে পড়েন মমতা। সেখানেই ঘটল বিপত্তি।
হুইলচেয়ারে চেপে মমতা (Mamata Banerjee) বয়ালে ঘুরে ঘুরে এলাকাবাসীর সঙ্গে কথা বলেন। একাধিক জায়গা থেকে হিংসার খবর উঠে আসায় তিনি তার জন্য কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীকে দায়ী করেন। তিনি বলেন, ‘কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর নির্দেশেই হিন্দিভাষীদের দিয়ে অশান্তি লাগানোর চেষ্টা চলছে।’ তিনি আরও বলেছিলেন, ‘নির্বাচন কমিশনকে (Election Commission) সকাল থেকে ৬৩টি অভিযোগ করা হয়েছে, একটিরও কোনও ব্যবস্থা নেয়নি।’ তার জন্য নির্বাচন কমিশনকে তোপ দেগে বলেছিলেন ‘দয়া করে নিরপেক্ষ হন’।
তারপর দুপুর ১টা ৪০ নাগাদ মমতা বয়ালের (Boyal) সাত নম্বর বুথে ঢোকেন। এরপরই বুথে বাইরের পরিস্থিতি রণক্ষেত্রর রূপ ধারণ কারণ। শয়ে শয়ে লোকজন বাঁশ, লাঠিশোটা নিয়ে জড় হয়। তৃণমূল বিজেপির কর্মী-সমর্থকদের ওই সংঘাতে রীতিমত খণ্ডযুদ্ধের পরিস্থিতি তৈরি। তদুপরি জানা যাচ্ছে তখন সেখানে ছিলনা কেন্দ্রীয় বাহিনী, এমনকি পুলিশও ছিলনা পর্যাপ্ত পরিমাণে। ফলস্বরূপ বুথের মধ্যেই আটকে পড়েন মমতা। সেখান থেকে রাজ্যপালকে (Jagadeep Dhankar) ফোন করে শান্তিপূর্ণ ভোটগ্রহণের আর্জি জানান মমতা।
মমতার বুথে ঢোকার প্রায় দেড় ঘন্টা বাদে সেখানে পৌঁছয় নন্দীগ্রামের নির্বাচন কমিশনের বিশেষ পর্যবেক্ষক নগেন্দ্রনাথ ত্রিপাঠি (Nagendra Nath Tripathi) । বয়ালের ৭ নম্বর বুথের বারান্দায় বসে থাকা মুখ্যমন্ত্রী তাঁর নিরপেক্ষতা নিয়ে প্রশ্ন তুলতেই, মুখ্যমন্ত্রীর চোখে চোখ রেখে নিজের উর্দি ধরে সিনিয়র আইপিএস অফিসার (IPS Officer) নগেন্দ্র স্পষ্ট বললেন, ‘ম্যাডাম এই খাকি পরে কোনও দাগ নেব না।’ মমতা তখন বলে উঠলেন ‘দাগ তো অনেকেই নিয়ে নিয়েছে’। তারপরই সম্মানের সহিত সটান উত্তর দেন নগেন্দ্র। তিনি বলেন ‘আমি নেব না’।
নন্দীগ্রামের একাধিক কেন্দ্রে এদিন তৃণমূল (TMC) পোলিং এজেন্ট দিতে না পারার অভিযোগ নিয়ে সরব হয়েছিল। তারও জবাব দিয়ে আইপিএস অফিসার জানান, ‘ম্যাডাম আমি ওনার বাড়িতে গিয়েছিলাম, ওনাকে নিয়ে আসতে।’
এমনকি এদিন বয়ালের ওই বুথের বাইরে রণক্ষেত্র পরিস্থিতি তৈরি হওয়া নিয়ে মমতা নগেন্দ্রকে বলেন ‘তোমাকেও অনেকবার বলা হয়েছে।’ তার জবাবে তিনি বলেন, ‘আমি সাকালে ব্যক্তিগত ভাবে দেখে গিয়েছি, তেমন কিছু ছিল না।’ তবে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এখানেই থেমে না থেকে বলেন, ‘কিচ্ছু লাভ নেই। ওসব তোমরা শিখিয়ে দাও।’ মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এভাবে তাঁকে দায়ী করতেই নগেন্দ্র ত্রিপাঠি, উর্দির কলার ছুঁয়ে বলেন, ‘ম্যাডাম এই খাকি পরে এই দাগ নেই না।’ এরপর তিনি মুখ্যমন্ত্রীকে সেখানে শান্তিপূর্ণ ভোট হওয়ার আশ্বাস দিয়ে সেখান থেকে চলে যেতে বলেন। তারপরই মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সেখান থেকে প্রায় আড়াই ঘন্টা বাদে বেরিয়ে নন্দীগ্রামের পার্টি অফিসে গিয়ে বসেন।’
তার আগে অবশ্য বুথ থেকে বেরিয়েই নন্দীগ্রামে ৯০ শতাংশ ভোট তৃণমূলেই পড়বে দাবি করেন মমতা। এবং দক্ষিণ ২৪ পরগণার জয়নগরে মোদীর (Narendra Modi) জনসভা নিয়েও তিনি প্রশ্ন তোলেন তিনি।