BanglaHunt : মানুষ কী কেবল একবার জন্মায়? নাকি বারবার ফিরে আসে পৃথিবীর কোলে? মানুষের মনে এই প্রশ্ন জমে রয়েছে সেই সুদূর অতীত থেকে। যার শেষ হয়নি এখনো। উত্তরটাও পাওয়া যায়নি সঠিক। তবে উত্তর পাওয়া যাক কিংবা না যাক, এ নিয়ে অনুসন্ধান কখনো থেমে থাকেনি পৃথিবী বাসীর। সবসময়েই তারা পেতে চেয়েছে তাদের প্রশ্নের উত্তর। আর তাদের এই আগ্রহকে বারবার উসকে দিয়েছে পৃথিবীর নানা প্রান্ত থেকে নিজেদের অতীত জীবনকে মনে করতে পারা কিছু জাতিস্মর। যাদের অনেকেরই দাবী প্রায় সময়েই সত্যি বলে প্রমাণিত হয়েছে।
তবে কী সত্যিই পুনর্জন্ম বলে কিছু আছে? আত্মা কী বারবার জন্ম নেয় বহু মানুষের বেশে? যদি তাই হয় তাহলে আমরা সবাইই তো এর আগে আর কেউ একজন ছিলাম। কী ছিলাম আমরা সেই জন্মে? কী করে মনে করা যাবে সেটা ?
এসবের উত্তর খুঁজতে গিয়ে বিজ্ঞানী ও দার্শনিকেরা সবসময়েই যেতে চেয়েছেন মৃত্যুর কাছে। মৃত্যুর পর কী হয় মানুষের সঙ্গে? মানুষের শরীরের ভেতরে যদি আত্মা থেকে থাকে তাহলে কী হয় সেই আত্মার? খুব কাছ থেকে এসব নিয়ে পরীক্ষা করে অনেকে বলেছেন একেবারে ভিন্ন কথা। আটলান্টার ইয়ার্কস ন্যাশনাল প্রাইমেট রিসার্চ প্রতিষ্ঠানটিতে কাজ করা দুই গবেষক ব্রায়ান জি. ডায়াস ও কেরি রেসলারের গবেষণানুসারে, আদতে পুনর্জন্ম বলে কিছু নেই। মানুষের মস্তিষ্কের ভেতরে থাকা স্মৃতিগুলো বংশগতভাবে অন্য মানুষে প্রবাহিত হতে পারে। আর সেভাবেই একজন মানুষ জন্ম থেকেই অন্য কারো সঙ্গে ঘটে যাওয়া ঘটনা গুলো মনে করতে পারে। যাকে আমরা মনে করে থাকি গতজন্মের স্মৃতি। কিন্তু সত্যিই কী এই গবেষকরা ঠিক?
জার্মান থেরাপিস্ট ট্রুটজ হার্ডোর ‘চিলড্রেন হু হ্যাভ লিভড বিফোর: রিইনকারনেশন টুডে’ বইটিতে গতজন্মের কথা মনে করতে পারা কিছু শিশুকে নিয়ে কাজ করেন। আর সেখানেই তিনি জানান ড্রুজ আদিবাসী দলের একটি ছেলের কথা। শিশুটি জন্ম নিয়েছিল ভয়ংকর এক আঘাতের চিহ্ন নিয়ে। তবে তিন বছর পর্যন্ত সে কোনো কথা বলেনি । তিন বছর বয়স হওয়ার পর হঠাৎ একদিন সে সবাইকে জানায় যে সে আসলে অনেক দূরের একটি গ্রামের মানুষ। মৃত্যুর পর এখানে জন্মেছে সে আবার। নিজের কথার প্রমাণ হিসেবে গত জন্মে তাকে যে খুন করা হয়েছিল সেই আঘাত আর খুনীকে ধরিয়ে দেয় সে। এমনকি দেখিয়ে দেয় নিজের লাশটাও! যদি বংশগত জীন হয় এই স্মৃতির পেছনের প্রধান হাতিয়ার তাহলে প্রশ্ন উঠতেই পারে যে অনেক দূরের মানুষের কাছ থেকে সেটা কী করে এলো? কারণ সেখানে তো কোনোরকম শারিরীক সম্পর্ক থাকেনা জাতিস্মর মানুষটির তার আগের জন্মের দাবী করা ব্যক্তিটির সঙ্গে।
ঘটনাটি রায়ানের। জিম টাকার পুনর্জন্ম আর গতজন্মের স্মৃতি মনে করতে পারা শিশুদের নিয়ে তখন কাজ করছিলেন। হঠাৎ তার কাছে একটা ফোন আসে। ফোনের ওপাশ থেকে এক মহিলা কণ্ঠ জিমকে জানায় যে, তার ছেলে রায়ান গত অনেকদিন ধরে আপন মনেই অ্যাকশন, কাট ধরনের চলচিত্রের সঙ্গে জড়িত নানা কথা বলে চলেছে আপন মনে। এমনকি কিছুদিন আগে একজন ৩০ শতকের অভিনেতার নাম বলে তাকে নিজের বন্ধু বলে জানিয়েছে সে। নিজেকেও সেই ৩০ শতকের অভিনেতা জর্জের পাশে দাড়ানো আরেকটি মানুষ বলে চিনতে পেরেছে সে। ঘটনাটি শুনেই দৌড়ে রায়ানের কাছে চলে আসে জিম আর অনুসন্ধান করে জানতে পারে যে সত্যিই ৩০ শতকের এক অখ্যাত ফিল্মের এক্সট্রা হিসেবে কাজ করতো রায়ান। যার তখনকার নাম ছিল মার্টিন! পরবর্তীতে নিজের মেয়েদের সঙ্গেও দেখা করে রায়ান রূপী মার্টিন।
রায়ান ছাড়াও এমন অনেক শিশুর সঙ্গে দেখা করেছেন জিম যাদের সবার বয়স ২ থেকে ৬ বছরের ভেতরে। আর তারা সবাইই এতটা পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে নিজেদের গতজন্মের কথা আর ঘটনাগুলো বলে যেতে পারে গড়গড় করে যে, যে কেউ মানতে বাধ্য হবে যে আসলেই শিশুটি জাতিস্মর। তবে এ ব্যাপারে বলতে গিয়ে জিম টাকার বলেন- কোয়ান্টাম ফিজিক্সের মতে আমাদের সচেতনতার বাইরেও দৃশ্যমান পৃথিবী গড়ে উঠতে পারে। আর এই ব্যাপারে পদার্থ বিজ্ঞানীরাও একমত হবেন বলে মনে করেন তিনি। নিজের পুরো গবেষণার একটা প্যাটার্ন তৈরি করেন জিম টাকার। তবে অনেকেই অবশ্য জিমের এই পুনর্জন্মের প্যাটার্নে যথেষ্ট পরিমাণ উদাহরনের অভাব বলে মনে করেন। তবে সত্যিটা যাই হোক না কেন, জিম টাকার আর তার এই অনুসন্ধান, পৃথিবীর সবার কাছেই হয়ে থাকবে ভবিষ্যতে এ পথে আরো এগিয়ে যাওয়ার পাথেয়।