বাংলা হান্ট ডেস্ক : যাদবপুরে (Jadavpur Unuversity) পড়ুয়া মৃত্যুর ঘটনায় উত্তাল রাজ্য। গতকালই গ্রেফতার হয়েছেন যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তনী সৌরভ চৌধুরী। কৃষক পরিবারে আয় সামান্য। ভাঙাচোরা টালির বাড়ি। তা সত্ত্বেও ছেলেকে প্রতিষ্ঠিত করার আশায় কলকাতায় (Kolkata) পাঠিয়েছিলেন বাবা-মা। ছেলে এমএসসি পাশও করেছেন। সেই ছেলেই কিনা ধরা পড়েছেন পুলিসের জালে। সন্তানের গ্রেফতারির হতবাক গোটা পরিবার।
পশ্চিম মেদিনীপুরের চন্দ্রকোণার খারুষা গ্রামে আদি বাড়ি সৌরভ চৌধুরীর। তাঁর বাবা নিরুপ চৌধুরী পেশায় কৃষক। মা গৃহবধূ। বাবা-মায়ের একমাত্র সন্তান তিনি। ছোট থেকেই স্বভাবে শান্ত। অত্যন্ত মেধাবী ছিলেন সৌরভ। টেনপুর হাইস্কুল থেকে উচ্চমাধ্যমিক পাশ করে। উচ্চশিক্ষার আশায় কলকাতায় চলে আসেন। গত বছর যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অঙ্কে এমএসসি পাশ করেন। ডাব্লুবিসিএস দেওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন তিনি।
ছেলের গ্রেফতারির খবর পেয়ে শনিবার কাকভোরে কলকাতার উদ্দেশে রওনা দেন সৌরভের বাবা। তিনি জানান, ‘ছেলে অন্যের উপকারে সবসময় ঝাঁপিয়ে পড়ত। স্বপ্নদীপেরও পাশে দাঁড়ায় সে। কাউকে খুন করতে পারে ও ভাবতেই পারি না। ও নির্দোষ। সত্যি যদি কোনও দোষ থাকে তবে শাস্তি হোক।’
ছেলের গ্রেফতারির খবর পাওয়ার পর থেকেই কান্নায় ভেঙে পড়েছেন সৌরভের মা। ‘এলাকার ভালো ছেলে’ সৌরভ কাউকে খুন করতে পারেন, তা মানতেই রাজি নন মা। স্বপ্নদীপ কুণ্ডু বাবা-মা তাঁর ছেলেকে ফাঁসিয়েছেন বলেই দাবি সৌরভের মা’র।
হস্টেলের আবাসিক ছিলেন না স্বপ্নদীপ। কিন্তু ‘গেস্ট’ হিসাবে থাকা যায় হস্টেলে, এ কথা স্বপ্নদীপ এবং তাঁর বাবা জানতে পারেন সৌরভের মাধ্যমে। স্বপ্নদীপের বাবা পুলিসকে জানান, গত ৩ অগস্ট যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের বাইরে একটি চায়ের দোকানে তাঁর সঙ্গে সৌরভের আলাপ।
সৌরভের কথায় ভরসা পেয়েছিলেন স্বপ্নদীপের বাবা রামপ্রসাদ কুন্ডু। সৌরভের হাত ধরে বলেছিলেন, ছোট ভাইয়ের মতো স্বপ্নদীপকে দেখতে। তিনি এ-ও জানান, সৌরভই যাদবপুরের মেন হস্টেলে মনোতোষ নামে এক ছাত্রের সঙ্গে আলাপ করিয়ে দেন স্বপ্নদীপের। মনোতোষ থাকেন ১০৪ নম্বর রুমে। স্বপ্নদীপের থাকার ব্যবস্থা হয় ৬৮ নম্বর রুমে। ওই ঘরে স্বপ্নদীপের রুমমেট ছিলেন কল্লোল ঘোষ নামে দ্বিতীয় বর্ষের এক ছাত্র।
এই সৌরভকেই ‘ঠান্ডা মাথার খুনি’ বলে শুক্রবার সংবাদমাধ্যমের সামনে মন্তব্য করেন মৃত ছাত্রের বাবা। তাঁর অভিযোগ, হস্টেলের সিনিয়রা ড্রাগের নেশা করে ছোটদের উপর শারীরিক এবং মানসিক ভাবে অত্যাচার করেন। এমনকি, তিনি সৌরভের মাধ্যমেই খবর পান যে, তাঁর ছেলে হস্টেলের ছাদ থেকে পড়ে গিয়েছেন।