মহালয়াও একই জায়গায় এসেছিল হড়পা বান, তারপরেও কেন বিসর্জন? প্রশ্নের মুখে জেলা প্রশাসন

বাংলাহান্ট ডেস্ক: বিজয়া দশমীতে মালবাজারের মাল নদীতে দুর্গা প্রতিমা বিসর্জনের সময় ঘটে গিয়েছে এক অঘটন। হঠাৎ আসা হড়পা বানে (flash flood) ভেসে গিয়েছেন বহু মানুষ। এখনও পর্যন্ত ৮ জনের মৃত্যুর খবর মিলেছে।

এবার এই ঘটনা নিয়ে সামনে এল আরও চাঞ্চল্যকর তথ্য। দশমীর দিনই প্রথম নয়, হড়পা বান এসেছিল মহালয়ার আগের দিনও। মাল নদীর অস্থায়ী বাঁধ ভেঙে দিয়েছিল। তারপরেও সেখানে আবার অস্থায়ী বাঁধ তৈরি করে প্রতিমা বিসর্জনের ব্যবস্থা করা হয়েছিল। স্থানীয় মানুষই সেই কথা জানিয়েছেন।

বুধবার, দশমীর সন্ধ্যায় সেই বাঁধও ভেঙে ভাসিয়ে দিল আরও একটি হড়পা বান। স্থানীয়রা যাকে বলছেন ‘পাগলা বান’। এই ঘটনায় ৮ জনের মৃত্যুর পাশাপাশি জখম হয়েছেন ৩০ জন। পুলিশ জানিয়েছে, এখন আর কেউ নিখোঁজ নেই। তবে প্রশাসনের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন উঠছে।

জানা গিয়েছে, বৃহস্পতিবার রাজ্যের মুখ্যসচিব হরিকৃষ্ণ দ্বিবেদী জলপাইগুড়ির জেলা প্রশাসনের থেকে এই ঘটনার রিপোর্ট চেয়ে পাঠিয়েছেন। জেলাশাসক মৌমিতা গোদারা বসুর সঙ্গে কথাও হয়েছে তাঁর। জেলার বিসর্জনের ঘাট গুলির পরিকাঠামো ও নিরাপত্তার যথাযথ ব্যবস্থা রয়েছে কিনা, তা খতিয়ে দেখার নির্দেশ দেন।

সূত্রের খবর, জেলা প্রশাসনের তরফে নবান্নকে একটি রিপোর্ট দেওয়া হয়েছে। তাতে বলা হয়েছে, ঘটনার দিন মাল এলাকায় কোন বৃষ্টি হয়নি। তবে মাল নদীতে ভুটানের দিক থেকে হড়পা বান এসেছিল। ফলে কয়েক সেকেন্ডের মধ্যে নদীর জল তিনগুণ বেড়ে যায়। আর তাতেই ঘটে এই দুর্ঘটনা।

যদিও এর পরেও কয়েকটি প্রশ্ন থেকেই যাচ্ছে। স্থানীয় সূত্রে খবর, মহালয়ার আগের দিনও মাল নদীতে একটি হড়পা বান এসেছিল। তাতে ভেসে গিয়েছিল অস্থায়ী বাঁধ। একইসঙ্গে ভেসে গিয়েছিল বাঁধ তৈরির কাজে পাথর তোলার জন্য নদীতে নামানো একটি ট্রাক। 

সেখানেই ফের একটি বাঁধ তৈরি করা নিয়ে প্রশ্ন উঠছে। এমন ঘটনার পরেও কেন দর্শনার্থীদের এবং প্রতিমাবাহী লরি নদীর মাঝের ওই চরে যাওয়ার অনুমতি দেওয়া হল? প্রশাসন আরও সচেতন হলো না কেন? এছাড়াও, মালবাজারে নবমীর দিন বৃষ্টি হয়েছিল৷ পাহাড়ে নিয়মিত বৃষ্টির পূর্বাভাস থাকা সত্ত্বেও কোন বাড়তি সর্তকতা নেওয়া হয়নি কেন?

তৃতীয়ত, মাল নদীতে ঘাট তৈরির দায়িত্বে ছিল মাল পুরসভাও। নবমীর দিন বৃষ্টিতে নদীতে জল বেড়ে যায়৷ দিনভর ঘাট তৈরীর কাজ করেন পুরকর্মীরা। তখনো কেন সর্তকতা মূলক পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি? জেলাশাসক মৌমিতা গোদারা বসু এই নিয়ে কোনো মন্তব্য করতে চাননি। 

মালবাজারের চেয়ারম্যান স্বপন সাহা বলেন, “পাহাড়ি মাল নদীকে নিয়ন্ত্রণ করার কোনও রকম চেষ্টা আমরা করিনি। দীর্ঘদিনের প্রথা মেনে যেভাবে ঘাট তৈরি হয় আমরা সেটাই করেছিলাম।” বিরোধীরা প্রশাসনের দিকে যেভাবে আঙুল তুলছে,  তা নিয়ে তিনি বলেন, “এই ঘটনা নিয়ে রাজনীতি করা অত্যন্ত বেদনাদায়ক।”

জেলা পুলিশ সুপার দেবর্ষি দত্ত বলেন, “নদীতে কিসের বাঁধ কোথায় দেওয়া ছিল সে বিষয়ে আমি জানিনা। বিগত কুড়ি বছরের রেকর্ড এমন দুর্ঘটনা ঘটেনি। ঘটনাস্থলে পর্যাপ্ত সিভিল ডিফেন্স এবং পুলিশ উপস্থিত ছিলেন। হঠাৎ নদীর জল বেড়ে গিয়ে ৩০ জন ভেসে যান। মৃত্যু হয়েছে ৮ জনের। তবে এখন আর কেউ নিখোঁজ নেই। যদিও এনডিআরএফ তল্লাসি চালাচ্ছে।”

Subhraroop

সম্পর্কিত খবর