ড্রিল মেশিন চালিয়ে ফাঁক করতে হয়েছে দাঁত! ‘সত‍্যজিৎ’ হয়ে ওঠার জন‍্য রক্তও ঝরিয়েছেন জিতু!

বাংলাহান্ট ডেস্ক: মাস কয়েক আগে হঠাৎই সোশ‍্যাল মিডিয়ায় শোরগোল। ফের যেন জীবন্ত হয়ে উঠেছেন কিংবদন্তি পরিচালক সত‍্যজিৎ রায় (Satyajit Ray)। সেই একই রকম তীক্ষ্ণ দৃষ্টি, কপালের উপরে একটা হাত রেখে বসার ভঙ্গিমা কিংবা দু আঙুলে সিগারেট ধরার কায়দা। অভিনেতা জিতু কামালের (Jeetu Kamal) মধ‍্যে দিয়েই নতুন  করে বেঁচে উঠেছিলেন পর্দায় ‘পথের পাঁচালি’র স্রষ্টা।

তখন থেকেই পরিচালক অনীক দত্তর ‘অপরাজিত’ নিয়ে আলাদা করে কৌতূহল তৈরি হতে থাকে দর্শকদের‌। ছবিতে সত‍্যজিতের চরিত্রে অভিনয় করবেন জিতু। এমন একজন মানুষের চরিত্রে অভিনয় কী আর চাট্টিখানি কথা? যে ছবিগুলি ভাইরাল হয়েছিল সেখানে জিতুকে অবিকল সত‍্যজিতের মতোই দেখতে লাগছিল। কিন্তু এর পেছনে যে কী অমানুষিক খাটনি গিয়েছে তার সাক্ষী জিতুর স্ত্রী নবনীতা দাস।

IMG 20220422 173507

সত‍্যজিতের মতো দেখানোর জন‍্য প্রস্থেটিক মেকআপের সাহায‍্য নিতে হয়েছিল জিতুকে। কিন্তু সেখানে তাঁর নিজের বিশেষ কিছু করার ছিল না। তবে এখানেই তো রূপ বদলের পদ্ধতিটা শেষ হয়ে যায় না। সত‍্যজিৎ হয়ে ওঠার জন‍্য পরিচালকের বহু সাক্ষাৎকার খুঁটিয়ে লক্ষ‍্য করতেন জিতু।

তখনি তাঁর নজরে আসে, পরিচালকের দাঁতের পাটির সঙ্গে তাঁর দাঁতের পাটির অনেক ফারাক। সত‍্যজিৎ রায়ের দাঁতগুলি ছিল বেশ ফাঁকা ফাঁকা। তখনি সিদ্ধান্ত নিয়ে নেন অভিনেতা। দাঁতের চিকিৎসকের কাছে গিয়ে ড্রিল মেশিন দিয়ে ঘষে ঘষে দাঁতের মাঝে ফাঁক বাড়িয়েছেন জিতু!

FB IMG 1650628485817
সোশ‍্যাল মিডিয়ায় সেই ঘটনার কথা শেয়ার করে নবনীতা লিখেছেন, ‘বিশেষ মানুষের আদল নিজের মধ্যে রপ্ত করতে নিজের দাঁত গুলোকেও ঘষে ঘষে, তার উপর ক্যাপ পরে,সেই বিখ্যাত মানুষের দাঁতগুলোর সমতুল্য করার চেষ্টাতেও পিছপা হওনি তুমি।

আমি রক্ত সহ্য করতে পারি না, তাই ভিডিও কলের এপাশে আমাকে রাখলে, আর নিজে একা গেলে জেদে। যে যন্ত্রনা, যে ব্যাথা সহ্য করতে দেখেছি, তা অচিরেই থেকে যাবে?? দাঁতের ব্যাথা, কি ব্যাথা! সেটা যাদের হয় বা হয়েছে তারা জানে।

FB IMG 1650628536410
বহু শিল্পী, শিল্পের স্বার্থে বহু আত্মত্যাগ করে এসেছেন, আমার মতে সেগুলোও সামনে আসা দরকার, খুবই দরকার। তাই, এই লুকোনো কথাটা তোমায় না জানিয়েই পোস্ট করলাম, তোমার অনিচ্ছা থাকা সত্বেও…’

FB IMG 1650628606103
এর আগেও নবনীতা জানিয়েছিলেন জিতুর সত‍্যজিৎ রায় হয়ে ওঠার দিনগুলোর কথা। ভোর পাঁচটায় অ্যালার্ম বাজার আগে উঠে বসে থাকতেন নবনীতা। স্বামীর সঙ্গে সঙ্গে তিনিও উঠে পড়তেন সমস্ত জিনিস হাতের কাছে এগিয়ে দেওয়ার জন‍্য। ফুলহাতা জামা, দু তিন কাপ চা থেকে শুরু করে বাড়িতে ওয়ার্কশপের জন‍্য মেকআপটাও করে দিতেন নবনীতাই।

চা দিতে দেরি হলে বা রান্নার মাঝে শব্দ হলে চেঁচিয়ে উঠতেন জিতু। আসলে সেই সময় যেন একটা ঘোরের মধ‍্যে থাকতেন তিনি। কাজটা ঠিকঠাক না উতরাতে পারলে শান্তি পাচ্ছিলেন না। বুঝতেন নবনীতা। তিনিও একজন অভিনেত্রী। তাই ওই দিনগুলোর বকাঝকা, তর্ক বিতর্ক মেনে নিয়েই তিনি বার্তা দেন, ‘চলো, আছি, আরো রাত জাগার জন‍্য।’


Niranjana Nag

সম্পর্কিত খবর