‘সুন্দরভাবে দুর্নীতির ব্যবস্থা করেছেন’! নতুন নিয়োগ বিধি নিয়ে মুখ খুললেন চাকরিহারারা

বাংলা হান্ট ডেস্কঃ নতুন করে শিক্ষক নিয়োগ প্রক্রিয়া হবে (SSC Recruitment)। ইতিমধ্যেই বিজ্ঞপ্তি জারি করেছে স্কুল সার্ভিস কমিশন (School Service Commission)। সামনে এসেছে পরীক্ষার নতুন বিধি। সেখানে দেখা গিয়েছে, নম্বর বিভাজনের ক্ষেত্রে বেশ কিছু বদল এসেছে। শিক্ষকতার অভিজ্ঞতার ওপর সর্বাধিক ১০ নম্বর ও ‘লেকচার ডেমোস্ট্রেশন’এর জন্য সর্বাধিক ১০ নম্বর দেওয়ার বিষয়টি নতুন যুক্ত করা হয়েছে। সেই সঙ্গেই লিখিত পরীক্ষার নম্বর বৃদ্ধি সহ আরও বেশ কিছু পরিবর্তন আনা হয়েছে। এবার এই নিয়ে মুখ খুললেন চাকরিহারা শিক্ষকরা।

নতুন বিধিতে কি চাকরিহারাদের সুবিধা? কী বলছেন তাঁরা (SSC Recruitment)

‘যোগ্য শিক্ষক শিক্ষিকা অধিকার মঞ্চে’র অন্যতম মুখ তথা প্রতিবাদী চাকরিহারা শিক্ষক (School Teacher) চিন্ময় মণ্ডল ইতিমধ্যেই বিষয়টি নিয়ে মুখ খুলেছেন। তিনি বলেন, বিজ্ঞপ্তি জারি হয়েছে এটা ভালো খবর। এতদিন ধরে যারা চাকরির পরীক্ষার জন্য অপেক্ষা করছিলেন, তাঁদের জন্য এটি সুখবর। তবে আমরা, যোগ্য শিক্ষক, শিক্ষিকারা কেন ফের একই পরীক্ষা দেব? প্রশ্ন তুলেছেন তিনি।

চিন্ময় স্পষ্ট জানিয়েছেন, এতদিন ধরে যে সকল যোগ্য শিক্ষক, শিক্ষিকা চাকরি করেছেন, তাঁদের জন্য এক নিয়ম কার্যকর হতে পারে না। ‘আমাদের তো কোনও দোষ নেই’, বলেন তিনি।

গত মঙ্গলবার নবান্নের সাংবাদিক সম্মেলন থেকে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় (Mamata Banerjee) জানিয়েছিলেন, সুপ্রিম নির্দেশ মেনে ৩১ মে-র মধ্যে নোটিফিকেশন জারি করা হবে। সেই মতো শুক্রবারই বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ্যে এসেছে। সুপ্রিম নির্দেশ মেনেই নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হয়েছে বলে দাবি রাজ্যের।

আরও পড়ুনঃ ‘অনুমাধব খিস্তি, পুলিশ বড় মিষ্টি’! বোলপুরের IC-কে ‘হুমকি’ বিতর্কের আবহেই কবিতা রুদ্রনীলের

এই বিষয়ে চিন্ময় (Chinmoy Mondal) বলেন, ‘হাইকোর্ট আগে ওএমআর শিট প্রকাশের রায় দিয়েছিল। সেটা হয়নি। যোগ্য-অযোগ্যর তালিকা জমা করতে বলেছিল, সেটাও হয়নি। কোনও জবাব দেওয়া হয়নি। ডিএ নিয়ে রায় মানা হয়নি। উচ্চ আদালতে আবেদন জানানো হচ্ছে। আর এখন বলা হচ্ছে, সুপ্রিম রায় মানতে বিজ্ঞপ্তি জারি করা হচ্ছে! ভোটের আগে একটা পরীক্ষা নিলে ভালো হয় দেখছেন। সবাইকে নিয়ে নিতে পারলে ভালো হয়, দুর্নীতিকে চাপা দিয়ে দেওয়া যাবে। আদালতের রায় মানুন। তবে যোগ্যদের ফের বহাল করতে হবে’।

শিক্ষকতার পূর্ব অভিজ্ঞতার জন্য ১০ নম্বর বরাদ্দ করা নিয়েও মুখ খুলেছেন এই প্রতিবাদী চাকরিহারা শিক্ষক। তিনি বলেন, ’৬০ নম্বরের কাট অফ ক্লিয়ার করতে পারলেই পরবর্তী ধাপে যাওয়া যাবে। আমরা বিগত ১০ বছর চাকরির পরীক্ষার প্রস্তুতির বাইরে। নতুন চাকরিপ্রার্থীদের সঙ্গে প্রতিযোগিতা করা যায়? তাছাড়া আমাদের যে অধিকার, সেটা কেন ছেড়ে দেব? পরীক্ষা এর সুরাহা হতে পারে না। শূন্যপদে কেবলমাত্র নতুনদের নিয়োগ করা দরকার’।

আন্দোলনকারী এক শিক্ষকের আবার দাবি, নতুন নিয়োগ বিধির মাধ্যমে কার্যত ‘আরও সুন্দরভাবে’ দুর্নীতির ব্যবস্থা করা হয়েছে। তাঁর কথায়, ‘নিয়োগ বিধি যে জারি হয়েছে, সেখানে শিক্ষকতার পূর্ব অভিজ্ঞতার জন্য ১০ নম্বর, ইন্টারভিউয়ের জন্য ১০ নম্বর, লেকচার ডেমোস্ট্রেশনের জন্য ১০ নম্বর আছে। আরও সুন্দরভাবে যাতে দুর্নীতি করা যায় সেটারই ব্যবস্থা করেছেন? দুর্নীতির দায় ঝাড়তেই এই পরীক্ষা নেওয়া হচ্ছে’। আরেক চাকরিহারার আবার বক্তব্য, ১০ বছর আগে সিলেবাস পড়ে চাকরি দিয়েছিলাম। এখন হাতে মাত্র মাস দুয়েক সময়। স্কুল করে এই সময়ের মধ্যে প্রস্তুতি নেওয়া সম্ভব? নতুনদের থেকে পিছিয়ে যাব না? প্রশ্ন তুলেছেন তিনি।

নিয়ম বদল নিয়ে মুখ খুলেছেন আইনজীবী ফিরদৌস শামিমও (Firdous Samim)। শিক্ষাগত যোগ্যতার জন্য বরাদ্দ নম্বর কমানো নিয়ে তিনি বলেন, আগে ৩৫ নম্বর ছিল, এখন ১০ করা হয়েছে। অর্থাৎ যাদের শিক্ষাগত যোগ্যতা কম, তাঁদের নেওয়ার রাস্তা চওড়া করা হল। আগে সাদা খাতা জমা করা হতো, এখন প্রশ্ন বিক্রি হবে বলে দাবি করেন তিনি। এরপর যে সকল প্রার্থীরা শিক্ষাগত যোগ্যতায় দুর্বল, তাঁদের লেকচার ডেমোস্ট্রেশন, ইন্টারভিউয়ে অধিক নম্বর দিয়ে চাকরি দেওয়া হবে। চুরির রাস্তা যাতে আরও চওড়া হয় রাজ্য সেটার ব্যবস্থা করছে বলে দাবি করেন তিনি।

উল্লেখ্য, ২০১৬ সালের এসএসসির (SSC Recruitment) সম্পূর্ণ প্যানেল বাতিলের পাশাপাশি নতুন পরীক্ষার নির্দেশ দিয়েছিল সুপ্রিম কোর্ট। সেই অনুযায়ী ফের নতুন করে বিজ্ঞপ্তি দেওয়া হয়েছে। তবে নতুন নিয়োগ বিধিতে দেখা গিয়েছে বেশ কিছু পরিবর্তন। এবার সেগুলি নিয়েই মুখ খুললেন চাকরিহারা শিক্ষকদের একাংশ।