বাংলাহান্ট ডেস্কঃ ‘ল্যাকমি’ (lakme), বর্তমান সময়ে সৌন্দর্যের জগতের অন্যতম খ্যাতনামা প্রোডাক্ট হিসেবে বেশ সুখ্যাতি রয়েছে ল্যাকমির। সাধারণ মানুষ থেকে শুরু করে সেলেব তারকা, এই কোম্পানির প্রোডাক্ট প্রায় সকলেই ব্যবহার করে থাকেন। তবে এই কোম্পানি শুরুর পেছনে পণ্ডিত জওহরলাল নেহেরু, টাটা এবং মা লক্ষ্মীর এক বড় অবদান রয়েছে।
জেনে নিন সেই কাহিনী-
আজ থেকে ৭০ বছর আগে ১৯৫২ সালে লঞ্চ হয়েছিল ল্যাকমি। যার কৃতিত্ব যায় জেআরডি টাটার উপর। আজকের দিনের মতই আগেকার দিনের মহিলারাও নিজেদের সাজাতে ভালোবাসতেন। মধ্যবিত্ত মহিলারা নিজেদের ঘরের জিনিস দিয়ে নিজেকে সাজিয়ে তুললেও, যারা কিছুটা ধনী ছিলেন তাঁরা বিদেশ থেকেও সাজার জিনিস কিনতেন। যার ফলে ভারতীয় মুদ্রা বিদেশেও চলে যেত।
এই বিষয়কে মাথায় রেখে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী জওহরলাল নেহেরু দেশেই নতুন শিল্প প্রতিষ্ঠার জন্য কাজ করছিলেন। তখন তিনি একটি ভারতীয় সৌন্দর্য ব্র্যান্ড শুরু করার ধারণা পান। সেইসময় ভারতের যেহেতু কোন নিজস্ব ব্র্যান্ড ছিল না, তাই একটা আশঙ্কা ছিল, সেটি মানুষ কিভাবে গ্রহণ করবে এবং প্রতিযোগিতার বাজারে কিভাবে সেটি দাঁড়াতে পারবে।
প্রধানমন্ত্রী জওহরলাল নেহেরু তখন তাঁর এই ধারণার কথা JRD টাটার সঙ্গে শেয়ার করলেন। তাঁর ভাবনায় অভিভূত হয়ে এগিয়ে আসেন JRD টাটা। শুরু হয় ল্যাকমি। বর্তমান সময়ে যে ল্যাকমির কথা আমরা বলছি, তার পূর্বের নাম ছিল ‘লক্ষ্মী’।
ইন্টারনেটে যদি আপনি সার্চ করে দেখেন, তাহলে দেখতে পাবেন ১৯৫২ সাল এবং তাঁর পরবর্তীতেও বেশ কয়েকবছর লক্ষ্মী নামেই দেখা গিয়েছিল। সেইসময় রেখা, হেমা মালিনী, জয়া প্রদা সহ ৫০ এবং ৬০-র দশকের বেশ কয়েকজন বলিউড অভিনেত্রীকে বিজ্ঞাপন দিতে দেখা গিয়েছিল। এই প্রোডাক্ট বাজারে চালু হওয়ার পর থেকে ধীরে ধীরে ভারতের মূল্য বিদেশে যাওয়া বন্ধ হয়ে যায়।
বিভিন্ন চলচিত্রে এই প্রোডাক্ট ব্যবহার হতে থাকার কারণে, এই কোম্পানির প্রতি মানুষের বিশ্বাস ভরসা বাড়তে থাকে। সহজলভ্য দামের মধ্যে থাকায় সাধারণ মহিলারাও এই বিউটি প্রোডাক্ট ব্যবহার করতে শুরু করেন। ৫ বছরের মধ্যে ‘লক্ষ্মী’ খ্যাতির শীর্ষে পৌঁছে গেছিল।
কিছু সুযোগ হাতে পেয়ে ১৯৬৬ সালের মধ্যে ‘লক্ষ্মী’ বিক্রি করার সিদ্ধান্ত নেন JRD টাটা। বেশ কিছু নামী কোম্পানি নিজের অ্যাকাউন্টে এই ব্র্যান্ডকে রাখতে চেয়েছিলেন। তবে JRD টাটার বিশ্বাস ছিল হিন্দুস্তান লিভার এই এই প্রোডাক্টকে সঠিকভাবে এগিয়ে নিয়ে যেতে সক্ষম হবে। এরপর ১৯৬৬ সালে হিন্দুস্তান লিভার সেই প্রোডাক্টের নাম বদলে রাখল ‘ল্যাকমি’। ফরাসি ভাষায় যার অর্থ ‘লক্ষ্মী’। নাম বদলে গেলেও, মর্মার্থ থাকল একই।
এরপর ধীরে ধীরে সুখ্যাতি ছড়াতে থাকল এই বিউটি প্রোডাক্ট। বর্তমান সময়ে ভারতে প্রায় ১১০ টি ল্যাকমির পার্লার রয়েছে এবং গোটা বিশ্বে প্রায় ১০০ টি পার্লার রয়েছে। প্রায় ১৯০০ কোটি টাকার ব্যবসা দিয়ে সফল ভাবে বাজারে দাপিয়ে বেড়াচ্ছে এই কোম্পানি।