বাংলা হান্ট নিউজ ডেস্ক: ইহলোকের মায়া কাটিয়ে পরলোক যাত্রা করলেন ফ্রান্সের প্রাক্তন তারকা ফরোয়ার্ড জাস্তু ফন্টেইন (Justo Fontaine)। মৃত্যুকালে তার বয়স হয়েছিল ৮৯ বছর। ২০০৪ সালে ফুটবল সম্রাট পেলে (Pele) নিজের জীবনে দেখা সেরা ১২৫ জন ফুটবলারের যে তালিকা প্রস্তুত করেছিলেন সেই তালিকার অংশ ছিলেন এই ফ্রেঞ্চ ফুটবলার। ফুটবল বিশ্বকাপের মঞ্চে তার নামের পাশে এমন কীর্তি রয়েছে যা গত ৬৫ বছর ধরে অক্ষত। ১৯৫৩ থেকে ১৯৬০ পর্যন্ত ৮ বছর তিনি ফ্রান্সের জাতীয় দলের জার্সি গায়ে চাপিয়ে মাঠে দাপিয়ে খেলেছেন।
যে কীর্তির জন্য ফন্টেইন চিরকাল ফুটবলপ্রেমীদের কাছে অমর থেকে যাবেন সেই কীর্তি তিনি গড়েছিলেন ১৯৫৮ বিশ্বকাপে। সুইডেনের মাটিতে আয়োজিত সেই বিশ্বকাপে মাত্র ৬ টি ম্যাচ খেলে ১৩ টি গোল করেছিলেন তিনি। লিওনেল মেসির যে গোল সংখ্যা ছুটে লেগেছে পাঁচটি বিশ্বকাপ, মাত্র একটু বিশ্বকাপ খেলেই সেই গোলের সংখ্যা ছুঁয়ে ফেলেছিলেন এই ফ্রেঞ্চ স্ট্রাইকার।
সেই বিশ্বকাপে ফ্রান্সের প্রথম ম্যাচে প্যারাগুয়ের বিরুদ্ধে তিনি হ্যাটট্রিক করেন। দ্বিতীয় ম্যাচে যুগোশ্লাভিয়ার বিরুদ্ধে দুটি এবং তৃতীয় ম্যাচে স্কটল্যান্ড এর বিরুদ্ধে একটি গোল করেছিলেন ফন্টেইন। এরপর সেই বিশ্বকাপের কোয়ার্টার ফাইনালে উত্তর আয়ারল্যান্ডের বিরুদ্ধে জোড়া গোল করে দলকে ৪-০ ফলে জিততে সাহায্য করেন তিনি।
এরপর ফ্রান্স মুখোমুখি হয় সেইবারের বিশ্বকাপ চ্যাম্পিয়ন ব্রাজিলের। সেই ম্যাচেও প্রথমার্ধে গোল করে ফ্রান্সকে সমতায় ফিরিয়েছিলেন ফন্টেইন। কিন্তু ব্রাজিল তথা ফুটবল বিশ্বের সর্বকালের অন্যতম সেরা ফুটবলার, ১৭ বছর বয়সী পেলে ওই ম্যাচে জ্বলে ওঠেন এবং দ্বিতীয়ার্ধে হ্যাটট্রিক করে ফ্রান্সের বিরুদ্ধে ব্রাজিলকে জেতান ৫-২ ফলে। এরপর তৃতীয় স্থান নির্ধারণকারি ম্যাচে জার্মানির বিরুদ্ধে চার গোল করে ফ্রান্সকে ৬-৩ ফলে ম্যাচ জিততে সাহায্য করেন ফন্টেইন। তার ওই এক বিশ্বকাপে করা ১৩ গোলের রেকর্ড আজও অক্ষত রয়েছে।
তার মৃত্যুর খবরটি সবার সামনে আনে পিএসজি ক্লাব যাদের তিনি কোচিং করিয়েছিলেন ১৯৭৩ থেকে ১৯৭৬ সাল অবধি। জন্মসূত্রে মরক্কোর এই ফুটবলার ১৯৩৩ সালে জন্মগ্রহণ করেন এবং ফুটবল খেলা শুরু করেছিলেন ইউএসএম কাসাব্লাঙ্কার হয়ে। এরপরে ফ্রেঞ্চ ক্লাব নিসের হয়ে খেলে সেখান থেকে যোগ দেন রেইমসে। ওই ক্লাবের হয়ে তিনবার ফরাসি লিগ যেতেন ওই তারকা ফুটবলার। তাদের হয়ে ইউরোপিয়ান কাপ ফাইনালও খেলেছেন তিনি, যে প্রতিযোগিতা বর্তমানে ইউয়েফা চ্যাম্পিয়ন্স লিগ বলে পরিচিত।
ফাইনালে রিয়াল মাদ্রিদের কাছে হারতে হলেও প্রতিযোগিতার ১৯৫৯ সালের সংস্করণে ১০ গোল করে নিজের জাত চিনিয়েছিলেন তিনি। আজও তাকে ফুটবল বিশেষজ্ঞরা বিশ্বের সর্বকালের অন্যতম সেরা গোল স্কোরারদের মধ্যে একজন হিসেবে গণ্য করেন। ফ্রান্সের জার্সিতে ২১ টি ম্যাচ খেলে ৩০ টি গোল করেছিলেন এই ফুটবলার। এছাড়া ক্লাব ফুটবলে ২৮৩টি ম্যাচ খেলে ২৫৯ গোল করার রেকর্ড রয়েছে তার নামের পাশে।