বাংলা হান্ট ডেস্কঃ নিয়োগ দুর্নীতি ইস্যুতে উত্তপ্ত বঙ্গ। শিক্ষক কেলেঙ্কারি মামলায় জেলবন্দি রাজ্যের প্রাক্তন শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়, প্রাথমিক শিক্ষা পর্ষদের অপসারিত সভাপতি মানিক ভট্টাচার্য সহ আরও অনেকে। শুক্রবার প্রাথমিক নিয়োগ দুর্নীতির (Primary Recruitment Scam) মামলায় নজিরবিহীন নির্দেশ দিয়েছেন কলকাতা হাইকোর্টের (Calcutta High Court) বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায় (Abhijit Ganguly)। আদালতের নির্দেশে ২০১৬ সালের প্যানেল থেকে এক ধাক্কায় ৩৬ হাজার স্কুল শিক্ষকের চাকরি বাতিল হয়েছে। আর সেই মামলার শুনানিতেই মানিক-পার্থকে নিয়ে বড় পর্যবেক্ষণ বিচারপতির।
ঠিক কী বললেন বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায়? এদিন এজলাসে বিচারপতি বলেন, ‘‘২০১৬ সালের প্রাথমিক শিক্ষক নিয়োগ প্রক্রিয়ায় পর্ষদের প্রাক্তন সভাপতি-সহ আধিকারিকদের কাজ অনেকটা স্থানীয় ক্লাবের মতো। আর ইডির তদন্তে উঠে এসেছে, যাদের টাকা ছিল প্রাথমিক শিক্ষকের চাকরি তাদের বিক্রি করে দেওয়া হয়েছে।’’ কার্যত পার্থ-মানিক (Partha Chatterjee-Manik Bhattacharya) দালালদের মাধ্যমে প্রাথমিক শিক্ষকের চাকরি বিক্রি করেছেন বলে মন্তব্য করেন বিচারপতি।
২০১৬ সালের প্রাথমিক শিক্ষক নিয়োগে যে পরিমান দুর্নীতি হয়েছে, তা বাংলার ইতিহাসে নজিরবিহীন। অপ্রশিক্ষিত শিক্ষকদের নিয়োগে যত্রতত্র অনিয়মের ছাপ রয়েছে পাশাপাশি ইন্টারভিউ প্রক্রিয়ায় অযোগ্য চাকরিপ্রার্থীদের নম্বর বাড়িয়ে তাদের চাকরি দেওয়া হয়েছে বলেও মন্তব্য করেন বিচারপতি। বিষয়টি পরিষ্কার করে বোঝাতে তিনি লেখেন, ‘‘মাধ্যমিক এবং উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষায় কম নম্বর পেয়েছেন এমন চাকরিপ্রার্থীদেরও সংশ্লিষ্ট বিভাগে ১০ নম্বরের মধ্যে সাড়ে ৯ দিয়ে দেওয়া হয়েছে। পাশাপাশি কোনও অ্যাপটিটিউড টেস্টও নেওয়া হয়নি।’’
আর দুর্নীতির গোটা এই ঘটনার জন্য সব থেকে বেশি দায় মানিক ভট্টাচার্যের বলে পর্যবেক্ষণ আদালতের। গতকাল রায় দিয়ে তার শেষাংশে বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায় লিখেছেন, ‘‘এই পুরো অস্বচ্ছতা এবং দুর্নীতি হয়েছে পর্ষদের প্রাক্তন সভাপতির জন্য। তিনি সব নিয়ম জানতেন। তা সত্ত্বেও সেই সব নিয়মই ভেঙেছেন। তাই রাজ্য সরকার যদি মনে করে, নতুন নিয়োগের পুরো ব্যয়ভার প্রাক্তন সভাপতির কাছ থেকে নিতে পারে।’’
অন্যদিকে ৩৬ হাজার চাকরি বাতিলের বিচারপতির এই নির্দেশকে চ্যালেঞ্জ করে আইনি পথে হাঁটার কথা ভাবছে প্রাথমিক শিক্ষা পর্ষদ (WBBPE)। পর্ষদ সভাপতি গৌতম পাল (Chairman Gautam Paul) বলেন, যথাসময়ে আইনি পদক্ষেপ করা হবে। অপ্রশিক্ষিতর তকমা দিয়ে যে ৩৬ হাজারের চাকরি বাতিল হল, তারা সকলেই যোগ্য বলে পাল্টা যুক্তিও দিয়েছেন তিনি। সভাপতির দাবি, ওডিএল মোডে সবাইকেই প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে।