বাংলা হান্ট ডেস্ক : হতাশ মুখে দাঁড়িয়ে ছিলেন। খুব সাধারণ একটা পোশাক ছিল পরনে। এককোণে হাত জোড় করে দাঁড়িয়ে ছিলেন বীরভূম থেকে আসা এক মহিলা। তাঁর পাশে হাতজোড় করে দাঁড়িয়েছিলেন তাঁর মা। এজলাসে তখন উপস্থিত রয়েছেন কলকাতা হাই কোর্টের বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়। একটি মামলার শুনানি চলছিল। দু’পক্ষের কথা তখন মনযোগ দিয়ে শুনছিলেন বিচারপতি। হঠাৎই তাঁর দৃষ্টি পরে ওই মহিলার দিকে। মহিলাকে দেখে বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায় (Justice Abhijit Ganguly) জানতে চান, এ ভাবে দাঁড়িয়ে রয়েছেন কেন?
আদালত সূত্রে জানা যাচ্ছে, মহিলা জানান, তাঁর নাম মিতালি দাস। তাঁর বিরুদ্ধে তাঁর স্বামী মোট ১৮টি মামলা দায়ের করেছেন। এর আগে বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায়ের নির্দেশেই বীরভূম জেলা মুখ্য বিচারকের কাছে গিয়েছিলেন ওই মহিলা। এই মুহুর্তে তাঁর দাবি, তিনি ১০ হাজার টাকা করে পাচ্ছেন না। বদলে ৮ হাজার টাকা করে দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছে নিম্ন আদালত। এর ফলে তাঁর প্রতিবন্ধী শিশুর চিকিৎসার খরচ চালাতে অসুবিধা প্রচণ্ড হচ্ছে বলেও আদালতে জানান ওই মহিলা। তিনি হাই কোর্টে আসায় নিম্ন আদালতের বিচারক খুশি হননি বলেও তিনি দাবি করেন।
বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায় এবং ওই মহিলার কথোপকথন যথা সম্ভব তুলে দেওয়া হল।
বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায়: কী বিষয় বলুন তো? ঠিক মনে পড়ছে না।
মহিলা: আমার নামে ১৮টি মামলা রয়েছে। আমার স্বামী ওই মামলাগুলি করেছেন। আপনি বীরভূম জেলা মুখ্য বিচারকের কাছে যেতে বলেছিলেন। তাতে অনেকটা উপকার পেয়েছি।
বিচারপতি: ও আচ্ছা! কিন্তু এখন আবার কেন এলেন? আপনার সমস্যা তো মিটে গেছে গিয়েছে।
মহিলা: বীরভূমের জেলা বিচারক ১০ হাজার টাকা থেকে ২ হাজার কমিয়ে দিয়েছে। বাচ্চার চিকিৎসায় খুব সমস্যা হচ্ছে।
বিচারপতি : মানে? ১০ হাজারের বদলে ৮ হাজার টাকা দেওয়া হচ্ছে? বিচারক নির্দেশে কোথাও লিখেছেন। আমাকে সব নির্দেশের প্রতিলিপি দিন তো।
মহিলা : ২০১৯ সালে হাই কোর্ট আমার স্বামীকে ১০ হাজার টাকা করে দেওয়ার নির্দেশ দেয়। কিন্তু বিচারক সুজয় সেনগুপ্ত তা কমিয়ে ৮ হাজার করে দিয়েছেন। কেন করেছেন বুঝতে পারছি না। আমার স্বামী বিবাহবিচ্ছেদের মামলা করেছেন। প্রতিবন্ধী বাচ্চা নিয়ে কোথায় যাব? তার উপর এতগুলি মামলা করেছে? আর পারছি না আমি।
বিচারপতি : কেন টাকা কমানো হয়েছে এ নিয়ে কিছু জানিয়েছেন বিচারক?
মিতালি: না! তবে হাই কোর্টে আসায় বিচারক খুশি নন।
বিচারপতি : আপনি কি খুব ঝগড়া করেছেন? ঠিক আছে। আপনি এখন আসুন। আমি আপনার কাগজ খতিয়ে দেখব। আপনি আইনি সাহায্য পাচ্ছেন তো?
মহিলা: আপনার কথা মতো লিগ্যাল সার্ভিসেস অথরিটির কাছ থেকে সাহায্য পাচ্ছি। আজ আবার সেখানে যাব।
বিচারপতি : ঠিক আছে, সাবধানে আসুন।
এরপরই মহিলা এবং তাঁর মা হাত জোড় করে কাঁদতে কাঁদতে শুরু করেন। তাঁরা বলেন, ‘আপনার মতো ভগবান পাশে ছিল বলে আমি রেহাই পেলাম। আপনার পা ছুঁয়ে প্রণাম করতে পারলে ধন্য মনে করতাম।’ বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায় এসব শুনে পাল্টা বলেন, ‘এ সব কিছু না। ও ভাবে বলবেন না। সব ঠিক হয়ে যাবে।’