বাংলা হান্ট ডেস্কঃ রাজ্যে প্রাথমিকের নিয়োগ সংক্রান্ত সমস্ত মামলা (Primary Recruitment Case) বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়ের (Justice Abhijit Ganguly) এজলাস থেকে সরিয়ে দেওয়া হয়েছে। অর্থাৎ প্রাথমিকের আর কোনও মামলা এখন থেকে শুনতে পারবেন না বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায়। গত মঙ্গলবার প্রাথমিকের মামলা গুলি বিচারপতি গাঙ্গুলির এজলাস থেকে সরিয়ে বিচারপতি রাজাশেখর মান্থার বেঞ্চে দেন হাইকোর্টের প্রধান বিচারপতি টি এস শিবজ্ঞানম। আর শুক্রবার প্রথম এই গোটা বিষয়টি নিয়ে মুখ খুললেন বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায়।
মঙ্গলবার তার এজলাস থেকে প্রাথমিকের মামলা সরিয়ে দেওয়ার পর মাঝে দুদিন কেটে গিয়েছে। বুধ ও বৃহস্পতিবার অবশ্য নিজের এজলাসে বসেননি বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায়। শুক্রবার এজলাসে বসেই এই প্রসঙ্গে কথা বললেন বিচারপতি। প্রাথমিক শিক্ষা সংক্রান্ত যাবতীয় মামলা তার এজলাস থেকে সরে যাওয়ায় অনেকে কালীঘাটে গিয়ে পুজো দিয়ে এসেছেন। শুক্রবার নিজের এজলাসে বসে এমনই ইঙ্গিতপূর্ণ করলেন বিচারপতি।
এদিন এজলাসে বসেই বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায় বলেন, ‘মনে হয় জেলা স্কুল পরিদর্শক ও অন্যান্যরা কালীঘাটে গিয়ে পুজো দিয়েছে। গত বছর যখন শ্রম সংক্রান্ত মামলার শুনানি করতাম তখন আমাকে সরানোর জন্য অনেকে দক্ষিণেশ্বর মন্দিরে গিয়ে পুজো দিয়েছিলেন বলে শুনেছি। বলেছিলেন, মা একে সরাও।’
প্রসঙ্গত, সম্প্রতি মেডিক্যাল কলেজে ভর্তি সংক্রান্ত দুর্নীতির মামলা ওঠে বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায়ের এজলাসে। রাজ্য পুলিশের ওপর ‘ভরসা’ না থাকায় এই মামলায় সিবিআই তদন্তের নির্দেশ দেন বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়। এরপর সেই নির্দেশের বিরোধিতা করে বিচারপতি সৌমেন সেনের (Justice Soumen Sen) ডিভিশন বেঞ্চে যায় রাজ্য। বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায়ের নির্দেশের ওপর মৌখিক স্থগিতাদেশ জারি করে ডিভিশন বেঞ্চ। তবে লিখিত স্থগিতাদেশের কপি দেখাতে পারেননি রাজ্যের আইনজীবী। এর পরই সিবিআইকে সমস্ত নথি নিয়ে তত্ক্ষণাত্ এফআইআর করার নির্দেশ দেন বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায়। শুরু হয় সংঘাত।
পরদিন বিচারপতি সৌমেন সেনের বিরুদ্ধে একের পর এক বিস্ফোরক অভিযোগ তোলেন বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায়! এমনকি বিচারপতি সেন একটি নির্দিষ্ট রাজনৈতিক দলের হয়ে কাজ করছেন বলেও মন্তব্য করেন বিচারপতি গাঙ্গুলি। এই ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে বিচারপতি সৌমেন সেনকে বিচারপতির পদ থেকে সরানোর প্রক্রিয়া শুরু হওয়া উচিত বলে মন্তব্য করেছিলেন বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়। দুই বিচারপতির বেনজির সংঘাতের ঘটনায় স্বতঃপ্রণোদিত পদক্ষেপ নেয় সুপ্রিম কোর্ট। এরপরই এই মামলা নিজের হাতে নিয়েছে শীর্ষ আদালত।
আরও পড়ুন: ফেব্রুয়ারীতেই লাফিয়ে বাড়বে তাপমাত্রা! দুর্বিসহ হবে জীবন! দক্ষিণবঙ্গ নিয়ে ভয়ঙ্কর আবহাওয়ার আপডেট
এদিকে ওই শুনানিতেই বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়ের এজলাস থেকে প্রাথমিক শিক্ষা সংক্রান্ত মামলা সরানোর জন্য সুপ্রিম কোর্টে আবেদন জানায় তৃণমূল সাংসদ অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের আইনজীবী। যদিও এই বিষয়ে কোনও পদক্ষেপ নেয়নি সুপ্রিম কোর্ট। সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতি ডিভিশন বেঞ্চের পর্যবেক্ষণ ছিল এই বিষয় হাইকোর্টের প্রধান বিচারপতির এক্তিয়ারভুক্ত। তাই তাতে কোনও প্রকার হস্তক্ষেপ করেনি সুপ্রিম কোর্ট।
এরপর গত মঙ্গলবার বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়ের এজলাস থেকে প্রাথমিক শিক্ষা সংক্রান্ত সমস্ত মামলা সরিয়ে দেন প্রধান বিচারপতি। মামলা যায় বিচারপতি রাজাশেখর মান্থার বেঞ্চে। এই ঘটনার পর শুক্রবার নিজের এজলাসে বসেই এই নিয়ে মন্তব্য করলেন বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায়।