বাংলাহান্ট ডেস্ক : SSC দুর্নীতি মামলায় সিঙ্গল বেঞ্চের বিচারপতি তিনি। এই মামলার সূত্র ধরেই বাংলার ঘরে ঘরে এখন তিনি পরিচিত মুখ। পশ্চিমবঙ্গ সরকারের দুর্নীতির বিরুদ্ধে তাঁর অনড় অবস্থান রীতিমতো সাধুবাদ কুড়িয়েছে। তিনি অভিজিত গঙ্গোপাধ্যায়। আবারও একবার তিনি উঠে এলেন সংবাদের শিরোনামে। তবে এবার আর এসএসসি মামলা নিয়ে নয়। কাশ্মীর নিয়ে তাঁর মন্তব্য চাঞ্চল্য শোরগোল তুলেছে দেশ জুড়ে।
তাঁর পদমর্যাদা যথেষ্ট সম্মানের। কলকাতা উচ্চন্যায়ালয়ের বিচারপতি তিনি। উচ্চপদস্থ সাংবিধানিক পদ তাঁর। তা সত্ত্বেও কাশ্মীর বেড়াতে গিয়ে হেনস্তার শিকার হয়েছেন তিনি। এমনই বিস্ফোরক দাবি করলেন অভিজিতবাবু। এমনকী অতি সাধারণ এক সরকারি কর্মচারীর মুখ থেকেও তাঁকে শুনতে হয়, ‘জাহান্নমে যাও!’ এতটাই অসম্মানিত হন তিনি যে ভয়ংকর সেই অভিজ্ঞতার গোটাটা জানিয়ে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহকে চিঠিও দেন।
আদালত সূত্রে জানা যাচ্ছে, এজলাসে বসেই বিচারপতি অভিজিত গঙ্গোপাধ্যায় বলেন, তাঁর ধারণা, এখনও কাশ্মীরের বহু পুলিশ আধিকারিকই ভারতবিরোধী মনোভাব পোষণ করে থাকেন। মঙ্গলবার একটি মামলার শুনানি চলাকালীনই ভরা এজলাসে নিজের সেই অভিজ্ঞতার কথাই শুনিয়েছেন তিনি।
কী হয়েছিল সেই ঘটনা? বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায় জানান আদালতের ছুটিতে লে-লাদাখ ঘুরতে গিয়েছিলেন। লাদাখের হান্দুরমান গ্রাম পর্যন্ত যেতে বিশেষ কোনও সমস্যা হয়নি। সমস্যার শুরু হয় দ্রাসে পৌছেই। বিচারপতির কথায়, সাধারণত যে কোনও বিচারপতির কনভয়ের সঙ্গে থাকেন জেলা জজ কোর্টের কর্মী ও পুলিশ। পথ চিনিয়ে নিয়ে যান তাঁরাই। কিন্তু দ্রাস পৌঁছে তিনি দেখেন কনভয়ে পুলিশের কোনও কর্মী বা আধিকারিক নেই। কারণ জানতে ২৩ কিলোমিটার পথ পেরিয়ে দ্রাস থানায় যান বিচারপতি নিজেই। সেখানে গিয়ে দেখেন পুলিশ আধিকারিক নাক ডেকে ঘুমাচ্ছেন। পুরো ঘটনা বলে অনুরোধ জানান তাঁকে। এরপর তাঁকে ওয়ার মেমোরিয়াল ঘুরিয়ে দেখান থানার এসএইচও। থানা থেকে বিচারপতিকে আশ্বাস দেওয়া হয়, এরপর থেকে নিয়ম মাফিক প্রোটোকল আধিকারিক পাবেন তিনি। আশ্বাস শুনে শ্রীনগরের দিকে রওনা হন বিচারপতি।
কিছুক্ষণ পর তিনি বুঝতে পারেন, সম্পুর্ন মিথ্যা বলা হয়েছে তাঁকে। শ্রীনগর পর্যন্ত পৌঁছতে কেউ যাতে তাঁর সুরক্ষার দায়িত্ব নেন, সে জন্য সোনমার্গের পুলিশের সাহায্যও চান বিচারপতি। সেখানেও খারাপ অভিজ্ঞতা হয় তাঁর। সোনমার্গের এসএইচও জানান, থানার গাড়ি খারাপ। সাহায্য করা সম্ভব নয়। শুনেই সোনমার্গ থানায় পৌঁছে যান তিনি। গিয়ে দেখেন সার দিয়ে গাড়ি দাঁড়িয়ে আছে ২৮টি গাড়ি। এবং সবক’টিই সচল। এরপর কোনওভাবে সোনমার্গের একটি হোটেলে রাত কাটান তিনি।
বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায় দাবি করেন দ্রাসের পুলিশ আধিকারিকদের মধ্যে অধিকাংশই ভারত বিদ্বেষী মনোভাব পোষণ করেন। এজলাসে বিচারপতি আরও বলেন, গল্প করতে করতে এক পুলিশ কর্মী তাঁকে জানান, ‘তুরতুক তো আসলে পাকিস্তানের এলাকা! ভারত সেটা দখল করে রেখেছে।’ ওই পুলিশ আধিকারিক নিজেও তুরতুকের বাসিন্দা। তাই তাঁর দাবি, সেখানকার সবই নাকি তিনি জানেন।
বিচারপতির গঙ্গোপাধ্যায় বলেন, সোনমার্গের পুলিশ আধিকারিকদের মধ্যেও একই মানসিকতার পরিচয় পেয়েছেন তিনি। শুধু পুলিশই নয়, একই রকম ব্যবহার ছিল সরকারি পদস্থ অধিকারিকদের একাংশেরও। সোনমার্গের হোটেলে রাত কাটানোর পর শ্রীনগরে চলে যান তিনি। সেখানে জম্মু-কাশ্মীরের উচ্চ আদালত দেখতে যান। সেখানেও বিচারপতিকে প্রোটোকল আধিকারিক দেওয়ার কথা বলা হয়। সাধারণত কোনও প্রোটোকল আধিকারিক আসেন বিচারপতিকে নিয়ে যেতে। কিন্তু এখানেও প্রোটোকল আধিকারিক হিসাবে সাধারণ এক কর্মীকে পাঠানো হয়। শ্রীনগরে তাঁর জন্য যে হোটেলের ব্যবস্থা করা হয় তার মান অত্যন্ত খারাপ বলে অভিযোগ করেন বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায়। সেখানকার প্রোটোকল অফিসের এক কর্মী তাঁকে রীতিমতো হুমকি দিয়ে বলেন, ‘জাহান্নমে যাও।’ এই পুরো বিষয়টি জানিয়ে বিচারপতি অভিজিত গঙ্গোপাধ্যায় চিঠি দেন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রী অমিত শাহকেও। তিনি চিঠিতে লেখেন তাঁর কাশ্মীর ভ্রমণের অভিজ্ঞতা অত্যন্ত ভয়াবহ। কাশ্মীরের পরিস্থিতি যথেষ্ট উদ্বেগজনক বলেই চিঠিতে জানান তিনি।