বাংলা হান্ট ডেস্ক : কলকাতা হাইকোর্টে বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়ের (Justice Abhijit Ganguly) ১৭ নম্বর এজলাস। আর বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায়ের এজলাস মানেই নতুনত্ব কিছু। তেমনই আজও হল, তবে তা দেখে উৎফুল্ল হওয়ার চেয়ে চোখ জলে ভিজে যাওয়ার পরিস্থিতি তৈরি হতে পারে। ৪৭টি বছর হারিয়ে ফেলার আবেদন নিয়ে বিচারপতির মুখোমুখি হলেন ৭৬ বছরের এক বৃদ্ধা। বিচারপতির উদ্দেশে তিনি বললেন, ‘আপনি আইনের যোদ্ধা!’ এর উত্তরে বিচারপতিও তাঁকে বলেন, ‘এই আইন আপনাকে গাছতলায় দাঁড় করিয়েছিল, আবার সেই আইনই আপনাকে আপনার প্রাপ্য সম্মান অর্থ সব ফিরিয়ে দিয়েছে।’
হাওড়ার শ্যামপুর হাইস্কুলের শিক্ষিকা ছিলেন শ্যামলী ঘোষ। অভিযোগ, নিজের প্রাপ্য বেতন তিনি পাননি প্রায় তিন দশক ধরে। ২৯ বছর বয়সে স্কুল থেকে বরখাস্ত করা হয় তাঁকে। তার পরে প্রাপ্য সেই বেতন আদায়ের জন্য আইনি লড়াই শুরু করেন তিনি। এই নিয়ে একটানা ৪২ বছর ধরে তিনি লড়াই চালিয়ে গেছেন। আদালতের চক্কর কাটতে কাটতেই সাদা হয়েছে মাথার চুল। এক সময়ের যুবতী শিক্ষিকা এখন হয়েছেন এক বৃদ্ধা। তবু হার মানেননি।
দীর্ঘ সেই লড়াইয়ে অবশেষে এল সাফল্য। সাফল্য এনে দিলেন বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়। গত বছর মে মাসে কলকাতা হাইকোর্টের বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায় সেই মামলার রায়ে নির্দেশ দেন, ওই শিক্ষিকার সমস্ত বকেয়া বেতন সুদে আসলে তাঁর হাতে তুলে দিতে হবে। বকেয়া বেতনের সঙ্গে দিতে হবে ১০ শতাংশ সুদ।
১৯৭৬ সালে শ্যামপুরের ওই স্কুলে চাকরি পান শ্যামলী। বাম আমলে তাঁর চাকরি নিয়ে বিতর্ক তৈরি হয়। বন্ধ হয়ে যায় বেতন। ২০১৩ সালে মেয়াদ অনুযায়ী চাকরি থেকে অবসর নেন শ্যামলী। কিন্তু বেতনের জন্য লড়াই চলতে থাকে। স্কুলের প্রধান শিক্ষক থেকে শুরু করে স্কুল শিক্ষা দফতরে ছোটাছুটি, একের পর এক চিঠি, কোনওটাই বাদ রাখেননি তিনি। কিন্তু লাভের লাভ হয়নি কিছুই। এর পরেই আইনের পথ ধরেন তিনি। কলকাতা হাইকোর্টে বিভিন্ন এজলাস ঘুরে মামলা আসে অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়ের এজলাসে। অবশেষে সেখানেই মেলে সুবিচার। রায় শুনে সেদিন হাইকোর্টে কেঁদে ফেলেছিলেন ৭৬ বছরের বৃদ্ধা শ্যামলী।
মামলা শেষে বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায় শ্যামলীদেবীকে বলেন, ‘ম্যাডাম আপনার কেস হয়ে গেছে, আপনি এবার বাড়ি যান।’ এই সময় হঠাৎই শ্যামলী দেবী বিচারপতির সামনে দাঁড়িয়ে আবৃত্তি করেন রবিঠাকুরের পূরবী কাব্যগ্রন্থের লীলাসঙ্গিনী কবিতার একটি অংশ, ‘কেন অবেলায় ডেকেছো খেলায়, সারা হয়ে এল দিন, এবার কি তবে শেষ খেলা হবে নিশীথ-অন্ধকারে?’ এই কবিতাটি আবৃত্তি করে তিনি বলেন, ‘৭৬ বছর বয়সে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর এই কবিতা লেখেন। আমিও শেষ বয়সে এসে বিচার পেয়ে এই উপলব্ধি করলাম।’