বাংলা হান্ট ডেস্কঃ পঞ্চায়েত নির্বাচন (Panchayat Vote) শেষ হয়েছে গত শনিবার। বেরিয়ে গিয়েছে ভোটের ফলাফলও। তবে এখনও থামেনি হিংসার ঘটনা। ভোটের দিনক্ষণ ঘোষণার পর থেকে শুরু অশান্তি, এখনও সেই ধারা অব্যাহত। গতকালই হিংসার বলি হয়েছে আরও ৩। আর গত একমাস ধরে ভোট সন্ত্রাসে বাংলায় নিহতের পরিসংখ্যান প্রায় ৫০ ছুঁইছুঁই। চারিদিকে রক্ত বন্যা, হাহাকার। গণতন্ত্রের উৎসব রূপ নিয়েছে মৃত্যুমিছিলের। তাই ভোট পেরোলেও শান্তি তো দূর উল্টে সাধারণ মানুষ নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছে বলেই মনে করছে কলকাতা হাইকোর্ট (Calcutta High court)।
বৃহস্পতিবার হুগলির (Hooghly) জাঙ্গিপাড়ায় ভোটগণনার দিন গণনাকেন্দ্রের বাইরে রাস্তায় ব্যালট পেপার পড়ে থাকার মামলার শুনানিতে কমিশনকে ফের ঝাঁঝালো আক্রমণ শানালেন হাইকোর্টের বিচারপতি অমৃতা সিনহা (Justice Amrita Sinha)। কমিশনের ভূমিকার কড়া সমালোচনা করে বিচারপতির প্রশ্ন, ‘অশান্তি ও মৃত্যুর ঘটনা যে ঘটছে সেটা কি কমিশন অস্বীকার করতে পারবে? একজন প্রার্থী ৫বছর ধরে কাজ করার পর জিততে এই ভাবে অশান্তি পাকাতে পারেন?’
এরপরই বিচারপতি বলেন, ‘আসলে প্রচুর টাকার লেনদেন। তাই ক্ষমতা দখলের জন্যই এই ধরনের ঘটনা ঘটেছে।’ এদিন বিচারপতির পর্যবেক্ষণ, ভোটে জেতার অর্থ যেন পাঁচ বছরের চাকরি পাওয়া। সেই কারণেই এত হিংসা রাজ্য জুড়ে।
ভোটের গণনার দিন জাঙ্গিপাড়ার ডিএন হাই স্কুলের পাশের রাস্তায় গুচ্ছ গুচ্ছ ব্যালট পেপার উদ্ধার করা হয়। এক সিপিএম প্রার্থী কয়েকশো ব্যালট পেপার নিয়ে হাই কোর্টের দ্বারস্থ হন। সেই মামলায় জাঙ্গিপাড়ার বিডিওকে তলব করেছিল আদালত। আজ বিচারপতি সিনহার এজলাসে হাজিরা দিয়ে এই প্রসঙ্গে বিডিও জানান, তিনি প্রিসাইডিং অফিসারকে ব্যালট পেপারগুলি দিয়ে দিয়েছিলেন। তারপর সেগুলি তার দায়িত্বে ছিল না।
একথা শুনে বিচারপতি বিডিও-কে সংশ্লিষ্ট প্রিসাইডিং অফিসারের নাম, ঠিকানা লিখে দিয়ে যেতে বলেন। রাস্তা থেকে উদ্ধার হওয়া সেই ব্যালট পেপারগুলি অব্যবহৃত থাকলেও তাতে প্রিসাইডিং অফিসারের স্বাক্ষর ছিল। এদিন আদালতে মামলাকারীর আইনজীবী বিকাশরঞ্জন ভট্টাচার্য আদালতে বলেন, উদ্ধার করা সেই ব্যালট পেপারগুলি ভুয়ো হতে পারে। হয়তো ভুয়ো ব্যালটেই অবাধে ছাপ্পা ভোট হয়েছে আর প্রহসন চলেছে।
এই নিয়ে পাল্টা কমিশনের আইনজীবী জানান, ভোট মিটে গিয়েছে তাই এই মামলা গৃহীত হওয়াই উচিত নয়। এই নিয়ে নির্বাচনী পিটিশন দাখিল করা উচিত। এই মন্তব্যের পরিপ্রেক্ষিতে বিচারপতি বলেন মামলা গ্রহণ করার বিষয়ে পরে সিদ্ধান্ত নেবে আদালত।
কমিশনকে তীব্র ভর্ৎসনা করে কমিশনের আইনজীবীর উদ্দেশে বিচারপতি প্রশ্ন করে বলেন, ‘‘কেন ভোটের পরেও রাজ্যে এত অশান্তি হচ্ছে? রাজ্যের সাধারণ মানুষ হিসাবে আপনি বলুন, এখনও পর্যন্ত ক’টি নির্বাচনী পিটিশনের সুরাহা হয়েছে? তার খরচ কে জোগাবে?’’
এই মামলায় আগামী ২০ জুলাইয়ের মধ্যে রিটার্নিং অফিসারকে হলফনামা জমা দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছে আদালত। গণনাকেন্দ্রের ভেতরের এবং বাইরের সিসিটিভি ফুটেজ চেয়ে পাঠানো হয়েছে। কোর্টের রেজিস্ট্রার জেনারেলের কাছে ২০ জুলাইয়ের মধ্যে সেসব জমা করতে হবে। মামলার পরবর্তী শুনানি আগামী ২৪ জুলাই।