বাংলাহান্ট ডেস্ক : খাঁ খাঁ পড়ে আছে স্কুল, ক্লাসরুম। বেঞ্চগুলোতে জমেছে ধুলোর পরত। কোথাও নেই পড়ুয়াদের কোলাহল, নেই শিক্ষক শিক্ষিকাদের বকাঝকাও। সাকুল্যে যে একজন শিক্ষিকা ছিলেন, তিনিও কোনও মতে পালিয়ে বাঁচতে বদলির চেষ্টায় ব্যস্ত। কার্যতই যেন প্রেতপুরীতে রূপান্তরিত হয়েছে হিঙ্গলগঙ্গের এই স্কুলটি। এবার এই স্কুলেই কলতান ফিরিয়ে আনতে শিক্ষা দপ্তরকে কড়া নির্দেশ দিলেন কলকাতা হাইকোর্টের বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়।
মাত্র বছর তেরো আগে ২০০৯ সালে উত্তর ২৪ পরগনাদ হিঙ্গলগঞ্জে তৈরি হয় মাধবকাটি রমাপুর জুনিয়র হাইস্কুল। কিন্তু দীর্ঘদিন ধরেই স্কুলটিতে একাধিক সমস্যার পাশাপাশি ছিল শিক্ষক শিক্ষিকার আকাল। কোনও মতে টিকে থাকলেও তারই মধ্যে আছড়ে পড়ে করোনার একের পর এক ঢেউ। ২০২০ সালের মার্চ মাস থেকে কার্যতই বছর দুয়েকের জন্য বন্ধ হয়ে যায় রাজ্যের সমস্ত শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। স্কুলটিতে শিক্ষকের ঘাটতি শুরু থেকে থাকলেও বছর তিনেক আগে ভয়াবহ রূপ নেয় তা। কমতে কমতে মাত্র একজন শিক্ষিকাতে এসে দাঁড়ায় সংখ্যাটি। ইতিহাসের শিক্ষিকা হলেও পঞ্চম শ্রেণি থেকে অষ্টম শ্রেণি অবধি সব ক্লাসই একাই নিতেই শিক্ষিকা সুস্মিতা মিত্র। কিন্তু করোনা এবং লকডাউনে বড়সড় প্রভাব পড়ে স্কুলে। দুবছর পর সম্প্রতি স্কুল খুললেও সেই স্কুলে দেখা মেলে না কোনও পড়ুয়ারই। দীর্ঘদিনের একটি ফাঁকের ফলে স্কুলে আসা বন্ধ করেছে সমস্ত ছাত্রছাত্রীই। ফাঁকা স্কুল আগলে আপতত একাই বসে সুস্মিতাদেবী। কিন্তু এভাবে আর কতদিন! তাই বর্তমানে বদলির চেষ্টাই চালাচ্ছেন শিক্ষিকা।
কিন্তু বদলি চাইলেই কি আর কত সহজে মেলে তা! বদলির জন্য স্কুল কর্তৃপক্ষের নো অবজেকশন সার্টিফিকেটের দরকার পড়ে শিক্ষক শিক্ষিকাদের। কিন্তু এখানে অমিল তা। ফলে শেষমেশ বাধ্য হয়েই হাইকোর্টের দ্বারস্থ হন ওই শিক্ষিকা। এদিন ছিল সেই মামলারই শুনানি। এদিন শুনানিতে বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায় সাফ জানিয়ে দেন, স্কুলে একজনও পড়ুয়া না থাকায় কোনও মতেই আটকে রাখা যাবে না ওই শিক্ষিকাকে।
এখানেই শেষ নয়। স্কুলটি বাঁচাতে কী কী পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে সেই সংক্রান্ত তথ্যও তিনি তলব করেন স্কুল পরিদর্শকের কাছে। এরপরই স্কুলটিকে বাঁচানোর জন্য যা যা ব্যবস্থা নেওয়া দরকার সবগুলি নিতে কড়া নির্দেশ দেওয়া হয় শিক্ষা দপ্তরকে। এক মাসের মধ্যে অগ্রগতির রিপোর্ট জমা দেওয়ার কথাও জানিয়েছেন বিচারপতি।