বাংলা হান্ট ডেস্ক: রেশন বন্টন দুর্নীতি মামলায় (Ration Scam Case) গত অক্টোবর মাসে গ্রেফতার হয়েছেন রাজ্যের প্রাক্তন খাদ্যমন্ত্রী তথা বর্তমান বনমন্ত্রী জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক (Jyotipriya Mallick)। বর্তমানে জেল হেফাজতে তিনি। চলছে তদন্ত আর নিত্যদিন মন্ত্রীর বিরুদ্ধে বিস্ফোরক সব তথ্য সামনে আনছেন তদন্তকারীরা। আর এবার ইডির দাবি, একসময় খাদ্যমন্ত্রী থাকা জ্যোতিপ্রিয় মল্লিকই নাকি রেশন দুর্নীতির কথা সব জানতেন। আর সেকথা তিনি নিজে জেরায় স্বীকারও করেছেন!
ব্যাঙ্কশাল আদালতে(Bankshall Court) রিপোর্ট জমা দিয়ে ইডির (ED) দাবি, প্রথম থেকেই রেশন দুর্নীতির সবই জানতেন জ্যোতিপ্ৰিয়। তবে জেনেও উপযুক্ত পদক্ষেপ করেননি। উল্টে দুর্নীতিগ্রস্তদের সঙ্গে হাত মিলিয়ে দিনের পর দিন নিজেও দুর্নীতি করে গিয়েছেন। ইডির দাবি, দুর্নীতিগ্রস্ত চালকলের মালিকদের নিয়ে একটি চক্র গড়ে তুলেছিলেন জ্যোতিপ্ৰিয় ওরফে বালু। আর সেই চক্রেরই সক্রিয় মেম্বার ছিলেন রেশন মামলায় ধৃত বাকিবুর রহমান।
রেশন কেলেঙ্কারি মামলায় প্রথমে ইডির হাতে গ্রেফতার হন ব্যবসায়ী বাকিবুর রহমান। এরপর আবার তার সূত্র ধরেই জ্যোতিপ্রিয় মল্লিকের নাম সামনে আসে। এরপর টানা জেরা ও ম্যারাথন তল্লাশির পর গত বছরের ২৬ অক্টোবর গভীর রাতে জ্যোতিপ্রিয়কে গ্রেফতার করে ইডি। কেন্দ্রীয় সংস্থা আদালতে রিপোর্ট দিয়ে জানায় জ্যোতিপ্ৰিয় যে সব কথা জানতো সেকথা গত ৩১ অক্টোবর জেরায় স্বীকারও করেছেন তিনি।
ব্যাঙ্কশাল আদালতে জমা দেওয়া রিপোর্টে ইডির দাবি, জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক খাদ্যমন্ত্রী থাকাকালীন রেশন বণ্টনে দুর্নীতির বিরুদ্ধে একাধিক FIR ধামাচাপা দেওয়া হয়েছে। ওদিকে আবার সম্প্রতি জ্যোতিপ্ৰিয়র লেখা চিঠির সূত্র ধরে বনগাঁ পুরসভার প্রাক্তন চেয়ারম্যান তথা তৃণমূল নেতা শংকর আঢ্যকে গ্রেফতার করেছে ইডি। তিনিও জেলবন্দি। তদন্তকারীদের স্ক্যানারে রয়েছে শংকর আঢ্যর পরিবারের লোকজনও।
প্রথম থেকেই এই শঙ্করকে নিয়ে একের পর এক বিস্ফোরক দাবি করে চলেছে কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা ইডি (Enforcement Directorates)। ইডি সূত্রে আগেই দাবি করা হয়েছে জেলবন্দি শঙ্করের মাত্র একটি সংস্থারই দশ বছরের ‘টার্নওভার’ এক হাজার কোটি টাকা। এর মাধ্যমে বৈদেশিক মুদ্রা বিনিময় হয়েছে। এছাড়া শঙ্কর ও তার পরিবারের থাকা থাকা ১১টি ফোরেক্স সংস্থার মাধ্যমে প্রায় আড়াই হাজার কোটি টাকার বৈদেশিক মুদ্রার বিনিময় হয়েছে বলে ইতিমধ্যেই আদালতে দাবি করেছেন তদন্তকারীরা।
আরও পড়ুন: সিভিকের ফোন থেকে কার সঙ্গে কথা বলতেন সুজয়কৃষ্ণ? নিজামে ‘সেই’ ব্যক্তি আসতেই শোরগোল
তদন্তে নেমে শঙ্কর আঢ্য, তার স্ত্রী, মা, ছেলে, মেয়ে, ভাই, ভাইয়ের স্ত্রী, শ্যালকের নামে মোট ১১টি ফোরেক্স সংস্থার হদিস মিলেছে। ইডি সূত্রে খবর, তদন্তে নেমে এখনও পর্যন্ত শঙ্কর আঢ্যর নামে ৯০টি বিদেশি মুদ্রা বিনিময় সংস্থার সন্ধান মিলেছে। এই সংস্থা গুলির মাধ্যমে রেশন দুর্নীতির বিপুল পরিমাণ কালো টাকা সাদা করা হয়েছে বলে আশঙ্কা ইডির।
ওদিকে জ্যোতিপ্ৰিয়র ‘স্বীকারোক্তি’র বিষয় সামনে আসতেই শুরু হয়েছে রাজনৈতিক তরজা। এই বিষয়ে রাজ্যের শাসক দলকে বিঁধে সিপিএম সাংসদ তথা আইনজীবী বিকাশরঞ্জন ভট্টাচার্য বলেন, “এটা থেকে আমরা এই সিদ্ধান্তে আসতে পারি যে, এই দুর্নীতি করার জন্য ওর দলের নেতৃত্বের চাপ ছিল।” এবার সত্যিই রেশন মামলায় আরও কোনও রাঘববোয়ালের নাম সামনে আসে কিনা, সেটাই দেখার।