‘রেপ কেসকে দর করেছিলেন, মমতা ব্যানার্জি আপনি শুনতে পাচ্ছেন..’, কামদুনি কাণ্ডে বিস্ফোরক মৌসুমী

বাংলা হান্ট ডেস্কঃ দীর্ঘ দশ বছর পর কামদুনি ধর্ষণ এবং হত্যা মামলার রায় ঘোষণা করল কলকাতা হাই কোর্ট। ২০১৩-র ৭ জুন কামদুনিতে গণধর্ষণ ও খুনের ঘটনায় মূল অভিযুক্ত ছিল ৯ জন। ৬ অভিযুক্তের মামলার ভিত্তিতে আজ রায়দান করল কলকাতা হাইকোর্ট (Kamduni Gangrape Case Verdict)।

এই মামলাতে দোষী সাব্যস্ত ৩ জনকে মৃত্যুদণ্ড, এবং ৩ জনকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ডের সাজা শুনিয়েছিল নিম্ন আদালত। এরপর সাজা কমানোর দাবি জানিয়ে হাইকোর্টের (Calcutta High Court) দ্বারস্থ হয় ওই ৬ অভিযুক্ত। ঘটনায় ১০ বছর পর বৃহস্পতিবার এই ঘটনায় অভিযুক্ত আনসার আলি মোল্লা এবং সইফুল আলি মোল্লার ফাঁসির পরিবর্তে আমৃত্যু কারাদণ্ডের নির্দেশ দিল কলকাতা হাইকোর্ট। অন্যদিকে ফাঁসির সাজার বদলে আমিন আলী মুক্তি দেওয়া হয়।

বাকি তিন অভিযুক্ত ইমানুল হক, ভোলানাথ নস্কর এবং আমিনুর ইসলামকেও মুক্তি দেওয়া হয়েছে। এদের যাবজ্জীবন কারাদণ্ডের সাজা শুনিয়েছিল নিম্ন আদালত। আইনজীবী জানান, যেই তিন অভিযুক্তকে মুক্তি দেওয়া হয়েছে তাদের এই মামলায় সাত বছরের কারাদন্ড হতে পারে। তবে ১০ বছর ধরে তারা যেহেতু কারাবাসে রয়েছে তাই ১০০০০ হাজার টাকা জরিমানা করে তাদের মুক্ত করেছে হাইকোর্ট।

প্রসঙ্গত ২০১৩ সালের ৭ জানুয়ারি এক কলেজছাত্রীকে গণধর্ষণ করে খুনের অভিযোগ ওঠে উত্তর ২৪ পরগনার কামদুনিতে। ঘটনায় তোলপাড় হয়েছিল গোটা রাজ্য। দোষীদের শাস্তির দাবিতে চলে আন্দোলন। অভিযুক্তকে ৮ জনকে গ্রেফতার করা হয়। হয় CID তদন্ত। মামলায় অভিযুক্ত ৬ জনের সাজা শোনায় নগর দায়রা আদালত।

আরও পড়ুন: পুজোর আগেই বন্যা? আজও অতি ভারী বৃষ্টির সম্ভাবনা এই সব জেলায়: আবহাওয়ার খবর

kamduni case

এরপর নিম্ন আদালতের রায় চ্যালেঞ্জ জানিয়ে হাইকোর্টে যায় দোষীরা। এদিন সেই মামলায় শুনানি হল। আর শুনানির পরই সাজা কমানো এমনকি মুক্তির রায় নিয়ে অনেকেই বলছেন দোষীরা যথাযোগ্য শাস্তি পেল না। অন্যদিকে এদিন আদালতের রায় শুনেই রায় কান্নায় লুটিয়ে পড়েন কামদুনির দুই প্রতিবাদী নারী নির্যাতিতার বান্ধবী টুম্পা ও মৌসুমী।

এদিন হাইকোর্টের রায়ের পর মৌসুমী বলেন, “টাকার কাছে বিক্রি হয়ে গিয়েছে এই রাজ্য সরকারের উকিল। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় আমাদের বিচার দিতে পারলেন না।’’ পরে এক সংবাদমাধ্যমের অনুষ্ঠানে গিয়ে ক্ষোভ উগরে দিয়ে মৌসুমী বলেন, “যেই মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্য়ায় কামদুনি গিয়ে ঘোষণা করেছিলেন যে, অপরাধীরা শাস্তি পাবে, সরকারি উকিল লড়বে! সেই সরকারি উকিল, পুলিস, প্রশাসন সব টাকার কাছে বিক্রি হয়ে গিয়েছে। ”

মৌসুমীর কথায়, “কী বলব ভাষা খুঁজে পাচ্ছি না! কোর্টে যেভাবে মেয়েটার মা কাঁদছিল। সন্তান হারানোর কষ্ট একমাত্র মা-ই জানে। আমরাও একজন মা। সন্তানের সামান্য জ্বর হলে এতটা চিন্তা কষ্ট হয়, সেই সন্তানকে যদি দুটো পা চিরে মেরে দেওয়া হয়, আর তার বিচার যদি এরকম হয়! হাইকোর্টের থেকে এই বিচার আমরা আশা করিনি।”

চিৎকার করে মৌসুমী বলেন, “মমতা ব্যানার্জি আপনি শুনতে পাচ্ছেন, আপনিই কামদুনি গিয়ে বলেছিলেন, ১৫ দিনে চার্জশিট আর ৩০ দিনে সাজা ঘোষণা, সরকারি উকিল এই মামলা লড়বে! রেপ কেসকে আপনি দরদাম করেছিলেন! কলকাতা হাইকোর্টের রায়ে আপনার সেই রেটের দামের মূল্য আজকে দিতে হল! সরকারি উকিল, পুলিস প্রশাসন সব টাকার বিনিময়ে বিক্রি হয়ে গেছে। বিচার দিতে পারলেন না আপনি!”

Sharmi Dhar
Sharmi Dhar

শর্মি ধর, বাংলা হান্ট এর রাজনৈতিক কনটেন্ট রাইটার। উত্তরবঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সাংবাদিকতায় স্নাতকোত্তর। বিগত ৩ বছর ধরে সাংবাদিকতা পেশার সঙ্গে যুক্ত ।

সম্পর্কিত খবর