‘মা রান্না করে রেখো’, বলাই হল সার, বিভীষিকার কাঞ্চনজঙ্ঘা কেড়ে নিল বিশ্বপ্রতাপের প্রাণ

বাংলা হান্ট ডেস্ক: ছেলের বাড়ি ফেরার আনন্দ মুহূর্তের মধ্যে বদলে গেল শোকে। সোমবার শিয়ালদা গামী কাঞ্চনজঙ্ঘা এক্সপ্রেসের মর্মান্তিক দুর্ঘটনা (Kanchanjunga Train Accident) ফের একবার উস্কে দিয়ে গিয়েছে করমন্ডল এক্সপ্রেসের সেই অভিশপ্ত ট্রেন দুর্ঘটনার রক্তক্ষয়ী স্মৃতি। মালগাড়ির সাথে এদিন উত্তরবঙ্গ এক্সপ্রেসের মুখোমুখি সংঘর্ষের জেরে এখনও পর্যন্ত কানে এসেছে মোট ১০ জনের মৃত্যু সংবাদ।

সোমবার দুর্ঘটনাগ্রস্ত ওই কাঞ্চনজঙ্ঘা এক্সপ্রেসেই ছিলেন লেকটাউনের দক্ষিণদাঁড়ির বাসিন্দা বিশ্ব প্রতাপ মিশ্র (Bishwapratap Mishra) (৩৫)। উত্তরবঙ্গ থেকে ট্রেনে চেপে ছেলের বাড়ি ফেরার খবর পেয়ে আনন্দে চোখ মুখ ঝলমল করে উঠেছিল মায়ের। কিন্তু সেদিন কাঞ্চনজঙ্ঘা এক্সপ্রেসে ওঠাই হয়েছিল কাল। ওই দুর্ঘটনায় পর থেকে আর খোঁজ মেলেনি বিশ্বপ্রতাপের।

প্রথম থেকেই ওই দুর্ঘটনায় অনেকের মৃত্যুর খবর কানে আসছিল। কিন্তু মায়ের মন তো! তাই ছেলের সঙ্গে কিছু খারাপ হতে পারে তা দুঃস্বপ্নেও কল্পনা করতে পারেননি তিনি। কিন্তু মঙ্গলবারের পরেও ছেলের কোন খোঁজ না মেলায় মনকে আর কিছুতেই শক্ত করতে পারছিলেন না তিনি।  শেষ পর্যন্ত  বড় ছেলে দুর্ঘটনাস্থলে গিয়ে খোঁজ করতেই জানা যায় ওইদিনের কাঞ্চনজঙ্ঘা এক্সপ্রেসের দুর্ঘটনায় মৃত্যু হয়েছে  বিশ্বপ্রতাপের।

ছেলের মৃত্যু সংবাদ পাওয়ার পর থেকে শোকে পাথর হয়ে গেছে গোটা পরিবার। ছেলে হারানোর শোকে মুখ দিয়ে রা কাটতে পারছেন না বিশ্বরূপের মা-ও।তার শুধু বারবার মনে পড়ছে ছেলের সাথে বলা শেষ কথা। দুর্ঘটনার আগে বিশ্বরূপ নিজেই তাঁর মাকে  ফোন করে বলেছিলেন, ‘মা রান্না করে রেখো আমি ৯ টার মধ্যে ঢুকে যাচ্ছি।’

আরও পড়ুন: ৩২ লাখে প্রশ্ন বিক্রি! কীভাবে হয়েছিল নিট-‘দুর্নীতি’? অবশেষে মুখ খুললেন ‘মূলচক্রী’ অমিত

কিন্তু বলাই হল সার! আর তার বাড়ি ফেরা হলো না, খাওয়া হলো না মায়ের হাতের রান্না। বিশ্বপ্রতাপের মা সাবিত্রী মিশ্র চোখে জল নিয়ে বলেন , ‘শুনলাম, বাড়ি এসে খাবে। আমি রান্না করতে চলে গিয়েছিলাম। কিন্তু জানতাম না ছেলেটা আর কোনওদিন ফিরবে না।’ অন্যদিকে বারবার জ্ঞান হারাচ্ছেন বিশ্বপ্রতাপের স্ত্রী নিতু মিশ্রও। তাঁদের এক ছেলেও আছে। বাবা দেড় মাস পর বাড়ি ফিরছে শুনে আনন্দে ছিল সে। কিন্তু আর বাড়ি ফেরা হল না বিশ্বপ্রতাপের।

Accident 1

জানা যাচ্ছে, এদিন কাঞ্চনজঙ্ঘা এক্সপ্রেসের দুর্ঘটনার  খবর পেয়ে বিশ্বপ্রতাপের  পরিবারের লোকজন প্রথমে গিয়েছিলেন  শিয়ালদহ স্টেশনে। কিন্তু সেখানে মৃত ও জীবিত ব্যক্তিদের তালিকায় বিশ্বপ্রতাপ মিশ্রের নাম খুঁজে পাওয়া যায়নি। এমনকী তিনি জীবিত না মৃত সেই তথ্যটুকুও জানাতে পারেনি রেল। শেষ পর্যন্ত দুর্ঘনাস্থলে গিয়ে ভাইয়ের মৃত্যু সংবাদ পান বিশ্বপ্রতাপের দাদা।


Anita Dutta
Anita Dutta

অনিতা দত্ত, বাংলা হান্টের কনটেন্ট রাইটার। কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সাংবাদিকতায় স্নাতকোত্তর। বিগত ৪ বছরের বেশি সময় ধরে সাংবাদিকতা পেশার সাথে যুক্ত।

সম্পর্কিত খবর