বাংলা হান্ট ডেস্কঃ একদিকে যখন করোনার আতঙ্কে রীতিমতো নাভিশ্বাস উঠছে মানুষের। প্রতিদিনই আক্রান্ত হচ্ছেন হাজারে হাজারে মানুষ। তখন এই মহামারীর অন্ধকারেও আলোর দিশা নিয়ে এগিয়ে আসছেন অনেকেই। একদিকে যেমন এগিয়ে এসেছেন সৌরভ গাঙ্গুলী, শচিন টেন্ডুলকার, শিখর ধাওয়ানদের মত ক্রিকেটাররা, তেমনই আবার এগিয়ে এসেছেন সনু সুদ, অমিতাভ বচ্চন, দেব, যিশু সেনগুপ্ত অনিকেত চট্টোপাধ্যায় সহ একাধিক রুপোলি পর্দার তারকাও। এগিয়ে এসেছেন এভারেস্ট বিজয়ী বাঙালি পর্বতারোহী সত্যরূপ সিদ্ধান্ত, রুদ্রপ্রসাদ ভান্ডার দের মত মানুষরাও। কিন্তু সবচেয়ে বড় যোগদান বোধহয় সাধারণ মানুষের। যেমন শিক্ষক শ্যামল জানা, বাড়িতে বসে বেতন নেওয়া পছন্দ নয় বলে রোজই বেরিয়ে পড়ছেন কোভিড আক্রান্ত রোগীদের শুশ্রূষায়। যেমন কোন ক্লাস টু এর ছোট্ট অভীপ্সা সেবার জন্য তুলে দিচ্ছে পিগি ব্যাংকে জমানো সমস্ত টাকা। এবার সেই তালিকায় অন্তর্ভুক্ত হলেন আর একজন মানুষ। নাম করিমুল হক। তবে এলাকাবাসী তাকে চেনে বাইক অ্যাম্বুলেন্স দাদা বলে। কারণ প্রত্যন্ত গ্রামে বাইক অ্যাম্বুলেন্স পরিষেবা এনে অনেক মানুষের প্রাণ বাঁচিয়েছেন তিনি। শুধু তাই নয় এর জন্য সরকার তরচে পদ্মশ্রী সম্মানও পেয়েছেন করিমুল।
সেই থেকে শুরু পথ চলা, একবার যখন মানুষের পাশে দাঁড়ানোর অদম্য ইচ্ছাশক্তি আর জেদ চেপে বসে। তখন সামর্থ্যটা কোনো বড় কথা নয়। সেটাই আরেকবার চোখে আঙ্গুল দিয়ে দেখিয়ে দিলেন করিমুল। কোভিড কালে এই মুহূর্তে রীতিমত মর্মান্তিক পরিস্থিতি সকলের। এই কথা মাথায় রেখেই জলপাইগুড়ি মালবাজারের প্রত্যন্ত গ্রামে গ্রামে মানুষের পাশে এগিয়ে আসছেন করিমুল।কখনো স্যানিটাইজ করছেন লোকের ঘরবাড়ি। কখনো মানুষের কাছে পৌঁছে দিচ্ছেন খাবার, প্রয়োজনীয় ওষুধপত্র। সব দিয়েছে করিমুলের ছেলেও। বাবার সাথে পিপিই কিট পড়ে রোজই বেরিয়ে পড়েছেন দুজনে। কেউ অসুস্থ হলে তার প্রেশার মেপে দেখেছেন। কাউকে বা পৌঁছে দিচ্ছেন হাসপাতলে। করিমুল স্পষ্টতই জানান, “আমি ডাক্তার নই। তবে রক্তচাপ মাপার যন্ত্র আছে, তা দিয়েই মানুষের প্রেশার মেপে দিচ্ছি৷ কারও সামান্য জ্বর বা সর্দি হলে, চিকিৎসকদের সঙ্গে ফোনে পরামর্শ নিয়েই চিকিৎসকরা যে ওষুধ দিতে বলছে, সেই ওষুধ দিয়ে দিচ্ছি। প্রয়োজন হলে নিজের বাইকে করে রোগীদের হাসপাতালে নিয়ে চিকিৎসা করিয়ে আনছি। শুধু চিকিৎসাই নয়, নিজেরা যা খাচ্ছি, সেই খাবার থেকে গরীব মানুষদের একবেলা খেতেও দিচ্ছি। এতে তাঁরাও খুশি, আমরাও খুশি।”
তাকে পাশে পেয়ে ভীষণ ভাবে খুশি এলাকার গ্রামবাসীরা। বাইক অ্যাম্বুলেন্স দাদাকে এর আগেও বারবার পাশে পেয়েছেন তারা। একাধিক সুবিধা-অসুবিধায় বারবার ছুটে এসেছেন করিমুল। কাউকে দ্রুত হাসপাতালে পৌঁছে দেওয়া, কারো জন্য খাবার জোগাড় করে দেওয়া এসবই তার ব্যক্তিগত জীবনের সঙ্গে অঙ্গাঙ্গীভাবে জড়িয়ে গিয়েছে। তবে করিমুলের একটাই কথা, লকডাউন অমান্য করবেন না। কখনো রেশন দোকানে বা অন্যান্য দোকানে বাজারে ভিড় হচ্ছে যথেষ্ট বেশি। আর সেসব দেখেই লোকজনকে সচেতন করতে নেমে পড়েছেন তিনি। কোভিড কত মারাত্মক হয়ে উঠতে পারে, তা বোঝাচ্ছেন। আশ্বাস দিচ্ছেন পাশে থাকার। কারো অক্সিজেন প্রয়োজন, ছুটছেন করিমুল। কারো ওষুধপত্র প্রয়োজন সেখানেও রয়েছেন তিনি। করিমুল জানান, আমার একটি ছোট্ট হাসপাতাল রয়েছে। সেখানে রোগীদের যেটুকু পারি সাহায্য করি। অনেক চিকিৎসক ওষুধপত্র পাঠিয়েছেন, সেগুলো দিয়ে প্রাথমিক চিকিৎসার কাজটা যতটা সম্ভব করার চেষ্টা করি। তাতে অন্তত ভাইরাসের মারাত্মক প্রভাবটা কিছুটা কমতে পারে।