বাংলাহান্ট ডেস্ক: গোটা বিশ্বেই সাধারণত পশু-পাখি সংরক্ষণের কথা বলা হয়। পরিবেশ দূষণের জেরে আমাদের আশেপাশের পশু-পাখি ক্রমশ ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। একাধিক কারণে বহু প্রজাতিই আজ বিলুপ্ত হয়ে গেছে। অনেক প্রজাতি আবার বিলুপ্তপ্রায়। তাই তাদের সংরক্ষণের কথা বলা হচ্ছে বার বার। দেশের সরকার থেকে বেসরকারি প্রতিষ্ঠান, সকলেই পশু-পাখি সংরক্ষণের পক্ষে বলছে।
কিন্তু আফ্রিকার কেনিয়াতে ছবিটা একটু অন্যরকম। সেখানে সরকার এক বিশেষ ধরনের পাখি নিধন করার নির্দেশ দিয়েছেন। পাখিটির নাম কোয়েলিয়া (Red Billed Quelea)। লাল ঠোঁটওয়ালা ছোট্ট একটি পাখি। কেনিয়া সরকারের তরফে নির্দেশ, ৬০ লক্ষ কোয়েলিয়া নিধন করতে হবে। কিন্তু কেন? এই পাখি আসলে বিশ্বের সবচেয়ে জনবহুল পাখি প্রজাতি। এটিকে ডানাওয়ালা পঙ্গপালও বলা হয়। এরা দলবদ্ধ ভাবে থাকে এবং একসঙ্গে প্রায় ৩০ মিলিয়ন পাখিও থাকতে পারে।
পঙ্গপালের মতোই এই পাখিও সব খাদ্যশস্য খেয়ে ফেলে। গম, বার্লি, ধান, সূর্যমুখী ও ভুট্টার মতো ফসল নষ্ট করে এরা। সেই কারণেই এই পাখি নিধনের নিদান দিয়েছে কেনিয়া সরকার। সোমালিয়া, ইথিওপিয়া, সুদান ইত্যাদির মতো পূর্ব আফ্রিকার দেশগুলিতে খাদ্যসঙ্কট দেখা দিয়েছে। ইতিহাসের সবচেয়ে লম্বা ও ভয়াবহ খাদ্যসঙ্কট এটি। ফলে কোটি কোটি মানুষ অভুক্ত থাকছেন। এই দেশগুলির তৃণভূমি উধাও হয়ে গিয়েছে। এদিকে ঘাসের বীজই কোয়েলিয়া পাখির প্রধান খাদ্য।
খাবার না পেয়ে তারা আক্রমণ করছে ফসলের ক্ষেত। জানা গিয়েছে, এখনও অবধি ৩০০ একর জমির ধান নষ্ট করেছে পাখিগুলি। বিশেষজ্ঞরা জানাচ্ছেন, ২ মিলিয়ন পাখির একটি দল একদিনে ৫০ টন ফসল খেয়ে ফেলতে পারে। কেনিয়ার চাষিদের প্রায় ৬০ টন ফসল নষ্ট করেছে এই পাখি। সেই জন্য তাদের ঠেকাতে এমন পদক্ষেপ নিচ্ছে সরকার। যদিও এই পাখি মারার পদক্ষেপ নিয়ে চিন্তিত পক্ষী বিশেষজ্ঞরা।
আফ্রিকায় ফেন্থিয়ন বলে একটি জনপ্রিয় কীটনাশক ব্যবহার করা হয়। কিন্তু বিজ্ঞানীরা জানিয়েছেন, এই কীটনাশক মানুষ ও অন্যান্য পশুদের পক্ষে খুবই ক্ষতিকারক। তাই কোয়েলিয়া পাখি নিধনে এই কীটনাশক ব্যবহার না করার পরামর্শ দিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা। প্রসঙ্গত, আফ্রিকার বহু দেশেই কোয়েলিয়া পাখির উপর আক্রমণ হয়েছে। গত বছর ২০ মিলিয়নেরও বেশি পাখি তানজানিয়ার ফসল নষ্ট করেছিল। তখন জাতিসংঘের তরফে ৫ লক্ষ ডলার দেওয়া হয় সরকারকে। তাদের বলা হয়, কীটনাশক ব্যবহার করে এই পাখি যেন নিধন করা হয়।