বাংলা হান্ট ডেস্কঃ রাজ্য বনাম রাজ্যপাল সংঘাতে চরমে। রাজ্যপালের সিদ্ধান্তে চরম আপত্তি সরকারের এবং তাঁর ক্ষমতা খর্ব করতে নয়া বিল আনতে চলেছে শাসক দল। কয়েক মাস ধরে বাংলায় এ চিত্রটি অত্যন্ত পরিচিত হলেও বর্তমানে সেই আঁচ পৌঁছে গেলো কেরলের (Kerala) রাজনীতিতে আর সেই সূত্র ধরেই এবার মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের (Mamata Banerjee) পথ অনুসরণ করতে চলেছেন কেরলের মুখ্যমন্ত্রী পিনারাই বিজয়ন (Pinarayi Vijayan)। আচার্য পদে রাজ্যপালের ক্ষমতা খর্ব করার জন্য একটি সংশোধনী বিল আনতে চলেছে কেরল সরকার, বর্তমানে এহেন ইঙ্গিত মেলায় চাঞ্চল্য ছড়িয়েছে গোটা রাজ্যে।
বাংলার প্রাক্তন রাজ্যপাল জগদীপ ধনকড় বর্তমানে দেশের উপরাষ্ট্রপতি পদে বিরাজমান রয়েছেন। ফলে বর্তমানে বাংলায় রাজ্য বনাম রাজ্যপাল সংঘাত একপ্রকার নেই বললেই চলে। তবে অপরদিকে আবার কেরলে দেখা দিয়েছে পারস্পরিক দ্বন্দ্বের সেই ছবি। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বনাম জগদীপ ধনকড়ের ন্যায় কেরলের রাজনীতিতেও উঠে এসেছে পিনারাই বিজয়ন বনাম রাজ্যপাল আরিফ খান বিতর্ক! সেই সূত্র ধরেই এবার আচার্য পদে রাজ্যপালের ক্ষমতা খর্ব করতে উদ্যোগী হয়ে উঠল বাম সরকার।
উল্লেখ্য, কয়েক মাস পূর্বে আচার্য পদে রাজ্যপালের ক্ষমতা হ্রাস করার জন্য একটি সংশোধনী আইন নিয়ে আসে তৃণমূল সরকার। পরবর্তীতে সেটি বিধানসভায় পাশ করা হয়। এক্ষেত্রে বাংলায় বিশ্ববিদ্যালয়গুলির উপাচার্য নিয়োগ সংক্রান্ত বিষয়ে রাজ্যপালের সঙ্গে মতানৈক্যের জন্যই রাজ্য সরকারের পক্ষ থেকে এহেন সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। বর্তমানে কেরলেও সেই একই সুর উঠে এসেছে বাম সরকারের গলায়। সূত্রের খবর, কালিকট, কান্নুর এবং সংস্কৃত বিশ্ববিদ্যালয়গুলিতে উপাচার্য পদে নিয়োগ সংক্রান্ত বিষয়ে রাজ্য-রাজ্যপাল সংঘাত চরমে আর সেই কারণেই আরিফ মহম্মদ খানের ক্ষমতা খর্ব করতে তৎপর কেরল সরকার।
এ প্রসঙ্গে এখনো পর্যন্ত সংশোধনী বিল পেশ করা না হলেও দ্রুত তা হবে বলেই মনে করা হচ্ছে। কেরল সরকার সূত্রের খবর, বিশ্ববিদ্যালয়গুলিতে উপাচার্য নিয়োগের ক্ষেত্রে যে সার্চ কমিটির ওপর প্রধান দায়িত্ব দেওয়া হয়, সংশোধনী বিল অনুযায়ী সেই সার্চ কমিটিতে তিনের পরিবর্তে পাঁচ জনের অন্তর্ভুক্তি ঘটবে। এক্ষেত্রে রাজ্যপালের সিদ্ধান্তকে চ্যালেঞ্জ জানানোর জন্য সরকারের পক্ষ থেকে এই সংশোধন আনা হতে চলেছে বলে মত বিশেষজ্ঞদের। এ প্রসঙ্গে কেরলের উচ্চ শিক্ষামন্ত্রী জানান, “বর্তমানে বিশ্ববিদ্যালয়গুলিতে উপাচার্য নিয়োগের ক্ষেত্রে একাধিক বিতর্কের সৃষ্টি হয়েছে। ফলে পরিস্থিতি তলানিতে। এই অবস্থায় দাঁড়িয়ে আমরা সার্চ কমিটিতে আরো দুজনের অন্তর্ভুক্তি ঘটাতে চাইছি, যাতে সম্পূর্ণ প্রক্রিয়া সঠিকভাবে চলে।” যদিও অপরদিকে রাজ্যপাল সংশোধনী বিলে সই করতে নারাজ বলেই সূত্র মারফত জানা গিয়েছে।
প্রসঙ্গতজ ঝামেলার সূত্রপাত হয় কেরলের কান্নুর ইউনিভার্সিটির সহকারী অধ্যাপক পদে নিয়োগ সংক্রান্ত বিষয়কে কেন্দ্র করে। ওই পদে প্রিয়া ভার্গিসকে নিয়োগ করতে চায় কর্তৃপক্ষ। তবে আবার অপরদিকে প্রিয়া বাম সরকারের ঘনিষ্ঠ হওয়ার অভিযোগ তুলে ধরেন রাজ্যপাল। যদিও আবার অপরদিকে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের তরফ থেকে জানানো হয়েছে, “এক্ষেত্রে রাজনীতির কোন বিষয় নেই। পারফরম্যান্সের দিক থেকে যার অবদান সেরাজ তাকেই বেছে নেওয়া হয়েছে।”
তবে দমতে নারাজ রাজ্যপাল! ইউনিভার্সিটির উপাচার্যকে তিনি পাল্টা ‘দুষ্কৃতী’ বলে কটাক্ষ ছুড়ে দিয়েছেন। এই পরিস্থিতিতে দাঁড়িয়ে তাঁর ক্ষমতাকে খর্ব করতে মরিয়া বাম সরকার। সেই কারণেই মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের পথেই হাঁটতে চলেছেন পিনারাই বিজয়ন। এ প্রসঙ্গে এক বাম নেতা জানান, “বর্তমানে রাজভবনকে আরএসএসের জায়গায় পরিণত করা হয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য নিয়োগ সংক্রান্ত বিষয় রাজ্যপাল যে মনোভাব দেখিয়ে চলেছেন, তা অনুচিত।” তবে পরবর্তী সময়ে বাংলার মতো কেরলেও সংশোধনী বিল পেশ করা হয় কিনা, সেটাই দেখার।