পড়েছিলেন ভগবদ্গীতা, জানতেন শ্রীকৃষ্ণের বাণী! পরমাণু বোমার জনক ওপেনহাইমার-র জীবনী নিয়ে সিনেমা হলিউডে

বাংলাহান্ট ডেস্ক: আগামী ২১ জুলাইয়ের অপেক্ষায় দিন গুনছেন আপামর সিনেপ্রেমীরা। কারণ এই দিনই মুক্তি পেতে চলেছে হলিউডের (Hollywood) বহু প্রতীক্ষিত ছবি ‘ওপেনহাইমার’ (Oppenheimer)। খ্যাতনামা পরিচালক ক্রিস্টোফার নোলান পরিচালিত ছবিটি তৈরি হয়েছে রবার্ট ওপেনহাইমার এর জীবন কাহিনির উপরে ভিত্তি করে। এই রবার্ট ওপেনহাইমারকেই বলা হয় পরমাণু বোমার জনক।

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে পরমাণু বোমার ভূমিকা ছিল সবথেকে বেশি। এই পরমাণু বোমা প্রথম তৈরি করেন রবার্ট ওপেনহাইমার। আমেরিকার পদার্থবিজ্ঞানী ওপেনহাইমার লস এলামোস ল্যাবরেটরির ডিরেক্টর ছিলেন, যেখানে পরমাণু বোমার ফর্মূলা তৈরি হয়েছিল। ১৯৪৫ সালের ১৬ জুলাই প্রথম নিউক্লিয়ার টেস্ট হয়েছিল যার নাম রাখা হয়েছিল ‘ট্রিনিটি’।

Know about Oppenheimer who read bhagavad gita

নিউ মেক্সিকোর জোর্নাডা ডেল মুর্টো মরুভূমিতে প্রথম পরমাণু বোমার পরীক্ষা করা হয়েছিল। সে সময়ে পরীক্ষাস্থল থেকে ১০ কিলোমিটার দূরে একটি বাঙ্কারে বসেছিলেন ওপেনহাইমার। ২১ কিলোটন টিএনটি যখন প্রথম বার বিষ্ফোরণ হয় তখন তা সূর্যের আলোকেও ঢেকে দিয়েছিল বলে শোনা যায়। ১৬০ কিমি দূরেও অনুভূত হয়েছিল কম্পন। আকাশে বিষ্ফোরণ পরবর্তী ঘন ধোঁয়ার স্তম্ভ দেখে স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলেছিলেন ওপেনহাইমার।

রবার্ট ওপেনহাইমার, যাঁকে নিয়ে তৈরি হয়েছে সিনেমা, তিনি একাধারে ছিলেন পদার্থবিজ্ঞানী এবং বুদ্ধিজীবী। জার্মান-ইহুদী বাবা মায়ের সন্তান ওপেনহাইমার ছোট থেকেই স্বচ্ছল পরিবারে বড় হয়েছিলেন। ৯ বছর থেকেই ধরা পড়েছিল তাঁর বুদ্ধির বিকাশ। আরো একটি বিষয় জানলে অবাক হবেন। ভগবদ্গীতা খুঁটিয়ে পড়েছিলেন ওপেনহাইমার।

অনুবাদ ছাড়া ভগবদ্গীতা পড়বেন বলে সংষ্কৃত শিখেছিলেন ওপেনহাইমার। শোনা যায়, প্রথম পরমাণু বোমার সফল পরীক্ষার পর সর্ব প্রথমে শ্রীকৃষ্ণের বাণী মনে এসেছিল তাঁর। কুরুক্ষেত্রের যুদ্ধের আগে অর্জুনকে নিজের বিশ্বরূপ দর্শন করিয়ে শ্রীকৃষ্ণের বাণী যা ভগবদ্গীতায় লেখা রয়েছে সেটাই প্রথম মনে এসেছিল ওপেনহাইমার এর। ভগবান শ্রীকৃষ্ণ নিজেকে ‘মহাকাল’ বলে বর্ণনা করেছিলেন। অর্জুনকে তিনি বুঝিয়েছিলেন, তিনি যদি যুদ্ধ নাও করেন তবুও কৌরবদের ধ্বংস হবেই।

ভগবদ্গীতার প্রতি আকর্ষণের কথা নিজ মুখেই স্বীকার করেছিলেন ওপেনহাইমার। কিন্তু এমন মারণাস্ত্র তৈরি করার পর কি তাঁর মনে একটুও অনুশোচনা হয়নি? হ্যাঁ, হয়েছিল। পরমাণু বোমার ব্যবহার কীভাবে হতে পারে সেটা তিনি বিলক্ষণ জানতেন। জাপানিদের কথা ভেবে তিনি বিমর্ষ হয়ে পড়েছিলেন বলেও জানা যায়। তারপরেই আবার মন দিয়েছিলেন নিজের কাজে। তিনিই আবার হিরোশিমা নাগাসাকিতে বিষ্ফোরণের খবর শুনে সহকর্মীদের নিয়ে উদযাপনে মেতেছিলেন বলে শোনা যায়।

ভগবদ্গীতা পড়ার পরেই ওপেনহাইমারের চিন্তাশক্তি বিকশিত হয় বলে শোনা যায়। তিনি আরো গভীর ভাবে ভাবতে শুরু করেন। ভগবদ্গীতা এবং শ্রীকৃষ্ণের বাণী তাঁর চিন্তাধারায় গভীর প্রভাব ফেলেছিল। আবার এও শোনা যায়, পরমাণু বোমা তৈরি করার পর অবসাদ থেকে মুক্তি পাওয়ার জন্যই নাকি ভগবদ্গীতার শরণ নিয়েছিলেন ওপেনহাইমার।


Niranjana Nag

সম্পর্কিত খবর