বাংলা হান্ট ডেস্ক: প্রকৃতি যার নেয় ফিরিয়ে দেয় তার দ্বিগুণ। কিন্তু সময়ের সাথে সাথে অত্যাধুনিক জীবন যাপনের নেশায় অভ্যস্ত মানুষ সে কথা ভুলে গিয়েই অবলীলায় ধ্বংস করে চলেছে প্রকৃতি। তবে প্রকৃতিও নিজের প্রতিশোধ নিয়ে নিচ্ছে নিজেই। তাই এখন ফিবছর লেগেই রয়েছে বন্যা, খরা, ঘূর্ণিঝড় কিংবা ভূমিকম্পের মতো নানান প্রাকৃতিক দুর্যোগ। একটা গাছ থেকে মানুষের যে পরিমাণ উপকার হয় কেটে ফেললে ক্ষতি হয় আরও দ্বিগুণ।
কিন্তু সকলে সমান হয় না। তাই আজকের এই অসচেতন সমাজে দাঁড়িয়েও সচেতনতার বার্তা দিয়ে চলেছেন ভারতের অরণ্য মানব (Forest Man Of India) যাদব মোলাই পায়েং (Jadav Molai Paying)।শুনতে অবাক লাগলেও সম্পূর্ণ নিজের চেষ্টায় একা হাতেই তিনি তৈরি করেছেন একটা আস্ত বন যদিও সেই কাজ সহজ ছিল না মোটেই। দীর্ঘ ৩০ বছর ধরে অসমের ব্রহ্মপুত্র নদীর বালুচরে ১৩৬০ একর জমি জুড়ে তিনি তৈরি করেছিলেন এই বনাঞ্চল।
অসমের জোরহাট জেলার কোকিলামুখের কাছে ব্রহ্মপুত্রের সেই বনকে বলা হয় ‘মোলাই কাঠনিবাড়ি’। এই বনসৃজনের কর্মকাণ্ডই যাদবকে এনে দিয়েছে জগৎজোড়া খ্যাতি। ইতিমধ্যেই ২০১৫ সাল যাদবকে ‘পদ্মশ্রী’ সম্মানে সম্মানিত করেছে ভারত সরকার। জেএনইউ-র তরফে তাঁকে ‘Forest Man of India’ শিরোপা দেওয়া হয়েছে। এখানেই শেষ নয় গাছের প্রতি তাঁর ভালোবাসাকে কুর্নিশ জানিয়ে তৈরি হয়েছে একাধিক তথ্যচিত্র।
দক্ষিণ ভারতে যাদবকে নিয়ে পূর্ণদৈর্ঘ্যের ছবিও বানানো হয়েছে। ইতিমধ্যেই মেক্সিকো এবং দুবাই থেকে একই রকম বনাঞ্চল গড়ে তোলার জন্যও ডাক পেয়েছেন তিনি। ১৯৬৩ সালে অসমের জোরহাট জেলার কোকিলামুখে গ্রামে আসামের মিসিং জনজাতির এক পরিবারের জন্মগ্রহণ করেছিলেন এই যাদব মোলাই পায়েং। আজ থেকে প্রায় ৪৪ বছর আগে এই বনভূমি তৈরীর কাজে হাত দিয়েছিলেন তিনি।
আরও পড়ুন: মস্যজীবীর জালে প্রায় ২ কেজি ওজনের ইলিশ! দাম শুনলেই ভুলে যাবেন রুপালি শস্যের স্বাদ
তাঁর তৈরী সেই জঙ্গলে এখন হরেক রকম গাছের সাথেই রয়েছে বিভিন্ন প্রজাতির বন্যপ্রাণীর বাস। এলাকায় বন্যা হলে এই বনেই নাকি আশ্রয় নেয় রয়্যাল বেঙ্গল টাইগার, হাতিকিংবা বিভিন্ন প্রজাতির সাপও। নিজের বন সম্পর্কে একবার এক সাক্ষাৎকারে যাদব বলেছিলেন, ‘ছোটবেলা থেকেই গাছ পাখি জীবজন্তু খুব ভালো লাগতো, ধীরে ধীরে বুঝলাম বুঝেছিলাম গাছ কাটলে শুধু গাছের ক্ষতি হয় না আশেপাশের পাখি বন্য প্রাণীরা ও বিপদে পড়ে।’
যাদবের বয়স যখন ১০ সেসময় তাঁরা থাকতেন ব্রহ্মপুত্রের পার্শ্ববর্তী এক দ্বীপে। কিন্তু ভূমিক্ষয়ের কারণে সেই জায়গা ছেড়ে অন্যত্র চলে যেতে হলেও মাঝেমধ্যেই নিজেদের পুরনো জায়গা দেখে আসতেন যাদব। এরইমধ্যে একসময় ভয়ঙ্কর বন্যায় ক্ষতিগ্রস্থ হয় অসমের বিস্তীর্ণ এলাকা। তাতেই প্রায় ধ্বংস হয়ে গিয়েছিল ওই দ্বীপ। এই অবস্থা দেখে সেসময় তিনি সকলের কাছে অনুরোধ করেব, দ্বীপের আগের অবস্থা ফিরিয়ে আনার জন্য। কিন্তু কেউ কথা না শোনায় কিশোর যাদব একাই প্রথমে মাত্র ২০টি বাঁশের বীজ পুঁতে শুরু করেছিলেন বৃক্ষরোপণের কাজ। যা আজ পরিণত হয়েছে বিশাল জঙ্গলে।