জেলার প্রথম মহিলা ইলেক্ট্রিশিয়ান সীতা দেবী, টক্কর দিতে পারেন যেকোনো পুরুষ ইলেকট্রিশিয়ানকে

বাংলা হান্ট ডেস্ক: একটা সময়ে ছিল যখন বিভিন্ন সামাজিক বেড়াজালের কারণে মহিলারা স্বতঃস্ফূর্তভাবে বাড়ির বাইরেই বেরোতে পারতেন না। এমনকি, কিছু দশক আগে পর্যন্ত আমাদের দেশেও এই চিত্র দেখা যেত। তবে, এখন সময় পাল্টেছে। পাশাপাশি, সময়ের সাথে সাথে পরিবর্তিত হয়েছে সমাজও। এখন পুরুষদের সাথে সাথে পাল্লা দিয়ে মহিলারাও এগিয়ে চলেছেন প্রতিটি ক্ষেত্রে। এমনিতেই “ইলেকট্রিশিয়ান” (Electrician) শব্দটি শুনলেই আমাদের প্রথমে পুরুষদের কথা মাথায় আসে। কারণ, আমরা প্রতিটি ক্ষেত্রেই পুরুষদেরকেই এই কাজ করতে দেখি। কিন্তু, এবার সেই প্রচলিত ধারণাকে ভেঙে দিয়ে সকলের কাছে দৃষ্টান্ত স্থাপন করলেন বিহারের (Bihar) গয়া জেলার বাসিন্দা সীতা দেবী।

জানা গিয়েছে, ওই জেলার কাশীনাথ মোড় সংলগ্ন এলাকায় সীতা দেবীর একটি বৈদ্যুতিক যন্ত্রপাতি সারানোর দোকান রয়েছে। এমনকি, সীতা দেবীকে এখন সকলেই “ইলেকট্রিশিয়ান দেবী” নামেও চেনেন। এমতাবস্থায়, কিভাবে একজন সাধারণ গৃহবধূ থেকে “ইলেকট্রিশিয়ান দেবী” নামে সমধিক জনপ্রিয়তা পেলেন সেই প্রসঙ্গটিই বর্তমান প্রতিবেদনে উপস্থাপিত করা হল।

সুখেই কাটছিল জীবন: বর্তমানে সীতা দেবী পুরুষদের সাথে রীতিমতো টেক্কা দিয়ে বৈদ্যুতিক যন্ত্রপাতি মেরামত করার কাজ করেন। যদিও, ১৫ বছর আগে সীতা দেবী একজন সাধারণ গৃহবধূ হিসেবেই জীবনযাপন করছিলেন। তিনি তাঁর সন্তান ও পরিবারকে নিয়ে সুখেই দিনযাপন করতেন। পাশাপাশি, তাঁর স্বামী জিতেন্দ্রও পেশায় ইলেকট্রিশিয়ান ছিলেন। কিন্তু, একটা সময়ে পরে জিতেন্দ্রর শারীরিক অবস্থার অবনতি হতে থাকে। সেই কারণে সীতা দেবী তাঁর স্বামীর কাজে টুকটাক সাহায্য করতে শুরু করেন। ধীরে ধীরে তিনি তাঁর স্বামীর মত একজন দক্ষ ইলেকট্রিশিয়ানে পরিণত হন।

সংসারের দায়িত্ব সীতা দেবীর কাঁধে এসে পড়ে: সীতা দেবীর স্বামী জিতেন্দ্রর লিভারজনিত সমস্যা ধরা পড়ায় তিনি প্রায় কর্মক্ষমতা হারিয়ে ফেলেন। পাশাপাশি, চিকিৎসকরা জিতেন্দ্রকে বিশ্রামের পরামর্শও দেন। এমতাবস্থায়, স্বামীর স্বাস্থ্যের অবনতির কারণে পুরো সংসারের দায়িত্ব সীতা দেবীর কাঁধে এসে পড়ে। যদিও, তখন থেকেই সীতা দেবী তাঁর পুরো দোকানের দায়িত্ব একা হাতে সামলাতে থাকেন।

অনেকে অনেক কথা বলেন: এদিকে, কাজের সূত্রে সীতা দেবীকে তাঁর ১ বছরের ছেলেকে সঙ্গে নিয়েই বাইরে যেতে হয়েছিল। যার পরে তিনি অনেকের কাছ থেকেই বিভিন্ন তির্যক মন্তব্য পান। এমনকি, তাঁর আত্মীয়রাও তাঁর এই কাজ ভালোভাবে নেন নি। এমতাবস্থায়, তাঁদের কটূক্তি শুনে সীতা দেবী প্রথমে ভেঙে পড়লেও তাঁর স্বামী তাঁকে উৎসাহ দেন। পাশাপাশি, সীতা দেবীর স্বামী জিতেন্দ্র তাঁকে বলেন, অন্যের কথা উপেক্ষা করে গ্রাহকদের আস্থা বজায় রাখতে দায়বদ্ধতার সাথে কাজ করতে হবে। এদিকে, স্বামীর উৎসাহে সীতা দেবী তাঁর কাজ নিষ্ঠার সাথে করতে শুরু করেন এবং দোকানের আয় থেকে সংসারের খরচও চালাতে থাকেন।

electriciandevi4 1664972569

“ইলেকট্রিশিয়ান দেবী” নামে বিখ্যাত হয়েছেন: সীতা দেবী এই কাজের শুরুতে একাধিক প্রতিবন্ধকতার সম্মুখীন হলেও কোনোকিছুতেই ভেঙে পড়েন নি। বরং, প্রতিটি পরিস্থিতির সাথে লড়াই করে তিনি তাঁর লক্ষ্যে অবিচল ছিলেন। কার্যত বাধ্য হয়ে তিনি ইলেকট্রিশিয়ানের কাজ শুরু করলেও এখন তিনি সেই কাজের মাধ্যমেই সকলের কাছে “ইলেকট্রিশিয়ান দেবী” হিসেবে জনপ্রিয়তা পেয়েছেন। পাশাপাশি, বর্তমানে সীতা দেবী দৈনিক ১ হাজার থেকে ১,২০০ টাকা পর্যন্ত উপার্জন করছেন বলেও জানা গিয়েছে।

Sayak Panda
Sayak Panda

সায়ক পন্ডা, মেদিনীপুর কলেজ (অটোনমাস) থেকে মাস কমিউনিকেশন এবং সাংবাদিকতার পোস্ট গ্র্যাজুয়েট কোর্স করার পর শুরু নিয়মিত লেখালেখি। ২ বছরেরও বেশি সময় ধরে বাংলা হান্ট-এর কনটেন্ট রাইটার হিসেবে নিযুক্ত।

সম্পর্কিত খবর