বাংলা হান্ট ডেস্ক: সমাজের প্রান্তিক শ্রেণির মানুষদের কথা ভেবে ইতিমধ্যেই একাধিক প্রকল্প চলছে রাজ্যজুড়ে। যে কারণে খরচ হচ্ছে কোটি কোটি টাকাও। বিপুল এই খরচের বহর নিয়ে প্রায়ই মুখ খুলতে দেখা যায় মুখ্যমন্ত্রীকে। পাশাপাশি, সাধারণ মানুষের স্বার্থে প্রকল্পগুলি যে চলতে থাকবে তারও নিশ্চয়তা দিয়েছেন তিনি।
কিন্তু, যাদের সত্যিই প্রয়োজন এই প্রকল্পগুলির তাঁরা কি আদৌ স্বতঃস্ফূর্তভাবে এগুলির সুবিধা নিচ্ছেন? বর্তমানে এমন কিছু তথ্য উঠে এসেছে যার পরিপ্রেক্ষিতে খুব সহজেই এই প্রশ্ন উঠতে বাধ্য হচ্ছে। এই প্রতিবেদনে এমন কিছু ঘটনার কথা আমরা তুলে ধরবো যা শুনে চমকে যাবেন সকলেই।
বছর চারেক আগে ভিক্ষাবৃত্তি করে উপার্জন করা ক্যানাল ইস্ট রোডের ভাঁড়পট্টির বাসিন্দা সুধীর দত্তের মৃত্যুর পরে একপ্রকার আকাশ থেকে পড়েছিলেন তাঁর দুই ছেলে। জানা গিয়েছে, সুধীরবাবুর নামে পাঁচটি ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে ছিল বেশ কিছু টাকা। দু’টি বেসরকারি ব্যাঙ্কে “ফিক্সড ডিপোজ়িট”। পাশাপাশি, ছিল জীবন বিমা এবং ডাকঘরের সঞ্চয়ও।
তবে, এখানেই শেষ নয়, এছাড়াও বাড়িতে ছিল নগদ হাজার পনেরো টাকা, তিনটি সোনার আংটি এবং একটি স্মার্টফোন! অর্থাৎ সব মিলিয়ে সম্পত্তির পরিমাণ দাঁড়িয়েছিল প্রায় ১২ লক্ষ টাকা। এদিকে, ভিক্ষাবৃত্তি ছাড়াতে না পারায় বাবার সঙ্গে শেষের দিকে যোগাযোগই রাখেননি সুধীরবাবুর দুই ছেলে। কিন্তু, বাবার মৃত্যুর পরে শুধুমাত্র ভিক্ষার মাধ্যমে বিপুল এই সম্পত্তির হদিশ পেয়ে কার্যত বাকরুদ্ধ হয়ে পড়েন তাঁরা।
যদিও, একজন ভিক্ষুকের কাছে কিভাবে এত টাকা এলো তা নিয়ে তদন্তে নেমে কোনো রহস্যজনক কিছুই পায়নি পুলিশ। উল্টে তাঁরা জানতে পারেন যে, কোনও রকম প্রতারণা বা তোলাবাজির পথ নয় বরং ওই সম্পত্তি তিনি বানিয়েছিলেন শুধু ভিক্ষা করেই। এই প্রসঙ্গে এক পুলিশকর্মী জানিয়েছিলেন যে, “তাঁর বাড়িতে রান্নার ব্যবস্থা ছিল না। ঝুঁকে পড়ে কিছু একটা ধরে ধরে হাঁটতেন তিনি। মুখ-চোখ এতটাই শীর্ণকায় ছিল যে, মনে হত কোনও গভীর অসুখে ভুগছেন। যত দূরেই চলে যান, ঠিক ফিরে আসতেন নিখরচায়।”
তবে, শুধু সুধীরবাবুই নন, বরং ওই একই পন্থায় শহর জুড়ে অনেকেই ভিক্ষা করছেন বলে জানা গিয়েছে। এমনকি, একাধিক সরকারি প্রকল্পে সাহায্য পাওয়ার সুযোগ থাকলেও তা নিয়ে তাঁদের বেশির ভাগেরই কোনো উৎসাহ নেই। এছাড়াও, ভিক্ষার দৌলতে তাঁরা তৈরি করেছেন “রেট চার্ট”-ও।
তবে, ভিক্ষার পাশাপাশি সরকারি প্রকল্পের প্রতি কেন এত অনীহা? এই প্রসঙ্গে জানা গিয়েছে যে, বর্তমানে একাধিক সরকারি প্রকল্পের জেরে এই মুহূর্তে যে কোনো ব্যক্তি মাসে অন্তত তিন হাজার টাকা পেতে পারেন। সঙ্গে রয়েছে কম দামে খাদ্যদ্রব্য পাওয়ার সুযোগও। কিন্তু, শিশু অধিকার সুরক্ষা কমিশন ও শ্রম দফতরের আধিকারিকেরা জানাচ্ছেন, ভিক্ষা করা অনেক ক্ষেত্রেই একটি সংগঠিত পেশার আকার ধারণ করেছে। এমনকি, রীতিমতো অভিনয় করেও ভিক্ষার পরিমান বাড়িয়ে নেওয়া সম্ভব।
শিশু সন্তানকে ভিক্ষার কাজে ভাড়া দিলে মেলে দৈনিক ২০০ টাকা। আবার, শিশুদের মায়ের ভূমিকায় অভিনয় করলে দৈনিক ৬০০ থেকে ৮০০ টাকা পাওয়া যায়। তবে, বৃদ্ধ-বৃদ্ধার ক্ষেত্রে এই রেট আরও বেশি। সব মিলিয়ে মাসে ২৪-২৫ হাজার টাকার ভিক্ষা করার “পেশা” ছেড়ে কম টাকার সরকারি প্রকল্পের প্রতি ঝুঁকছেন না কেউই।
এদিকে, কেন্দ্রের সামাজিক ন্যায় ও ক্ষমতায়ন মন্ত্রকের রিপোর্ট জানাচ্ছে, দেশের মধ্যে ভিখারির সংখ্যার নিরিখে পশ্চিমবঙ্গের স্থান উপরের দিকে। ২০১৮-১৯ সালে যেখানে দেশে ভিখারির সংখ্যা ছিল ৪ লক্ষ ১৩ হাজার ৬৭০। সেখানে শুধু পশ্চিমবঙ্গেই ভিখারির সংখ্যা ৮১ হাজার ২২৪ জন।
যদিও, এই তালিকায় প্রথমসারিতে রয়েছে উত্তরপ্রদেশ (৬৫৮৩৫ জন) এবং অন্ধ্রপ্রদেশও (৩০২১৮ জন)। তবে, লকডাউনের পরে বর্তমানে এই সংখ্যা আরও বেড়েছে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। জাতীয় মানবাধিকার কমিশন সূত্রের পরিসংখ্যান অনুযায়ী, প্রতি মাসে এই দেশে প্রায় ৪০ হাজার শিশু অপহৃত হয়। এছাড়া, দেশে রোজ প্রায় ৩ লক্ষ শিশু হয় নেশার কবলে পড়ে, আর তা না-হলে ভিক্ষার কাজে ব্যবহৃত হয়।