বাংলাহান্ট ডেস্ক: রাজ্যে ফের নাট্যকর্মীদের হেনস্থার অভিযোগ। আবারো আঙুল উঠেছে রাজ্যের শাসক দলের দিকে। রানাঘাটবাসী নাট্যকর্মী নিরুপম ভট্টাচার্য (Nirupam Bhattacharya) সম্প্রতি তৃণমূলের (Trinamool Congress) বিরুদ্ধে নিগ্রহ, হেনস্থার অভিযোগ আনেন। ঘটনার প্রতিবাদে এবার সরব হলেন অভিনেতা তথা নাট্যকর্মী কৌশিক সেন (Kaushik Sen), ঋদ্ধি সেন (Riddhi Sen) এবং বাদশা মৈত্র (Badsha Moitra)।
সোশ্যাল মিডিয়ায় সম্প্রতি তৃণমূলের বিরুদ্ধে গুরুতর অভিযোগ এনে সরব হয়েছিলেন নাট্যকর্মী নিরুপম ভট্টাচার্য। তিনি অভিযোগ করেছিলেন, কিছু তৃণমূল সমর্থক তাঁকে এবং তাঁর পরিবারকে ক্রমাগত হেনস্থা করে চলেছে। তাঁকে পাগল প্রতিপন্ন করার চেষ্টা চলছে। শারীরিক ভাবে নিগ্রহ করা হয়েছে। এমনকি তাঁর বাবা মাকেও খুনের হুমকি দেওয়া হয়েছে বলে অভিযোগ করেন নাট্যকর্মী।
তিনি জানান, ভারভারা রাওয়ের ‘কসাই’ কবিতা অবলম্বনে নাটক মঞ্চস্থ করার প্রস্তুতি নিচ্ছেন। সেখানে হাঁসখালি ধর্ষণের মতো ঘটনার উল্লেখ রয়েছে। এই কারণেই তাঁর উপরে শাসক দলের রোষ নেমে এসেছে বলে অভিযোগ নিরুপম ভট্টাচার্যের। সতীর্থ নাট্যকর্মীর পরিস্থিতির কথা জানতে পেরেই সুর চড়িয়েছেন বাদশা ঋদ্ধিরা।
সোশ্যাল মিডিয়ায় ঋদ্ধি লিখেছেন, ‘রানাঘাট সৃজকের নাট্যকর্মী নিরুপম ভট্টাচার্যকে তাদের নাটক কসাইয়ের অভিনয়ের পর তৃণমূল কংগ্রেসের কর্মীরা শারীরিক ভাবে আক্রমণ করে l তারপর তাকে হুমকি দেয়, যে রানাঘাটে তার ইন্টিমেট স্পেস ‘ডাকঘরে’ তাকে নাট্যচর্চা করা বন্ধ করতে হবে l কারণ ? তাদের নাট্যচর্চা নাকি পরিবেশ দূষিত করে তুলছে l তাই জন্যই চুরির টাকা দিয়ে করা কার্নিভালে ED’র তলব করা নায়ক নায়িকাদের নিয়ে হাঁটতে গেলে সরিয়ে দিতে হয় ন্যায়ের লড়াইয়ে নামা চাকরিপ্রার্থীদের।’
তিনি প্রশ্ন তুলেছেন, ‘নিরুপম ভট্টাচার্যের দোষ কি? সে সৎ ভাবে থিয়েটার করে , নিজের মতো করে থিয়েটারকে বদলানোর স্বপ্ন দেখে , সে তার নাটকে সত্যি কথা বলে l সেই জন্যই শাসকের কালো হাত টেনে ধরে তার কলার, ভেঙে দিতে চায় ডাকঘর l কারণ ডাকঘরের বদলে আরও একটা ক্লাবঘর হলে সুবিধে অনেক , জমানো যাবে আরও কিছু চুরির টাকা, অশিক্ষা আর আর ডিজে বক্স চালিয়ে নাচ l আর সংস্কৃতি বরাদ্দ থাকবে শুধু তাদের জন্যে , যারা মহানায়ক উত্তম কুমার সম্মান আর কলকাতা ফিল্ম ফেস্টিভালের প্রথম দিনে নীল সাদা রঙের সামিয়ানার তলায় থাকবেন’।’
সংবাদ মাধ্যমের সঙ্গে সাক্ষাৎকারে বাম সমর্থক বাদশা মৈত্র বলেন, ঘটনাটিকে নিন্দনীয় বললেও কম বলা হয়। যে এই পরিস্থিতিতেও থিয়েটারকে বাঁচিয়ে রেখেছে, তাঁকে সাহায্য করা, তাঁর প্রচার করার বদলে হেনস্থা করা হচ্ছে। কোনো সিনেমা, নাটকে রাষ্ট্রের সমালোচনা থাকলে সেটা গণতান্ত্রিক অধিকার হিসাবেই গণ্য করা উচিত।
বাদশা বলেন, শারীরিক বা মানসিক অত্যাচার করে শিল্পীর স্বাধীনতায় হস্তক্ষেপ করার অধিকার কোনো শাসক দল বা তার আশ্রিতদের নেই। এটাকে বিচ্ছিন্ন ঘটনা হিসেবে বিবেচনা না করে অত্যন্ত গুরুত্ব দিয়ে দেখে দোষীদের শাস্তির দাবি করেছেন বাদশা। ভিডিও বার্তায় একই দাবি তুলেছেন কৌশিক সেনও। সেই সঙ্গে স্বপ্নসন্ধানীর ফেস্টিভ্যালে তাঁকে আমন্ত্রণ জানিয়ে সেখানে তাঁর নাটক মঞ্চস্থ করার আহ্বানও জানান তিনি।
এই ঘটনায় মুখ খুলেছে তৃণমূলও। দলের তরফে দাবি করা হয়েছে, নিরুপম ভট্টাচার্যের নাকি মানসিক সমস্যা রয়েছে। তিনি যার তার সঙ্গে বিবাদে জড়িয়ে পড়েন। সেদিনের ঘটনা সবটাই সিসিটিভিতে ধরা রয়েছে। সেটা দেখলেই পরিস্কার হয়ে যাবে পুরোটা।