বাংলা হান্ট ডেস্কঃ ফের ঘুরে ফিরে সেই বড়দিনের আড্ডা। ২৫ ডিসেম্বর পেরিয়ে এখন নতুন বছর পড়ল বলে, অন্যদিকে কুণাল-সজলের সেই আড্ডা নিয়ে বিতর্ক এখনো অব্যাহত। বড়দিনের সন্ধ্যায় বিজেপি নেতা শিবাজি সিংহরায় আয়োজিত একটি অনুষ্ঠানে মেতেছিলেন বিজেপি (BJP) নেতা সজল ঘোষ (Sajal ghosh) ও তৃণমূল (TMC) মুখপাত্র কুণাল ঘোষ (Kunal Ghosh)। সেই ছবি প্রকাশ্যে আসতেই শোরগোল পরে গিয়েছিল রাজনীতির অন্দরে। তবে গোটা ঘটনাকেই নিছক ‘আড্ডা’ বলে দাবি করেছিলেন কুণাল।
তবে কী এখানেই জল্পনার অবসান! একদমই নয়। ঘটনার পর সজলের দাবি ছিল, ওই সাক্ষাতে কুণাল তাঁকে তৃণমূল নিয়ে ‘হতাশা’র কথা শুনিয়েছেন। পাশাপাশি সজল আরও বলেন, ওই অনুষ্ঠানে কুণাল বিনা আমন্ত্রণে গিয়েছিলেন। এরপর সোমবার সজল ঘোষের পাল্টা জবাবে বিস্ফোরক মন্তব্য করেন কুণাল। তৃণমূল মুখপাত্র জানান, সজলই বিজেপিতে তাঁর অবস্থান এবং খারাপ থাকা নিয়ে অনেক কথা বলেছেন। পাশাপাশি, বিনা আমন্ত্রণে যাওয়ার মন্তব্যকে ‘ঘোর অসম্মানজনক’ বলেও দাবি করেন কুণাল।
অন্যদিকে, সজল ঘোষের বক্তব্য, ‘‘আমি এটা নিয়ে শিবাজিদাকে জিজ্ঞাসা করেছিলাম। তিনি জানান, নিমন্ত্রণ করেননি।’’ তবে সজলের এই দাবি মানতে নারাজ বিজেপির শিবাজি। তিঁনি জানান, ‘‘এ ধরনের কোনও কথাই আমি সজলকে বলিনি। আর আমন্ত্রণ ছাড়া কেউ কোথাও আসেন নাকি!’’
এরমধ্যেই কাহিনীতে এন্ট্রি নেয় কুণাল-সজলের এক অডিও রেকর্ডিং। অডিওতে শোনা যাচ্ছে, তৃতীয় কোনও ব্যক্তির ফোনে কথা বলছেন কুণাল ও সজল। সেখানে কুণালকে প্রশ্ন করতে শোনা যায়, ‘‘তুমি এটা কী বললে! আমি যেখানে খাবার দেখি, আমি চলে যাই!’’ জবাবে সজল বলছেন, ‘‘ওটা তো আমি মজা করেছি।’’ এরপর কুণাল সম্পর্কে মন্তব্য প্রসঙ্গে সজল বলেন, ‘‘আমাকে তো খেলতে হবে, আমায় তো বাঁচতে হবে। আমার তো গুষ্টির ষষ্ঠী পুজো হয়ে গিয়েছে পুরো। আমাকে যে কে কে, কী কী বলেছে আমি এখন বলব না।’’ আকুতিও শোনা যাচ্ছে সজল-কণ্ঠে— ‘‘দাদা, আমি বাঁচব কী করে, আমায় আপনি বলুন।’’ আরও কিছু কথার পরে সজলকে বলতে শোনা যায়, ‘‘আমি যে দলটায় আছি…। আমি আধ ঘণ্টা পরে হোয়াটসঅ্যাপে কল করব?’’ তাতে সম্মতি দেন কুণাল।
এই অডিও প্রকাশ্যে আসতেই শুরু রাজনৈতিক তরজা। ফাঁস অডিও প্রসঙ্গে কুণাল ঘোষ বলেন, ‘‘রবিবার আলোচনার সময় সজল ৪০ মিনিট আমার সঙ্গে আড্ডা মারেন। শুভেন্দু অধিকারীর তারিখ রাজনীতি কেন ভুল হচ্ছে, তা নিয়ে বিস্তারিত কথা হয়েছে। কথা দিয়েও চৌরঙ্গি আসনে টিকিট না দেওয়া কিংবা সুকান্ত মজুমদারের সঙ্গে ঘনিষ্ঠতার জন্য উত্তর কলকাতার জেলা সভাপতি হতে না-পারা নিয়েও হতাশা প্রকাশ করেছেন উনি। সে দিন আমি আরও কিছু ক্ষণ থাকলে সজল হয়তো আমার সঙ্গে তৃণমূল ভবনে যেতে চাইতেন! রাতারাতি ফেরা সম্ভব নয় জানিয়ে আমি কিছু দিন একটু চুপ থাকতে বলেছিলাম।’’
অন্যদিকে ফাঁস অডিও প্রসঙ্গে সজল জানান, ‘‘আমি ফোন করিনি। একজন সংবাদমাধ্যমের কর্মী তাঁর সঙ্গে ফোনে কথা বলার সময় কুণাল ঘোষকে দিয়ে দেন। আমি সত্যিই বাঁচার কথা বলেছি। আমায় রাজনীতি করতে হবে। কুণাল ঘোষরা আমার পাশে এসে বসে পড়লে বলতে হবে না যে, তুমি খেতে ভালবাসো, যেখানে খাওয়ার গন্ধ পাও সেখানে চলে যাও। এর মধ্যে ভুলটা কোথায়?’’ তিঁনি আরও বলেন, ‘‘যে কর্মীরা মার খান, যে কর্মীরা আক্রান্ত হন, তাঁরা যদি দেখেন আমি শাসকদলের নেতার সঙ্গে বসে আড্ডা দিচ্ছি, তবে সোশ্যাল মিডিয়ায় আমার গুষ্টির ষষ্ঠী পুজো হবে না?’’ এরপরই বিজেপি নেতা অভিযোগ করেন তাঁর বিরুদ্ধে চক্রান্ত হয়েছে। বলেন , ‘‘পুরো ঘটনা থেকে একটা বিষয় প্রমাণিত যে, এটা একটা চক্রান্ত। কারও সঙ্গে যদি আমার খুব ভালবাসা থাকত, তবে তো তিঁনি অডিয়ো প্রকাশ্যে বার করতেন না!’’