বাংলা হান্ট ডেস্কঃ আদালত অবমাননার মামলায় হাইকোর্টে (Calcutta High Court) সশরীরে হাজির তৃণমূল নেতা কুণাল ঘোষ। আদালতের নির্দেশ মতো সোমবার কলকাতা হাইকোর্টে হাজিরা দিলেন কুণাল (Kunal Ghosh)। এদিন দুপুর সাড়ে ১২টায় তিন বিচারপতির বেঞ্চের সামনে হাজিরার নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল তৃণমূল নেতাকে। সেই মতো হাজির হন কুণাল। কিন্তু, শারীরিক অসুস্থতার কারণে একজন বিচারপতি অনুপস্থিত ছিলেন। তাই এদিন মামলার শুনানি হয়নি।
নির্দেশ মেনে আদালতে কুণাল | Kunal Ghosh
সম্প্রতি, কলকাতা হাই কোর্টের (Calcutta High Court) জারি করা রুল নোটিস পেয়েছেন কুণাল ঘোষ। নারকেলডাঙা থানার মাধ্যমে তাকে নোটিস পাঠিয়েছে হাইকোর্ট জানায়, আদালত অবমাননার অভিযোগ জানিয়ে তাঁকে কারণ দর্শাতে হবে। কেন, কোন যুক্তিতে তাঁকে জেলে পাঠানো হবে না কিংবা শাস্তি দেওয়া হবে না তা জানতে চাওয়া হয় ওই নোটিসে। সেই সব প্রশ্নের উত্তর-সহ সশরীরে উপস্থিত থাকার জন্য তৃণমূল মুখপাত্র নির্দেশ দিয়েছিল হাইকোর্ট।
এদিন হাইকোর্ট থেকে বেরিয়ে কুণালবাবু বলেন, “আদালত অবমাননার একটি মামলায় আমার বিরুদ্ধে রুল জারি হয়েছিল। আজ সাড়ে ১২টার সময় তিন বিচারপতির বিশেষ বেঞ্চের সামনে উপস্থিত থাকতে হবে বলা হয়েছিল। এবং কেন আমাকে জেলে পাঠানো হবে না কিংবা শাস্তি দেওয়া হবে না, সশরীরে উপস্থিত থেকে তার কারণ দর্শাতে হবে। ”
কুণাল যোগ করেন, “আমি আজকে এসেছিলাম। কিন্তু, বিশেষ বেঞ্চের একজন বিচারপতি চিকিৎসা সংক্রান্ত কোনও জরুরি প্রয়োজনে না থাকায় বেঞ্চ বসেনি। তবে রুলে লেখা ছিল, সাড়ে ১২টায় আসতে হবে।” এদিন কুণাল ঘোষের তরফে আইনজীবী ছিলেন কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায়, অয়ন চক্রবর্তী, রাহুল মিশ্র।
কুণাল বলেন, “কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায় বিচারপতি অরিজিৎ বন্দ্যোপাধ্যায়কে বলেন, আমার মক্কেল এসেছে। কিন্তু, বেঞ্চ বসছে না। বিচারপতি বলে দিলেন, আমি যে এসেছিলাম, রেজিস্ট্রার জেনারেলকে আমার উপস্থিতি নথিভুক্ত করাতে বলেন। আমার উপস্থিতি রেকর্ড করিয়ে দেওয়া হল। আমার চলে যেতে আর কোনও বাধা নেই।”
ভিডিও দেখুন: https://youtu.be/oC_vy-OV8LM?si=gOsw4JhL-IBTo1nH
প্রসঙ্গত, গত ২৫ এপ্রিল কর্মশিক্ষা – শারীরশিক্ষায় অতিরিক্ত শূন্যপদে শিক্ষক নিয়োগ সংক্রান্ত মামলার শুনানির শ্লথ গতি নিয়ে প্রশ্ন তুলে কলকাতা হাইকোর্টের (Calcutta High Court) আইনজীবী বিকাশরঞ্জন ভট্টাচার্যের (Bikash Ranjan Bhattacharya) চেম্বারের বাইরে বিক্ষোভ প্রদর্শন করেন উচ্চ প্রাথমিকের চাকরিপ্রার্থীদের একাংশ।
আইনজীবী বিকাশরঞ্জন ভট্টাচার্য ও আইনজীবী ফিরদৌস শামিম বিক্রম বন্দ্যোপাধ্যায়, সুদীপ্ত দাশগুপ্ত সহ বেশ কিছু আইনজীবীকে হেনস্থার অভিযোগ ওঠে চাকরিপ্রার্থীদের একাংশের বিরুদ্ধে। পাশাপাশি বিচারপতি বিশ্বজিৎ বসুর বিরুদ্ধে আপত্তিকর মন্তব্য এবং স্লোগান দেওয়ার অভিযোগ ওঠে হাইকোর্ট চত্বরেই।
হাইকোর্টের বিচারপতিকে নিয়ে আপত্তিকর মন্তব্য এবং স্লোগান দেওয়ায় ঘটনায় আদালত অবমাননার মামলার জন্য কলকাতা হাই কোর্টের প্রধান বিচারপতি টিএস শিবজ্ঞানমের দৃষ্টি আকর্ষণ করেন বার অ্যাসোসিয়েশনের কিছু আইনজীবী। তাতে বিচারপতি অরিজিত বন্দ্যোপাধ্যায়,বিচারপতি সব্যসাচী চট্টোপাধ্যায় ও বিচারপতি রাজর্ষী ভরদ্বাজকে নিয়ে বিশেষ বেঞ্চ গড়ে দেন প্রধান বিচারপতি।\
গোটা বিষয়কে দুর্ভাগ্যজনক ঘটনা বলে উল্লেখ করে হাইকোর্ট। ডিভিশন বেঞ্চের মন্তব্য আদালতের অবমাননা ফৌজদারি অপরাধ। ভবিষ্যতে যাতে এরম ঘটনা আর না হয় সুনিশ্চিত করার জন্য পুলিশ কমিশনারকে নির্দেশ দেয় হাইকোর্ট। অভিযুক্তদের অনুসন্ধান করে রিপোর্ট দেওয়ায় জন্য কমিশনারকে নির্দেশ।
আরও পড়ুন: সামরিক উত্তেজনার পর প্রথমবার ভারত-পাকিস্তান ম্যাচ, কোন দেশে হবে খেলা? সূচি ঘোষণা করল ICC
উল্লেখ্য, সেইদিন বিক্ষোভকারীরা বিক্ষোভ দেখানোর পর তৃণমূল নেতা কুণাল ঘোষের সঙ্গে দেখা করেন। সেখান থেকে সাংবাদিক বৈঠক করেন কুণাল।
সাংবাদিক বৈঠক করে সিপিএম-এর সব নেতাদের ছবি দেখান। কুণালের প্রশ্ন ছিল, এক সময় যে বিকাশ ভট্টাচার্যরা মোটা অঙ্কের টাকা নিয়েছেন মামলা লড়ার জন্য, এখন কেন তাঁরাই চাকরি কাড়তে মরিয়া হয়ে পড়েছে? এই সময়ই কুণাল বলেন, “আর বিচারপতির কিছু কিছু সিপিএমের আইনজীবীকে দেখলে কী হয় জানি না। অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়কে দেখেছি। ভগবান-ভগবান-তারপর হল সাংসদ।” এই ঘটনার প্রেক্ষিতেই হয় মামলা। প্রাথমিক ভাবে এটা ক্রিমিনাল কন্টেমট বলে মনে করে আদালত। হলফনামা চাওয়া হয়। সন্তুষ্ট না হলে রুল জারি করা হবে বলা হয়েছিল। এরপর হাই কোর্ট অভিযুক্ত সকলের বিরুদ্ধে রুল জারি করে। সম্প্রতি সেই রুল নোটিস পেয়েছিলেন কুণাল।