SSC-কে কেন্দ্র করে বহু তরুণ-তরুণী বিপদে! গভীর সংকট কাটিয়ে ঘুরে দাঁড়ানোর বার্তা কুণালের

বাংলা হান্ট ডেস্কঃ এসএসসি, প্রাথমিক টেট সহ একাধিক নিয়োগ সংক্রান্ত দুর্নীতি মামলা, একইসঙ্গে আবার কয়লা থেকে গরু পাচার এবং সম্পত্তি বৃদ্ধি সংক্রান্ত দুর্নীতি; সবমিলিয়ে বর্তমান সময়টা কিছুতেই ভালো যাচ্ছে না শাসক দলের। একের পর এক দুর্নীতি মামলা সামনে উঠে আসে জেরবার তৃণমূল কংগ্রেস (Trinamool Congress)। একাধিক নেতা মন্ত্রী গ্রেফতার হওয়ার পাশাপাশি দলের আরও বেশ কিছু কর্মীদের ওপরেও নজর রয়েছে তদন্তকারী অফিসারদের। এই পরিস্থিতিতে চাকরিপ্রার্থীদের আন্দোলনের পাশাপাশি শাসকের উপর ক্ষুব্ধ একটি শ্রেণীর মানুষ। অবশেষে এদিন বাংলার সকলের কাছে ক্ষমা চেয়ে ভুল সংশোধনের প্রতিজ্ঞা নিলেন তৃণমূল কংগ্রেস নেতা কুণাল ঘোষ (Kunal Ghosh)। কুণালের দাবি, “দুর্নীতির কারণে বর্তমানে তৃণমূল দলে যে সঙ্কট তৈরি হয়ে চলেছে, তা অতি দ্রুত কাটিয়ে উঠবে তৃণমূল। যত শীঘ্র সম্ভব, সমস্যার সমাধান করা হবে।”

উল্লেখ্য, সম্প্রতিক সময়ে একের পর এক দুর্নীতি মামলা উঠে আসায় ক্রমশ দেওয়ালে পিঠ থেকে চলেছে তৃণমূল কংগ্রেসের। সিপিএম, কংগ্রেস এবং বিজেপির মতো বিরোধী দলগুলি একের পর এক কটাক্ষ ছুড়ে দিয়েছে। নেতা মন্ত্রীদের পাশাপাশি তৃণমূলের শীর্ষ নেতৃত্ব দুর্নীতিতে জড়িত বলে অভিযোগ বিরোধীদের। এদিন অবশেষে তাদের সেই সকল অভিযোগ উড়িয়ে দিয়ে দলের আসল ‘উদ্দেশ্য’ খোলসা করলেন কুণালবাবু একই সঙ্গে ‘নতুন তৃণমূল’ প্রসঙ্গে গুরুত্বপূর্ণ মন্তব্য করেন তিনি।

এসএসসি মামলায় সম্প্রতি ইডির হাতে গ্রেফতার হয়েছেন পার্থ চট্টোপাধ্যায়। পরবর্তীতে তাঁকে দল থেকে বহিষ্কার করা হয়। তার কিছুদিন পরেই আবার গরু পাচার মামলায় গ্রেফতার হন অনুব্রত মণ্ডল। শুধু চাই নয়, পাশাপাশি শিক্ষার সঙ্গে জড়িত একাধিক আধিকারিক এবং তৃণমূল কংগ্রেস বিধায়ক মানিক চট্টোপাধ্যায়ও বর্তমানে তদন্তকারী অফিসারদের নজরে রয়েছেন। এই পরিস্থিতিতে একদিকে যখন চাকরিপ্রার্থীরা ক্রমশ আন্দোলন করে চলেছে, তো অপরদিকে আবার সরকারের বিরুদ্ধে ক্ষুব্ধ রয়েছে অসংখ্য মানুষ আর সেই ক্ষোভ আঁচ করতে পেরেই বর্তমানে ড্যামেজ কন্ট্রোলে নেমেছে তৃণমূল নেতৃত্ব।

উল্লেখ্য, চাকরিপ্রার্থীদের সঙ্গে বৈঠকে বসেছেন অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়, কুণাল ঘোষ এবং ব্রাত্য বসুরা। সেই প্রসঙ্গ উল্লেখ করেই এদিন কুণাল ঘোষ বলেন, “স্কুল সার্ভিস কমিশন সহ অন্যান্য একাধিক ক্ষেত্রে দুর্নীতির অভিযোগ ওঠার কারণে দলের মধ্যে একটা সঙ্কট তৈরি হয়েছে। তবে আমরা দ্রুত সমস্যা সমাধান করে ঘুরে দাঁড়াবো। আমাদের দলের একটি ক্ষুদ্র অংশের ভুলের কারণে অস্বস্তিকর পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে। এটা সঠিক। বেশ কয়েকটি জিনিস ভুল হয়েছে। এ কারণে অসংখ্য তরুণ তরুণী বিপদের মুখোমুখি হয়ে চলেছে। তবে ভুলগুলি সংশোধন করে কিভাবে সমস্যার সমাধান করা যায়, যাতে সাধারণ মানুষ থেকে শুরু করে চাকরিপ্রার্থীরা তাদের কাজ পান, সেই বিষয়টি ভাবা হয়ে চলেছে। এই প্রসঙ্গে আমরা একাধিক বৈঠক করেছি। অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় থেকে ব্রাত্য বসুরা চাকরিরপ্রার্থীদের সঙ্গে বৈঠকে বসেছেন।”

একইসঙ্গে চাকরিপ্রার্থী প্রসঙ্গে কুণাল বলেন, “ওদের কষ্ট আমি বুঝি। দীর্ঘদিন ধরে আন্দোলন করে চলেছে। তবে আমরা দ্রুত এই সমস্যার সমাধানের রাস্তা খুঁজজি। প্রাথমিক শিক্ষা পর্ষদের সভাপতি পদে গৌতম পালকে নিয়ে আসা হয়েছে। উনিও ইতিমধ্যে কাজ শুরু করে দিয়েছেন। আমাদের দল ঘুরে দাঁড়ানোর চেষ্টায় রয়েছে।”

এদিন সিপিএম এবং বিজেপির মতো বিরোধী দলগুলিকে কটাক্ষ করেন তৃণমূল কংগ্রেস নেতা। তিনি বলেন, “বাম জমানায় একাধিক দুর্নীতি হয়েছে। বর্তমানে বিজেপি দলের অনেকেই কল্যাণী এইমসের চাকরি পেয়েছে। অতীতে এ ঘটনা ঘটেছে। তবে আমাদের উচিত, বর্তমানে ভুল সংশোধন করে সমাধানের রাস্তা বের করা। যে দুর্নীতির ঘটনা বর্তমানে ঘটে চলেছে, তাতে দল কিংবা মুখ্যমন্ত্রী কোনভাবেই অনুমোদন দেননি।”

Kunal

একইসঙ্গে এদিন কুণাল ঘোষের গলায় উঠে আসে ‘নতুন তৃণমূল’ প্রসঙ্গ। সম্প্রতি কলকাতার একটি বিশাল অংশে অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের ছবি সহ একটি ব্যানার দেওয়া হয়, যেখানে লেখা থাকে, “আগামী ছয় মাসের মধ্যে সামনে আসবে নতুন তৃণমূল।” এরপরই নয়া তৃণমূল প্রসঙ্গে একাধিক কিছু জল্পনার সৃষ্টি হয়। এ প্রসঙ্গে তৃণমূল নেতার দাবি, “আসলে ২০১১ সালের তৃণমূলে ফিরিয়ে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করা হচ্ছে। সেই সময় আমরা মানুষের মধ্যে আশা এবং বিশ্বাস জন্ম দেওয়ার মাধ্যমে ক্ষমতায় এসেছিলাম। সেই তৃণমূলকে ফেরানোর উদ্দেশ্যেই নতুন তৃণমূল প্রসঙ্গটিকে সামনে আনা হয়েছে।”

Sayan Das

সম্পর্কিত খবর