বাংলাহান্ট ডেস্ক: সোনার কেল্লা (Sonar Kella), বাংলা চলচ্চিত্রের ইতিহাসে ক্লাসিক সৃষ্টিগুলির মধ্যে অন্যতম। এই ছবির মাধ্যমেই বাঙালি পেয়েছিল ‘ফেলুদা’ সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়কে। আট থেকে আশি সবার জন্যই ছবিটি বানিয়েছিলেন সত্যজিৎ রায় (Satyajit Roy)। ছবিতে জাতিস্মর মুকুলের চরিত্রে অভিনয় করেছিলেন কুশল চক্রবর্তী (Kushal Chakraborty)। সম্প্রতি ‘দাদাগিরি’তে এসে প্রবাদপ্রতিম পরিচালকের সঙ্গে কাজ করার অভিজ্ঞতা শেয়ার করেন অভিনেতা।
রবিবার ‘দাদাগিরি’র পর্বে খেলতে এসেছিল সিরিয়াল ‘সর্বজয়া’র কলাকুশলীরা। সিরিয়ালে সর্বজয়া ওরফে দেবশ্রী রায়ের স্বামী সঞ্জয়ের চরিত্রে অভিনয় করছেন কুশল। সোনার কেল্লার সেই ছোট্ট মুকুলকে সামনে পেয়েই ছবিতে কাজ করার অভিজ্ঞতা জিজ্ঞাসা করেন সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়।
সোনার কেল্লা ছবিতে অভিনয়ের সময়ে কুশলের বয়স ছিল মোটে পাঁচ বছর। তাঁর বাবা থিয়েটারের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। তিনিই ছেলেকে নিয়ে গিয়েছিলেন সত্যজিৎ রায়ের সঙ্গে দেখা করাতে। ওই বয়সেই থিয়েটারের প্রতি আগ্রহ ছিল কুশলের।
থিয়েটার দেখতে ভালোবাসতেন তিনি। কিন্তু অভিজ্ঞ পরিচালক ভেবেছিলেন, তাঁর সামনে বলার জন্য ছেলেকে আগে থেকেই শিখিয়ে নিয়ে এসেছেন বাবা। তাই যখন তিনি শোনেন যে কুশল অভিনয় করেও দেখাতে পারবেন, তখন বেশ অবাকই হয়েছিলেন সত্যজিৎ। পরিচালকের সামনে চেয়ারে বসে থিয়েটারের দৃশ্যে অভিনয় করে দেখিয়েছিলেন পাঁচ বছর বয়সী কুশল।
এর কয়েক মাস পর তাঁর বাবার কাছে একটি চিঠি আসে। প্রেরক স্বয়ং সত্যজিৎ রায়। সোনার কেল্লা ছবিতে মুকুলের চরিত্রে কুশলের অভিনয় ক্ষমতাকে কাজে লাগাতে চেয়েছিলেন তিনি। তাই যদি কোনো অসুবিধা না থাকে তাহলে ছেলেকে নিয়ে তাঁর সঙ্গে দেখা করতে বলেছিলেন সত্যজিৎ।
ছবির শুটিংয়ের সময়কারও কিছু স্মৃতি এদিন শেয়ার করেন কুশল। কলকাতা ও রাজস্থান মিলিয়ে শুট হয়েছিল। রাজস্থানে যখন শুটিং হয় তখন শীতকাল। সবাই সোয়েটার, মাংকি ক্যাপ পরে শুট করেছেন। এদিকে কলকাতায় শুট করতে গিয়েই মাথায় হাত সবার।
কলকাতায় তখন গরমকাল চলছে। এদিকে ধারাবাহিকতা বজায় রাখতে শীতের পোশাক পরেই শুট করতে হচ্ছে। কুশল বলেন, তিনি তখন ছোট থাকায় অতকিছু বুঝতে পারেননি। কিন্তু বড় বড় অভিনেতারা রীতিমতো ক্ষেপে উঠেছিলেন শুট করতে গিয়ে।
সত্যজিতের ছবি, সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়, সন্তোষ দত্ত সহ তাবড় তাবড় সব অভিনেতাদের সঙ্গে স্ক্রিন শেয়ার করা! ভয় করেনি? সৌরভের প্রশ্নে কুশল বলেন, সত্যজিৎ রায় শিশুশিল্পীদের দিয়ে সঠিক অভিনয়টা করিয়ে নিতে পারতেন। এই প্রসঙ্গে একটি ঘটনার কথা উল্লেখ করেন তিনি।
ছবির শেষের দিকে সোনার কেল্লার মধ্যে মুকুলের কাঁদার একটি দৃশ্য ছিল। সেটি কিন্তু রাজস্থানে নয়, শুট হয়েছিল কলকাতায়! এমন বড় মাপের একজন পরিচালক ছোট্ট কুশলকে বলেছিলেন, কলকাতায় সোনার কেল্লার সেট আপ বানাতে তাঁর ১৫-২০ হাজার টাকা খরচ পড়বে।
কুশল ঠিক অভিনয়টা করতে পারবে তো? তবেই তিনি দৃশ্যটা নিয়ে এগোবেন। একজন শিশুশিল্পীকেও এভাবেই তার গুরুত্ব বোঝাতেন সত্যজিৎ। কুশল বলেন, “এখন বলতে গেলে হাত পা ঠাণ্ডা হয়ে যেত। কিন্তু তখন বলেছিলাম, হ্যা পারব। তুমি বানাও।”