বাংলা হান্ট ডেস্ক: ইউক্রেনের ওপর রাশিয়ার ক্রমাগত হামলায় বিধ্বস্ত সে দেশ। পাশাপাশি, এই যুদ্ধের প্রত্যক্ষ প্রভাব পড়েছে ভারতেও। ইউক্রেনে মেডিক্যাল পড়তে যাওয়া ভারতীয় পড়ুয়াদের দেশে ফেরানোটাই বর্তমানে ভারতের কাছে বিরাট চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে। যদিও, ঝড়ের গতিতে উদ্ধার কাজ চালানো হচ্ছে সরকারের তরফে।
ইতিমধ্যেই “অপারেশন গঙ্গা”-র মাধ্যমে ভারত এই উদ্ধার অভিযান জোরদার করেছে। এর পাশাপাশি, ভারত আবারও প্রমাণ করেছে যে ভারতীয়দের নিরাপত্তা দেশের জন্য সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার ছিল, আছে এবং থাকবে। তবে এই উদ্ধার অভিযান যতটা সহজ মনে হচ্ছে বিষয়টা অতটাও সহজ নয়। বরং ক্রমাগত যুদ্ধের আবহে ইউক্রেনের আকাশসীমা সম্পূর্ণ বন্ধ থাকায় প্রতিবেশী দেশ হাঙ্গেরি, স্লোভাকিয়া, পোল্যান্ড ও রোমানিয়া থেকে বিমান চালানো হচ্ছে।
ভারতীয় বিদেশ মন্ত্রকের মতে, “অপারেশন গঙ্গা”-র অধীনে ৮ মার্চ পর্যন্ত মোট ৪৬ টি বিমানের উড়ানের পরিকল্পনা করা হয়েছে। যেগুলি সেখানে আটকা পড়া প্রায় ১৮ হাজার ভারতীয়কে নিরাপদে দেশে ফিরিয়ে নিয়ে আসবে। তবে বিদেশ মন্ত্রক এর আগেও এইরকমই বড় উদ্ধার অভিযান একাধিকবার সম্পন্ন করেছে। চলুন বিস্তারিত জেনে নেওয়া যাক দেশের সবচেয়ে বড় পাঁচটি উদ্ধার অভিযান সম্পর্কে:
১. বন্দে ভারত মিশন:
করোনা মহামারীর মধ্যে বিদেশে আটকে পড়া ভারতীয়দের ফিরিয়ে আনার জন্য এই মিশনটি ২০২০ সালে শুরু হয়েছিল। এটি অন্য যে কোনো দেশের উদ্ধার অভিযানের চেয়ে অনেক বড় উদ্ধারকার্যের ঘটনা হিসেবে বিবেচিত হয়। ২০২০ সালের মে মাসে শুরু হওয়া এই অপারেশনের মাধ্যমে, ১৫ টির বেশি ধাপে ১৮ লক্ষেরও বেশি নাগরিককে দেশে ফিরিয়ে আনা হয়। এই মিশনটি ২০২১ সাল পর্যন্ত স্থায়ী হয়েছিল। পাশাপাশি, এই অভিযানে শুধু বিমানই নয়, বরং নৌবাহিনীর জাহাজগুলিও ৩,৯৮৭ জন ভারতীয়কে দেশে ফিরিয়ে আনতে সাহায্য করে। ২০২১ সালের আগস্ট মাসের মধ্যে, প্রায় ৩০,০০০ বিমান এই মিশনের অংশ হয়ে ওঠে।
২. অপারেশন রাহাত:
২০১৫ সালের এপ্রিল মাসে ইয়েমেন সরকার এবং হুথি বিদ্রোহীদের মধ্যে সংঘর্ষ শুরু হয়। এমতাবস্থায়, বোমা হামলা ও যুদ্ধের আবহে আটকে পড়েন বহু ভারতীয়। এরপর ভারত তার নাগরিকদের ফিরিয়ে আনতে “অপারেশন রাহাত” শুরু করে। ওই অভিযানে সরকার ইয়েমেন থেকে ৬,৬৮৮ জনকে সরিয়ে আনতে সক্ষম হয়। যার মধ্যে ৪,৭৪১ জন ভারতীয় এবং ১,৯৪৭ জন বিদেশী ছিলেন। আকাশ ও সমুদ্রপথে এঁদের ফিরিয়ে আনা হয়। এছাড়াও, ভারত সেই সময় ব্রিটেন, ফ্রান্স, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং পাকিস্তানের নাগরিকদের উদ্ধার করেছিল।
৩. অপারেশন মৈত্রী:
নেপালে ভয়াবহ ভূমিকম্পের জেরে “অপারেশন মৈত্রী” ছিল ভারত সরকার এবং ভারতীয় সশস্ত্র বাহিনীর একটি যৌথ ত্রাণ ও উদ্ধার অভিযান, যেখানে প্রায় ৫ হাজার ভারতীয়কে নেপাল থেকে বিমান বাহিনী এবং বেসামরিক বিমানে ফিরিয়ে আনা হয়। এছাড়াও, ভারতীয় বিমান বাহিনী, ভূমিকম্পের কয়েক মিনিট পর কাঠমান্ডুতে ত্রাণ সরবরাহ করতে শুরু করে। রিখটার স্কেলে ৭.৮ মাত্রার এই ভয়ঙ্কর ভূমিকম্পে ৮ হাজারেরও বেশি মানুষ নিহত হন। পাশাপাশি, ১৯৩৪ সালের পর এটি নেপালের সবচেয়ে মারাত্মক প্রাকৃতিক দুর্যোগ হিসেবে বিবেচিত হয়।
৪. কুয়েত এয়ারলিফট:
“বন্দে ভারত মিশন”-এর পর এটি ছিল ভারত সরকারের দ্বিতীয় বৃহত্তম উদ্ধার অভিযান। এটি কুয়েতে ইরাকের আক্রমণের পর ১৯৯০ সালের আগস্ট থেকে অক্টোবরের মধ্যে চালু করা হয়েছিল। যার অধীনে, প্রায় ১ লক্ষ ৭৫ হাজার মানুষকে উদ্ধার করতে এয়ার ইন্ডিয়ার এবং অন্যান্য বিমান মোতায়েন করা হয়। এত বিপুল সংখ্যক মানুষকে এয়ারলিফ্ট করার জন্য এয়ার ইন্ডিয়ার (রেসকিউ অপারেশন ইন্ডিয়া) এই অপারেশনের নাম “গিনেস বুক অফ ওয়ার্ল্ড রেকর্ড”-এ নথিভুক্ত করা হয়েছে।
৫. অপারেশন হোম কামিং:
২০১১ সালে লিবিয়ায় গৃহযুদ্ধ শুরু হয়। লিবিয়ার কর্নেল গাদ্দাফি এবং তাঁর বিরোধীদের মধ্যে সংঘর্ষে বেশ কিছু ভারতীয় আটকা পড়েন। সেই সময় ১৫ হাজার ৪০০ জনেরও বেশি ভারতীয় নাগরিককে উদ্ধারের জন্য “অপারেশন হোম কামিং” অভিযান শুরু হয়েছিল। এই অভিযানে লিবিয়ার কাছে মিশর এবং মাল্টা থেকে নয়টি বিশেষ বিমানে ভারতীয়দের দেশে ফিরিয়ে আনা হয়। পাশাপাশি, উদ্ধার অভিযানে ভারতীয় নৌবাহিনীর সহায়তাও নেওয়া হয়।