বাংলাহান্ট ডেস্ক : দেখতে দেখতে কেটে গিয়েছে ২০টা বছরেরও বেশি সময়। আসানসোলের (Asansole) কুলটির বেনাগ্রাম ছেড়ে চলে যান বাসিন্দারা। তারপর থেকেই গ্রাম জনশূন্য। সেই থেকেই এ গ্রামে কোনও মানুষের বসবাস নেই। তবে বছরের বিশেষ একটা দিন এ গ্রাম শোনা যায় মানুষের কণ্ঠস্বর। শুনতে পাওয়া যায় হাসি, হইচই, হুল্লোড়।
এই দিনটার পরিবেশই যেন বদলে যায়। ঢাক তালে তালে বাজে শঙ্খ-কাঁসর। ধূপ-ধুনোর গন্ধে ভরে ওঠে বাতাস। কারণ, ওই বিশেষ দিনটা যে লক্ষ্মী পূজা। সেই দিনটায় মা লক্ষ্মী আসেন বেনাগ্রামে ঘরে ঘরে। আর এই লক্ষ্মী পূজার টানেই ঘরে ফেরেন গ্রামছাড়া মানুষগুলি। কোজাগরীর সন্ধ্যায় আনন্দ উৎসবে মেতে ওঠেন সকলে। এই দিনটায় বোঝার উপায়ও নেই কি মারাত্মক ভয়ংকর গ্রাম এটি!
রবিবার রাতেও দেখা গেল সেই দৃশ্য। ধুমধাম করে করা হল লক্ষ্মীপুজো। কুলটির এই বেনাগ্রামে কোজাগরী লক্ষ্মী পুজো নিয়ে সকাল থেকেই চলে হইহই। এ বছর যদিও ছোট্ট একটু বদল এসেছে। এই গ্রামে বিদ্যুৎ নেই। মানুষ থাকে না, তাই বিদ্যুতেরও প্রয়োজনও কারুর হয়নি। তবে এবার বিদ্যুৎ গ্রামের এতটাই কাছে চলে এসেছে যে, সেখান থেকেই তার টেনে আলো জ্বলে উঠেছে লক্ষ্মী মণ্ডপে। ঝকঝকে আলোয় দিনের মতো পরিস্কার সব কিছু। পাকা রাস্তা তৈরি হয় বছর ছ’য়েক আগেই। বিদ্যুতের খুঁটিও বসানো হয়। তবে পরিকাঠামো না থাকায় গ্রামের মানুষ আর ফিরে আসতে চাননি বেনাগ্রামে। তবে পাকাপাকিভাবে না এলেও লক্ষ্মী পূজা উপলক্ষে হাজির হন সকলে।
এবার লক্ষ্মীপুজোয় চর্চার মধ্যেই প্রশ্ন উঠেছে পরিত্যক্ত বাড়িগুলিকে যদি পর্যটনের জন্য ব্যবহার করা হয়, যদি এখানে ‘ডার্ক টুরিজম’ গড়ে তোলা হয়, তাহলে কি গ্রামের মানুষজন সহযোগিতা করবেন? বছর ২০ আগে যখন এখানকার মানুষ গ্রাম ছেড়ে পালিয়ে যান, তখন রটে যায় এ গ্রামে নাকি ভূত আছে। আর এই ভূতের উপদ্রবেই নাকি ফাঁকা বেনাগ্রাম। ভিটেমাটি সবই রয়েছে। নেই শুধ তার মালিকরা। তবে আশপাশের এলাকার লোকজনের কেউ কেউ বলেন, ভূত আবার কী? দুষ্কৃতীদের দৌরাত্ম্যেই মানুষ চলে গেছেন গ্রাম ছেড়ে। রহস্যের কিনারা হয়নি আজও।
বেশ কিছু দিন আগেই কুলটির বেনাগ্রামে ডার্ক টুরিজম বা হরর থিম পার্ক তৈরি করা যেতে পারে। এমন পরিকল্পনার করেন শ্যামাপ্রসাদ মুখোপাধ্যায় রিসার্চ ফাউন্ডেশনের ডিরেক্টর ডক্টর অনির্বাণ গঙ্গোপাধ্যায়। এই কথা তিনি জানিয়েও ছিলেন সংবাদমাধ্যমকে। আসানসোলের প্রাক্তন মেয়র তথা বিজেপি নেতা জিতেন্দ্র তিওয়ারিকে সঙ্গে নিয়ে রাতের অন্ধকারে সেই গ্রাম ঘুরেও দেখেন দেখেন তিনি।