১৯৬৫-র যুদ্ধে পাকিস্তানের স্বপ্নে জল ঢেলে দিয়েছিলেন প্রধানমন্ত্রী লাল বাহাদুর শাস্ত্রী

বাংলা হান্ট ডেস্কঃ ২ অক্টোবর ভারতে (India) গান্ধী জয়ন্তী ছাড়াও দেশের দ্বিতীয় প্রধানমন্ত্রী লাল বাহাদুর শাস্ত্রীর (Lal Bahadur Shastri) জয়ন্তী হিসেবেও উৎসব পালিত হয়। লাল বাহাদুর শাস্ত্রী ১৯০৪ সালে জন্মগ্রহণ করেছিলেন। সাহস আর কাজ করার দক্ষতার জন্য উনি সবসময়ই ভারতীয়দের প্রিয় প্রধানমন্ত্রীর তালিকায় জায়গা করে নিয়েছেন। ১৯৬২ সালে ভারত যখন চিনের (China) সঙ্গে যুদ্ধে পরাজিত হয়, তখন পাকিস্তানের (Pakistan) মনে ভ্রান্ত ধারণা সৃষ্টি হয়েছিল যে, ভারতের এখন আর সেই শক্তি নেই। আর এই ধারণার উপর ভর করেই পাকিস্তান ১৯৬৫ সালে ভারতে হামলা করে। সেই সময় ভারতের প্রধানমন্ত্রী ছিলেন লাল বাহাদুর শাস্ত্রী। আর ওনার রণনীতির কারণেই পাকিস্তান যুদ্ধে মুখ থুবড়ে পরে। বলে দিই, ১৯৬৪ সালের ৯ জুন লাল বাহাদুর শাস্ত্রী দেশের প্রধানমন্ত্রী রূপে শপথ নিয়েছিলেন।

১৯৬২ সালে চিন-ভারতের যুদ্ধ হয়েছিল, সেই সময় ভারতকে হারের সম্মুখীন হত হয়। আর এই কারণে পাকিস্তান ভারতের এই হারকে নিজেদের আগামী জয় বলে ভাবতে শুরু করে। পাকিস্তানের আয়ুব খান সরকার সেই সুযোগের ফায়দা নেওয়ার জন্য তৎপর হয়ে উঠেছিল।

১৯৬৫ সালে পাকিস্তানের রাষ্ট্রপতি ছিলেন আয়ুব খান। সেই সময় তিনি অপারেশন জিব্রাল্টারের মাধ্যমে ভারতীয় সেনার কমিউনিকেশন লাইনকে ধ্বস্ত করার কামনায় কাশ্মীরে হাজার হাজার সৈনিক পাঠান। শুধু তাই নয়, মুসলিমদের নিজেদের দিকে করতে তাঁরা ভারতীয় সেনার ভূমিতে কবজা জমানোর দাবিও করে। কিন্তু পাকিস্তানের এই মনস্কামনা পূর্ণ হয়নি।

lalbagadur 759

ভারতীয় সেনাকে পাকিস্তানি ফৌজের অনুপ্রবেশ করার সূচনা কাশ্মীরের কৃষক আর গুজ্জর পশুপালকরা মিলে দেয়। আর এরপরেই পাকিস্তানের বাজি উল্টো পড়ে যায়। আয়ুব খানের অপারেশন জিব্রাল্টার মাটিতে মিশে যায়। সেই সময় ভারতীয় সেনা ভারতের প্রধানমন্ত্রী লাল বাহাদুর শাস্ত্রীর দ্বারা দেওয়া নির্দেশের পালন করে পাকিস্তানকে মোক্ষম জবাব দেয়। ভারতীয় সেনা পাঞ্জাবের আন্তর্জাতিক সীমা অতিক্রম করে পাকিস্তানে ঢুকে দুই দিক থেকে হামলা করে।

পাকিস্তানের রাষ্ট্রপতি জেনারেল আয়ুব খানের দ্বিতীয় সবথেকে বড় ভুল ছিল অপারেশন গ্র্যান্ড স্ল্যাম। এই অপারেশনে পাকিস্তানের ট্যাঙ্ক আর পদাতিক সেনাকে কিছু নির্দেশ দেওয়া হয়। সেই নির্দেশ ছিল, ছাম্ব-জোরিয়ান অতিক্রম করে আখনুরে কবজা করা। এই অপারেশনের মাধ্যমে তাঁরা জম্মু-কাশ্মীর দখল করার স্বপ্ন দেখছিল। এছাড়াও ভারতীয় সেনার যোগাযোগ এবং সাপ্লাই লাইন ধ্বংস করারই ছিল তাঁদের মূল উদ্দেশ্য।

কিন্তু লাল বাহাদুর শাস্ত্রীর রণনীতি আর ভারতীয় সেনার দক্ষতার কারণে পাকিস্তানের স্বপ্ন অধরা থেকে যায়। পাক জওয়ানরা উল্টো পায়ে তাঁদের অভিযান ছেড়ে পালায়। ইতিহাসে এমন প্রথমবার হয়েছিল যে, যখন ভারতীয় সেনা শুধু সীমান্ত অতিক্রম করে ক্ষান্ত থাকেনি, তাঁরা মেজর প্রসাদের নেতৃত্বে লাহোরে পর্যন্ত হামলা করে দিয়েছিল। তবে এই অভিযানের শুরুতে পাকিস্তানি সেনা কিছুটা সফল হয়েছিল। সেই সময় আয়ুব খান একটি বয়ান জারি করে বলেছিলেন, ‘আমরা আমদের দাঁত শত্রুদের মাংসপিণ্ডে গেঁড়ে দিয়েছি। অনেক গভীরে কামড় দয়েছি। অনেক রক্তও বেরিয়েছে।”

2 09 41 36 indpak1965 1 H@@IGHT 420 W@@IDTH 802

কিন্তু সেই সময় আয়ুব খান একটি বড় ভুল করে ফেলেন। তিনি পাকিস্তানের পদাতিক সেনার কমান্ডে কিছু বদলের নির্দেশ দেন। তিনি সেই সময় জিওসিকে বদলে জেনারেল ইয়াহিয়া খানকে দায়িত্ব দেন। বদলের কারণে সেনায় বড়সড় প্রভাব পড়ে। আর একদিন তাঁদের কোনও কাজ হয়না। তখন ভারতীয় সেনা নিজেদের শক্তিশালী করার সময় পেয়ে যায়। আর পাকিস্তানকে মোক্ষম জবাব দেয়।

বলতে গেলে লাল বাহাদুর শাস্ত্রী অহিংসার পথেই চলতেন। কিন্তু নিজের মাতৃভূমির রক্ষার জন্য তিনি সবরকম পদক্ষেপ নেওয়ার জন্য প্রস্তুত ছিলেন। আর মাতৃভূমির রক্ষার জন্য শত্রুকে ধ্বংস করারও নির্দেশ দিয়েছিলেন তিনি।

 

Koushik Dutta

সম্পর্কিত খবর