বাংলা হান্ট ডেস্ক: সুষ্ঠুভাবে জীবনযাপনের জন্য অর্থের রোজগার সবারই প্রয়োজন। কিন্তু, সবার ক্ষেত্রে এই রোজগারের পরিমান সমান হয়না। এদিকে, করোনার মত ভয়াবহ মহামারীর ফলে বহু মানুষের চাকরি একধাক্কায় চলে যাওয়ায় জীবনধারণ যে কতটা কঠিন হতে পারে তা সুস্পষ্টভাবে পরিলক্ষিত করেছি আমরা। তবে, অনেকেই আবার এই চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হয়ে তৈরি করেছেন নতুন আয়ের উৎসও।পাশাপাশি, মহামারীর সময়ে জারি হওয়া লকডাউনকে কাজে লাগিয়েও অনেকে শুরু করেছে নতুন পথচলা। যার প্রকৃষ্ঠ উদাহরণ হল ১৫ বছরের অমর প্রজাপতি। উত্তরপ্রদেশের গোরক্ষপুরের এই বালক এক অনন্য উপায়ে ধীরে ধীরে পৌঁছে যাচ্ছে তার সফলতার দিকে।
মূলত, সে একটি স্টার্ট-আপ শুরু করেছিল। আর তার সাহায্যেই সে এখন করে দিচ্ছে কর্মসংস্থানের সুযোগও। বর্তমান প্রতিবেদনে আমরা অমরের সেই অভূতপূর্ব উদ্যোগের কথাই উপস্থাপিত করব। অমর বর্তমানে একটি স্থানীয় প্রাইভেট স্কুলে নবম শ্রেণির ছাত্র। ২০২০ সালে “জীবন প্রকাশ ইন্ডাস্ট্রিজ প্রাইভেট লিমিটেড” নামে একটি স্টার্ট-আপ শুরু করে সে। যার অধীনে বিভিন্ন ধরণের এলইডি বাল্ব তৈরি করা হয়।
বেকার শ্রমিকদের অনুপ্রেরণা:
এই প্রসঙ্গে অমর জানায়, “করোনা মহামারীর ভয়াবহতার পরিপ্রেক্ষিতে ২০২০-র মার্চ মাসে হঠাৎ করে লকডাউন জারি করা হয়। এই কারণে হাজার হাজার মানুষ তাঁদের ঘরবাড়ি ছেড়ে অন্যত্র আটকা পড়েন। সবচেয়ে কঠিন অবস্থা ছিল শ্রমিকদের, কারণ তাঁদের আয়ের কোনো উৎস ছিল না। তাই আমরা সেইসব মানুষকে সাহায্য করার জন্য কিছু শুরু করার সিদ্ধান্ত নিই।”অমর আরও জানায়, “আমি ইলেকট্রনিক্স খুব পছন্দ করি। তাই আমি এই সম্পর্কিত কিছু শুরু করতে চেয়েছিলাম। আমি দেখেছি যে এলইডি বাল্বের সাথে সম্পর্কিত সংস্থাগুলি এখন খুব ভাল করছে। সেজন্য আমিও এলইডি বাল্বের ব্যবসা শুরু করি।”
বাবা পূর্ণ সমর্থন দিয়েছেন:
অমর জানিয়েছে যে, এই ব্যবসা শুরু করার জন্য তার বাবা রমেশ প্রজাপতি তাকে অনেক অনুপ্রাণিত করেছিলেন। তার বাবা গোরক্ষপুর ইন্ডাস্ট্রিয়াল ডেভেলপমেন্ট অথরিটির (GIDA) ক্যাশিয়ার। রমেশ প্রজাপতি তাঁর ছেলেকে এলইডি বাল্ব তৈরির প্রশিক্ষণ দেন। এজন্য তিনি অমরকে এক বন্ধুর বাড়িতে পাঠান। তারপর দিল্লি থেকে কাঁচামাল আমদানি করে ২০২০ সালের সেপ্টেম্বরে এই কোম্পানি শুরু করা হয়।
১৫ টিরও বেশি ধরণের বাল্ব তৈরি করা হয়:
এই প্রসঙ্গে অমর জানিয়েছে, “আমি মাত্র দু’লক্ষ টাকা দিয়ে এলইডি বাল্বের ব্যবসা শুরু করেছি। এখনও পর্যন্ত খরচ হয়েছে ২০ লক্ষ টাকা। তবে, ইতিমধ্যেই আমরা ১৫ লক্ষ টাকা লাভ করেছি। আমরা নিশ্চিত ভবিষ্যতে আমাদের লাভের অঙ্ক আরও বাড়বে। বর্তমানে ১৫ টিরও বেশি ধরণের বাল্ব তৈরি করি আমি। যা বাজারের তুলনায় কম দামের পাশাপাশি কম বিদ্যুৎও খরচ করে।” অমর প্রথমে তার বাড়ি থেকে এলইডি বাল্বের ব্যবসা শুরু করলেও পরিধি বাড়তে থাকায় বাড়ির পাশের একটি কক্ষ ভাড়া নেয়।
কিভাবে LED বাল্ব ব্যবসা করবেন:
অমর জানিয়েছে, “বর্তমানে আমার দলে চারজন কাজ করছেন। যার মধ্যে একজন ম্যানেজার, দু’জন কারিগর এবং একজন বিপণন পরিচালনা করছেন। আমরা আমাদের তৈরি এলইডি বাল্ব স্থানীয় দোকানদারদের কাছে বিক্রি করি। আমরা আগে দোকানদারদের কাছ থেকে ৭০ শতাংশ টাকা নিয়ে থাকি এবং বাকিটা বাল্ব বিক্রির পর নিই। আমাদের লাভের পরিমাণ খুবই কম রেখেছি। আর এই কারণেই আমরা দ্রুত বাজার দখল করতেও পেরেছি। উদাহরণস্বরূপ, বাজারে ৯ ওয়াটের এসি-ডিসি বাল্ব ৩০০-৩৫০ টাকায় পাওয়া যায়, কিন্তু আপনি আমাদের বাল্বটি ২৭০-২৭৫ টাকায় পাবেন।”
বাল্বের বৈশিষ্ট্য:
এই স্টার্ট-আপের অধীনে, অমর সাত ওয়াট থেকে শুরু করে ২০ ওয়াটের টিউব লাইট পর্যন্ত তৈরি করে। এই প্রসঙ্গে সে জানিয়েছে, “আমি ৭ ওয়াট এবং ৯ ওয়াটের বাল্বের উপর এক বছরের ওয়ারেন্টি দিই। অথচ, আজকের বাজারে মাত্র ৬ মাসের ওয়ারেন্টি পাওয়া যায়। একই সাথে, আমরা এমন একটি ৯ ওয়াটের বাল্ব তৈরি করেছি, যা বিদ্যুতের পাশাপাশি ব্যাটারিতেও চলে। এই বাল্বের ব্যাটারি লাইফ চার ঘণ্টা।” এছাড়াও, তারা এমন একটি বাল্ব তৈরি করেছে যাতে একটি সোলার প্যানেল রয়েছে এবং এটিকে রোদে রেখে দিলে বিদ্যুৎ না থাকলেও চার্জ করা যায়। পাশাপাশি, আরও বিভিন্ন ধরণের দৃষ্টিনন্দন বাল্বও তারা তৈরি করে।
অমর এই এলইডি বাল্বের ব্যবসাকে নিজের কেরিয়ারে পরিণত করতে চায়। এই প্রসঙ্গে তার বাবা রমেশ প্রজাপতি জানিয়েছেন, “অমর বরাবরই ইলেকট্রনিক্সের প্রতি আগ্রহী। এছাড়াও, সে সবসময় মানুষকে সাহায্য করতে চায়। করোনা মহামারীর সময় সে মানুষের জন্য কিছু করার সুযোগ খুঁজছিল এবং আমরা আমাদের ছেলেকে সমর্থন করেছি।”