বাংলা হান্ট ডেস্কঃ ২০১৯ সালের বিশ্বকাপের পর কেটে গিয়েছে প্রায় দু দুটি বছর। এর মাঝে যেহেতু করোনার কারণে কোনও আন্তর্জাতিক টুর্নামেন্ট ছিল না, তাই মুখোমুখি হতে পারেনি ভারত পাকিস্তান। কারণ রাজনৈতিক কারণে এই মুহূর্তে পাকিস্তানের সঙ্গে কোন ঘরোয়া সিরিজে অংশগ্রহণ করে না ভারত। ফলত দুই দেশের সমর্থকরাই এখন অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছে ২০২১ টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের জন্য। কারণ এই বিশ্বকাপে ভারত প্রথম ম্যাচেই ২৪ অক্টোবর মুখোমুখি হতে চলেছে পাকিস্তানের। এই দুই পড়শী দেশের মধ্যে ক্রিকেট নিয়ে উত্তেজনা চিরকালই চরমে। যে ম্যাচে ভারত-পাকিস্তান মুখোমুখি হয় তার থেকে বড় উত্তেজনাকর ম্যাচ খুব কমই আছে গোটা বিশ্বে।
আসুন আজ দেখে নেওয়া যাক আন্তর্জাতিক আইসিসি টুর্নামেন্টে খেলা ভারত পাকিস্তানের শ্রেষ্ঠ কয়েকটি ম্যাচ।
২০০৩ বিশ্বকাপে ভারত-পাকিস্তানঃ
সেবা সৌরভ গাঙ্গুলী দলের বিরুদ্ধে মাঠে নেমেছিল ইনজামাম-উল হকের দল। প্রথমে ব্যাট করে সঈদ আনোয়ারের দুর্দান্ত সেঞ্চুরির (১০১) দৌলতে ২৭৩ রান তুলেছিল পাকিস্তান। কার্যত মনে হয়েছিল ভারতের পক্ষে ম্যাচ জেতা ভীষণই কঠিন হয়ে দাঁড়াবে। কারণ পাক বোলিং ইউনিটে ছিলেন ওয়াসিম আক্রম, ওয়াকার ইউনুস, শোয়েব আকতারের মত মারাত্মক সব জোরে বোলাররা। কিন্তু দুর্দান্ত ইনিংস উপহার দেন শচীন, কার্যত এই ম্যাচে তিনি ছিলেন অন্য এক মেজাজে। তার ৯৮ এবং পরবর্তী ক্ষেত্রে দ্রাবিড় (৪৪) এবং যুবরাজের (৫০) দুরন্ত পার্টনারশিপের জেরে ছয় উইকেটে ম্যাচ জিতে নেয় ভারত।
বিশ্বকাপ ২০১১ ভারত-পাকিস্তানঃ
২০১১ সালে ফাইনালে শ্রীলঙ্কাকে হারিয়ে বিশ্বকাপ জিতে নিয়েছিল মহেন্দ্র সিংহ ধোনির টিম ইন্ডিয়া। কিন্তু ফাইনালের মতোই সেমিফাইনালটিও ছিল ভীষণ রকম গুরুত্বপূর্ণ। কারণ মুখোমুখি হয়েছিল দুই চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী ভারত এবং পাকিস্তান। ৩০ মার্চ মোহালির এই ম্যাচে টসে জিতে প্রথম ব্যাট করার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন মহেন্দ্র সিংহ ধোনি। এবারও দুরন্ত ইনিংস উপহার দেন লিটিল মাস্টার। সেঞ্চুরি না পেলেও তার ৮৫ রানের ইনিংসের দৌলতেই ২৬০ রানের বড় স্কোর খাড়া করে ভারত। ভালো যোগদান রেখেছিলেন সেওয়াগ (৩৮) এবং রায়নাও (৩৬)। জবাবে ব্যাট করতে নেমে মাত্র ২৩১ রানেই শেষ হয়ে যায় পাকিস্তানি ইনিংস। হাফ সেঞ্চুরি করে মিসবাহ লড়াই করলেও কার্যত কাজের কাজ করতে পারেননি তিনি।
আইসিসি চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি ২০১৭ঃ
২০০৭ টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের পর এবার ফের একবার আইসিসি চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির ফাইনালে পাকিস্তানের মুখোমুখি হয়েছিল বিরাট বাহিনী। তবে এবার অবশ্য ভারতকে হারিয়ে কিস্তিমাত করে পাকিস্তান। প্রথমে ব্যাট করে ফাখার জামানের দুর্দান্ত সেঞ্চুরি (১১৪) এবং আজহার আলী (৫৯) ও হাফিজের (৫৭) জোড়া হাফ সেঞ্চুরির দৌলতে ৩৩৮ রানের বড় স্কোর খাড়া করে পাকিস্তান। কার্যত ব্যাটিং করতে নেমে তাসের ঘরের মতই ধ্বসে পড়েছিল ভারতীয় দল। হার্দিক পান্ডিয়া একা হাতে ৭৬ রানের মারকুটে ইনিংস উপহার দিলেও হার বাঁচাতে পারেননি। শেষ পর্যন্ত লজ্জাজনক ১৫৮ রানের স্কোরেই শেষ হয়ে যায় ভারতীয় ইনিংস।
২০০৭ টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ ফাইনালঃ
ভারত পাকিস্তান এখনও পর্যন্ত আইসিসি টুর্নামেন্টে যত লড়াই করেছে, তার মধ্যে এই লড়াইটি যে শ্রেষ্ঠ এ নিয়ে কোন সন্দেহ নেই। একে তো টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের ফাইনাল, তার ওপর লড়াই গিয়েছিল একেবারে শেষ ওভার অবধি। যোগিন্দর শর্মার বলে শ্রীসান্থের সেই ক্যাচ এখনও হয়তো ভুলতে পারবেন না কোন ভারতীয় সমর্থকই। এদিনও টসে জিতে প্রথমে ব্যাটিং করার সিদ্ধান্ত নেন ধোনি। গৌতম গম্ভীর দুর্দান্ত ৭৫ রানের ইনিংস খেললেও মাত্র ১৫৭ রানই সংগ্রহ করতে সক্ষম হয়েছিল ভারতীয় দল। শুরুতে অবশ্য ইমরান নাজির ছাড়া অন্য কোন পাক ব্যাটসম্যানই সেভাবে আশা জাগাতে পারেনি। কিন্তু তারপর ম্যাচ ঘুরিয়ে দেন মিসবাহ-উল-হক। তার ইনিংসের সৌজন্যে একসময় মনে হচ্ছিল হয়তো এই লড়াই জিতে নেবে পাকিস্তান। কিন্তু অন্তিম সময়ে বড় ভুল করে বসেন মিসবাহ। যোগিন্দর শর্মার বল স্কুপ করতে গিয়ে শ্রীসান্থের হাতে ক্যাচ দেন তিনি। সাথে সাথেই ম্যাচ জিতে নেয় ধোনির ইয়াং ইন্ডিয়া।