পূর্ণতা পেল প্রেম! বিহারীবাবুকে বিয়ে করলেন জার্মান কনে, শুভেচ্ছার জোয়ার চারিদিকে

বাংলা হান্ট ডেস্ক: প্রেম এমনই একটি জিনিস যা কোনো বাধাই মানেনা। পাশাপাশি, দু’টি মনের মিলনই এখানে সবচেয়ে বেশি প্রাধান্য পায়। আর এই “মনের মানুষ”-কে বিয়ে করার মাধ্যমে জীবনসঙ্গীনী হিসেবে কাছে পেতে চান সকলেই। তবে, সম্প্রতি বিহারে এমন একটি ঘটনা ঘটেছে যা কার্যত হারিয়ে দিয়েছে গল্পের প্লটকেও! প্রেমের টানে সুদূর জার্মানি থেকে বিহারে পৌঁছে গিয়েছিলেন এক তরুণী। পাশাপাশি, বিহারের এক যুবককে বিয়ে করে তাঁরা তৈরি করলেন প্রেমের এক অনন্য উপাখ্যান।

বিহারের নওয়াদা জেলার নারহাট ব্লকের অধীনে বেরোটা নামে একটি ছোট গ্রাম রয়েছে। যেখানে সত্যেন্দ্র কুমার তাঁর পরিবারের সাথে থাকেন। সম্প্রতি এই গ্রামই একটি অনন্য বিয়ের সাক্ষী থেকেছে। যেখানে সেই গ্রামের যুবক এক জার্মান কন্যার সিঁথি রাঙিয়ে দিয়ে তাঁকে স্ত্রী’র মর্যাদা দিয়েছেন।

   

মূলত, জার্মানিতে বসবাসকারী লরিসা বেলগে এবং সত্যেন্দ্র কুমার একে অপরকে ভালোবাসতেন এবং দীর্ঘদিন ধরেই তাঁরা প্রেমের সম্পর্কে আবদ্ধ ছিলেন। তাই এই দম্পতি হিন্দু আচার-অনুষ্ঠানের মধ্য দিয়ে পরিবারের উপস্থিতিতে বিয়ে করার সিদ্ধান্ত নেন।

আসলে, ২০১৯ সালে সত্যেন্দ্র এবং লরিসার প্রথম দেখা হয়েছিল সুইডেনে। সেখানে তাঁরা দু’জনেই ক্যান্সার নিয়ে গবেষণার কাজ করছিলেন। সত্যেন্দ্র কুমার স্কিন ক্যান্সার নিয়ে গবেষণা করছিলেন, পাশাপাশি লরিসা গবেষণা করছিলেন প্রস্টেট ক্যান্সার নিয়ে। সেই সময় থেকেই এই দু’জন একে অপরের ভালো বন্ধু হয়ে ওঠেন, যা অচিরেই প্রেমে রূপান্তরিত হয়।

এভাবে দীর্ঘদিন প্রেমের বন্ধনে আবদ্ধ থাকার পর সত্যেন্দ্র ও লরিসা বিয়ে করার সিদ্ধান্ত নেন। কিন্তু, করোনা মহামারির কারণে বিয়ের পরিকল্পনায় কিছু পরিবর্তন আনতে হয়। কারণ লরিসার ভারতে আসার জন্য ভিসার প্রয়োজন ছিল। এদিকে, করোনার কারণে সেই ভিসা পেতেই সমস্যা হচ্ছিল তাঁর।

এমতাবস্থায়, সত্যেন্দ্র এবং লরিসা পরিস্থিতি স্বাভাবিক হওয়ার জন্য অপেক্ষা করেছিলেন, যাতে তাঁরা ধুমধাম করে বিয়ে করতে পারেন। যদিও, কিছুদিন পরেই, লরিসা একটি বিশেষ ভিসা পাওয়ার সাথে সাথে ভারতে এসে হিন্দু রীতি অনুসারে সত্যেন্দ্রকে বিয়ে করেন। তবে, লরিসার বাবা-মা ভিসা পেতে পারেননি। যার কারণে তাঁরা অংশ নিতে পারেননি এই বিবাহের অনুষ্ঠানে।

লরিসা হিন্দি বলতে এবং বুঝতে পারেন না। কিন্তু, তবুও তিনি ভারতীয় রীতি অনুযায়ী বিয়ে করতে আগ্রহী ছিলেন। এদিকে, সত্যেন্দ্রর বাবা-মা এবং পরিবারও লরিসাকে ভারতীয় বধূর মতো সাজাতে কোনো খামতি রাখেননি। লরিসার হিন্দু আচার-অনুষ্ঠান সম্পর্কে কোনো ধারণা না থাকলেও তিনি বিষয়টি বেশ উপভোগ করেন।

সত্যেন্দ্র কুমারের পরিবার লরিসার জন্য মেয়ের পক্ষের সমস্ত আচার-অনুষ্ঠান সম্পাদন করে। যার মধ্যে গায়ে হলুদ, মেহেন্দির পাশাপাশি স্নান এবং বর পূজার মতো আচারও অন্তর্ভুক্ত ছিল। তারপর, লরিসাকে একটি লেহেঙ্গা পরিয়ে ভারতীয় বধূর মতো সাজানো হয়।

সত্যেন্দ্র কুমার এবং লরিসার বিয়েতে পুরো বেরোটা গ্রামের মানুষ জড়িত ছিলেন। যার কারণে তাঁদের বিয়েটি নিঃসন্দেহে স্মরণীয় হয়ে উঠেছে। লরিসা ভারতীয় রীতিনীতিকে খুব ভালোবাসেন, পাশাপাশি তিনি ভারতীয় সংস্কৃতির সাথে খুব বেশি সংযুক্ত। তাই তিনি ভারতীয় রীতিনীতি অনুযায়ী সত্যেন্দ্রকে বিয়ে করার সিদ্ধান্ত নেন। যদিও ভারত ও জার্মানির সংস্কৃতি একে অপরের থেকে সম্পূর্ণ আলাদা।

MARRIAGE 4 1

একইসাথে সত্যেন্দ্রর বাবা-মা এবং পরিবারের সদস্যরা এই বিয়েতে খুব খুশি। অন্যদিকে বিয়েতে অংশ নেওয়া গ্রামবাসীরা বলছেন যে, পরিবর্তনশীল সময়ের সাথে সাথে নিজেকেও পরিবর্তন করতে হয়। লরিসা সাত সমুদ্র পাড়ি দিয়ে সত্যেন্দ্রকে বিয়ে করতে ভারতে আসতে পারলে, আমাদের সংস্কৃতি ও আচার-অনুষ্ঠানের সঙ্গে তাঁকে পরিচয় করিয়ে দেওয়া আমাদের ভারতীয়দেরও কর্তব্য। এদিকে, এই অনন্য বিয়ের প্রসঙ্গ সামনে আসতেই সকলেই শুভেচ্ছা জানিয়েছেন এই নবদম্পতিকে।

Sayak Panda
Sayak Panda

সায়ক পন্ডা, মেদিনীপুর কলেজ (অটোনমাস) থেকে মাস কমিউনিকেশন এবং সাংবাদিকতার পোস্ট গ্র্যাজুয়েট কোর্স করার পর শুরু নিয়মিত লেখালেখি। ২ বছরেরও বেশি সময় ধরে বাংলা হান্ট-এর কনটেন্ট রাইটার হিসেবে নিযুক্ত।

সম্পর্কিত খবর