বাংলা হান্ট ডেস্কঃ যতীন্দ্র রাজেন্দ্র মহাবিদ্যালয় থেকে ‘ব্যাচেলর’ ডিগ্রী এবং এরপর বাংলায় মাস্টার্স পাশ। পরবর্তীতে রাজ্য পুলিশ সহ ব্যাঙ্ক এবং রেলের একাধিক পরীক্ষায় পাশ করেও মেলেনি চাকরি! অবশেষে লটারি টিকিটের দোকান খুলে বসে পড়ল মুর্শিদাবাদের নওদা এলাকার বাসিন্দা তন্ময় চুনারি। দোকানের বাইরে লেখা এমএ পাশ লটারিওয়ালা তন্ময়।
ছোটবেলায় পড়াশোনা করতে একাধিক সমস্যার সম্মুখীন হতে হয় নওদার যুবককে। জানা গিয়েছে, সপ্তম শ্রেণীতে পড়াশোনা করার সময়ই মৃত্যু হয় তন্ময়ের পিতার। সেই সময় বাড়িতে মা, দাদা এবং বৌদি সহ নিজের পেট চালানোর জন্য ছোট বয়সেই সাইকেলের দোকানে কাজ নিতে হয় তাকে। সেই সময় স্কুল ছেড়ে দিলেও পরবর্তীকালে পুনরায় একবার পড়াশোনার তাগিদে বিদ্যালয়ে ভর্তি হয় তন্ময়। সেই সময় মুর্শিদাবাদের আমতলা বাজারে একটি লটারির দোকান খুলে বসে তার দাদা। যদিও এরপর পড়াশোনার সাথে রাজমিস্ত্রি, রংমিস্ত্রি কিংবা দিনমজুরের কাজ করে পয়সা জোগাড় করতে দেখা যায় তাকে। পরবর্তীতে বিএ পাস এবং বাংলা নিয়ে মাস্টার্স ডিগ্রী অর্জন করে যুবক।
তবে এত পরিশ্রমের দ্বারা পড়াশোনা করলেও বর্তমানে একপ্রকার বেকার তন্ময়! সে জানিয়েছে, “রাজ্য পুলিশের কনস্টেবল, পুলিশ সুপার থেকে শুরু করে ব্যাঙ্ক এবং রেলের বিভিন্ন পরীক্ষায় বসেছি আমি। তবে লিখিত এবং শারীরিক পরীক্ষায় পাশ করার পরেও চাকরি পাওয়া যায়নি। এর মাঝেই কয়েকদিন পূর্বে আমার দাদা আচমকাই মারা যান এবং বর্তমানে মা অসুস্থ। ফলে গোটা পরিবারের পেট চালানোর জন্য আমাকে এই লটারি টিকিট বিক্রি করাই শুরু করতে হয়েছে।” তার এই দোকানের খবর বর্তমানে এলাকার বিভিন্ন প্রান্তে পৌঁছে গিয়েছে, ফলে গত কয়েকদিনে দোকানের সামনে ভিড় জমিয়েছে বহু মানুষ।
এই প্রসঙ্গে তন্ময় বলে, “বর্তমানে চাকরির জন্য পরিশ্রম করে সময় নষ্ট হচ্ছে। ছেলেমেয়েদের পড়িয়েও সেরকম টাকা রোজগার হয় না। এছাড়া আমার কাছে তেমন পয়সাও নেই যে ব্যবসা শুরু করতে পারব। তাই এই মুহূর্তে লটারি বিক্রি করাই আমার কাছে একমাত্র রাস্তা মনে হয়েছে। এই টিকিট বিক্রি করে দিনে আড়াইশো থেকে তিনশো টাকা রোজগার করতে পারছি আর তাতেই চলে যাচ্ছে সংসার।”
তবে লটারির দোকান খুলে বসলেও প্রস্তুতিতে খামতি দেখা যায় না যুবকের। পুলিশ কিংবা আর্মিতে যোগ দেওয়ার স্বপ্ন এখনো দেখে চলেছে সে এবং সেই কারণে সকালে দৌড় থেকে শুরু করে দোকানের ভেতর একাধিক সময় বই পড়তেও দেখা যায় এমএ পাশ তন্ময়কে।