বাংলা হান্ট ডেস্ক: আগামী ৭ মার্চ থেকে শুরু হচ্ছে চলতি বছরের মাধ্যমিক পরীক্ষা। জীবনের প্রথম বড় পরীক্ষা দিতে যাওয়ার আগে তাই জোরকদমে শেষ মুহূর্তের প্রস্তুতি নিচ্ছে পড়ুয়ারা। এদিকে, মাধ্যমিক পরীক্ষা নিয়ে ইতিমধ্যেই একাধিক বিধিনিষেধ জারি করেছে মধ্যশিক্ষা পর্ষদ। পাশাপাশি, এখনও করোনার রেশ থেকে যাওয়ায় কোভিড বিধি মেনে চলার ক্ষেত্রেও কড়া নির্দেশ দিয়ে সতর্ক করা হয়েছে পরীক্ষা কেন্দ্রগুলিকে।
এছাড়াও, হোয়াটসঅ্যাপে মাধ্যমিক পরীক্ষার প্রশ্নফাঁস ঠেকাতে এবার বড় সিদ্ধান্ত নিল রাজ্যের মধ্যশিক্ষা পর্ষদ। জানা গিয়েছে যে, পরীক্ষা শুরুর প্রথম ১ ঘন্টা ১৫ মিনিট শৌচালয়ে যেতে পারবে না পরীক্ষার্থীরা। যদিও, অন্যান্য বারে পরীক্ষা শুরু হওয়ার ৪৫ মিনিট পরেই শৌচালয়ে যাওয়ার অনুমতি দেওয়া হত পরীক্ষার্থীদের।
এদিকে, আগামী সোমবার সকাল ১১.৪৫ মিনিট থেকে শুরু হতে চলেছে চলতি বছরের মাধ্যমিক পরীক্ষা। দুপুর ১২ টা থেকে উত্তর লেখা শুরু হবে। যদিও, নতুন নিয়ম অনুযায়ী, দুপুর ১.১৫ মিনিটের আগে হল থেকে কেউ বাইরে যাওয়ার অনুমতি পাবে না। পাশাপাশি, পরীক্ষা শেষ হবে বিকেল ৩ টায়।
এছাড়াও জানা গিয়েছে যে, শুধুমাত্র পরীক্ষার প্রথমদিন পরীক্ষার্থীদের সঙ্গে পরীক্ষাকেন্দ্রের ভিতরে একজন অভিভাবক ঢুকতে পারবেন। যদিও, পরীক্ষা শুরুর ৩০ মিনিট আগে অর্থাৎ ১১.১৫ মিনিটে সেই অভিভাবককে বাইরে চলে আসতে হবে। এদিকে, শুধু পরীক্ষার্থীরাই নয়, বরং শিক্ষক-শিক্ষিকারাও মোবাইল, ক্যালকুলেটর, স্মার্ট ঘড়ি-সহ কোনো বৈদ্যুতিন যন্ত্র পরীক্ষা চলাকালীন কাছে রাখতে পারবেন না।
অপরদিকে, বিশেষ ক্ষমতাসম্পন্ন, দৃষ্টিহীন ও বধির পরীক্ষার্থীরা এবারও ৪৫ মিনিট বাড়তি সময় পাবে। এদিকে, কারও শ্রুতিলেখক থাকলে পরীক্ষাকেন্দ্রে প্রবেশের ক্ষেত্রে পর্ষদের অনুমতি থাকা অবশ্যই বাধ্যতামূলক। এছাড়াও, প্রত্যেক পরীক্ষার্থী উত্তরপত্রের প্রথম পাতায় নিজের নাম, রেজিস্ট্রেশন নম্বর এবং রোল নম্বর সঠিকভাবে লিখেছে কিনা তা অ্যাডমিট ধরে মিলিয়ে নিতে হবে ইনভিজিলেটরদের। এই বিষয়ে তাঁদের সতর্কও করা হয়েছে।
পাশাপাশি, আরও জানা গিয়েছে যে, পরীক্ষা শেষের ৩০ মিনিট আগে হলের দরজাগুলি বন্ধ করে সকলের খাতা জমা নেওয়ার পর তা মিলিয়ে দেখে দরজা খোলার নির্দেশ দিয়েছে পর্ষদ। এছাড়াও, পরীক্ষা শুরুর ১ ঘণ্টা ১৫ মিনিট পরে কেউ চাইলে খাতা জমাও দিতে পারবে। যদিও, সেই পরীক্ষার্থীর প্রশ্নপত্র জমা রাখতে হবে। পরীক্ষা শেষে নির্দিষ্ট ছাত্র বা ছাত্রী তার প্রশ্নপত্র ফেরত পাবে।
ইতিমধ্যেই, সমগ্র কাজের সুবিধার্থে রাজ্যের পরীক্ষাকেন্দ্রগুলিকে মোট ২৪ টি এলাকায় ভাগ করা হয়েছে। প্রত্যেক ভাগে একজন করে কনভেনর দায়িত্বে থাকবেন। তাঁদের অধীনে থাকবেন সেন্টার ইনচার্জ, অফিসার ইনচার্জ, ভেন্যু সুপারভাইজার, অ্যাডিশনাল ভেন্যু সুপারভাইজার ও পর্ষদ প্রতিনিধি। এই কয়েকজন ছাড়া পরীক্ষা চলাকালীন কেউ পকেটে মোবাইল রাখতে পারবেন না।
যদিও, এবার প্রথমবারের জন্য পার্শ্বশিক্ষক ও চুক্তিভিত্তিক শিক্ষকদের পরীক্ষা প্রক্রিয়ার বাইরে রাখা হয়েছে। এমনকি, নিজের ছেলে-মেয়ে বা কোনো আত্মীয় পরীক্ষার্থী থাকলেও শিক্ষক-শিক্ষিকাদের স্কুলে আসতে হবে। তবে তাঁদের ক্ষেত্রে পরীক্ষাকেন্দ্রে প্রবেশের ক্ষেত্রে নিষেধাজ্ঞা থাকছে। পাশাপাশি, প্রত্যেকটি ভাষার উত্তরপত্রের জন্য আলাদা আলাদা রংয়ের প্যাকেট বরাদ্দ হয়েছে। ইংরেজির জন্য সবুজ, নেপালীর জন্য লাল, ঊর্দুর মেরুন, ওড়িয়ার কমলা ও হিন্দির খাতা ঢুকবে নীল প্যাকেটে। এদিকে, উত্তরপত্র প্যাকেট করার সময় সর্বোচ্চ ৭৫ টি খাতা একসঙ্গে রাখা যাবে।
প্রসঙ্গত উল্লেখ্য, বিগত কয়েকবছর ধরে মাধ্যমিক পরীক্ষা শুরুর কিছুক্ষণের মধ্যেই পরীক্ষার প্রশ্নপত্র পাওয়া যায় নেটমাধ্যমে। যা নিয়ে বিভ্রান্তি শুরু হওয়ার পাশাপাশি ক্ষোভের মুখে পড়তে হয় পর্ষদকেও। এছাড়াও, এই ঘটনায় ছাত্রছাত্রীদের মনেও বিরূপ প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি হয়।
তাই এবার, মাধ্যমিক শুরুর মাসখানেক আগে থেকে নিরাপত্তা ও নজরদারি নিয়ে রাজ্য প্রশাসনের শীর্ষ মহলের সঙ্গে দফায় দফায় আলোচনা শুরু হয়। শুক্রবারও কলকাতা পুলিশের সদর দফতর লালবাজারে পুলিশ কর্তাদের সঙ্গে বৈঠক করেন পর্ষদ সভাপতি কল্যাণময় গঙ্গোপাধ্যায়। পাশাপাশি, জানা গিয়েছে যে, শনিবার তিনি পরীক্ষা ব্যবস্থা নিয়ে সাংবাদিক বৈঠকও করবেন।