বাংলাহান্ট ডেস্কঃ খ্রিস্টপূর্ব ৫৯৯ বছর আগে চৈত্র মাসের শুক্লপক্ষের ত্রয়োদশীর তারিখে জন্ম হয় ভগবান মহাবীর (Mahabir)। তিনি লিচ্চিভি রাজবংশে জন্মগ্রহণ করেন। মানব সমাজকে অন্ধকার থেকে আলোর দিকে নিয়ে আসার জন্যই তার জন্ম হয়। মহাবীর স্বামী তাঁর শিক্ষার দ্বারা পৃথিবীর জনসাধারণকে সঠিক পথ দেখানোর চেষ্টা করেছিলেন। এই প্রসঙ্গে তিনি পাঁচটি মহাব্রত, পাঁচটি অবর্তব্রত, পাঁচটি সমিতি এবং ছয়টি প্রয়োজনীয় বিধি সম্পর্কে বিশদভাবে উল্লেখ করেছিলেন। এই ব্রতই বর্তমানে জৈন ধর্মের মূল ভিত্তিতে পরিণত হয়েছে। পুরাণ মতে যা সত্য, অহিংসা, আস্থে, ব্রহ্মচরিত এবং অপরিগ্রহ একত্রে মিলে বলা হয় পাঁচশিল।
ভগবান মহাবীরের মতানুসারে সত্যই এই পৃথিবীতে সবচেয়ে শক্তিশালী বিষয়। তাই যেকোনো পরিস্থিতিতেই মানুষের সত্য কথা বলা উচিত। এর পাশাপাশি তিনি নিজের মতো করে অন্যকে ভালবাসার বার্তাও দিয়েছিলেন সবাইকে।
পুরাণ কথা অনুসারে, একদিন মহাবীর স্বামী একটি বনে তপস্যা করছিলেন। সেই বনে কিছু রাখাল তাদের গরু এবং ছাগলকে খাওয়ানোর জন্য নিয়ে গিয়েছিল। সেই রাখালগণ তপস্যা সম্পর্কে কিছুই জানত না। রাখালরা মহাভীর স্বামীকে তপস্যারত অবস্থায় বসে থাকতে দেখে ঠাট্টা-বিদ্রূপ করতে লাগল। কিন্তু স্বামীজী রাখালদের দিকে কনম খেয়ালই করেননি। কারণ তিনি ধ্যানে মগ্ন ছিলেন। তৎক্ষণাৎ এই সংবাদ আশেপাশের গ্রামে পৌঁছে গেলে, সেখান থেকে প্রচুর মানুষ স্বামীজির থানে উপস্থিত হয়। ধ্যান ভেঙ্গে মহাবীর ভগবান চোখ খুললে, ওই বালকদের জন্য ক্ষমাপ্রার্থী হয় তাঁদের বাড়ির লোকেরা। কিন্তু মহাবীর স্বামীজি তাঁদের কোন রূপ শাস্তি না দিয়েই এক কথায় তাঁদের মুক্তি দিয়ে দেয়।
সেই থেকে মহাবীর জয়ন্তীর দিন সকাল থেকেই তাঁর অনুগামীরা মহাবীর উৎসবের সূচনা করতে থাকেন। বিভিন্ন জায়গায় প্রভাত ফেরি অনুষ্ঠিত হয়। বড় বড় মিছিলগুলিতে পালং শাক নিয়ে পদযাত্রা করা হয়। মহাভীর স্বামীকে সোনার ও রৌপ্য কলসে অভিষেক করা হয়। তারপর মন্দিরের চূড়ায় মন্দিরের পতাকা উত্তীলন করা হয়। এই ভাবে জৈন ধর্মের ধর্মীয় স্থানগুলিতে সারা দিনব্যাপী মহাবীর ভগবানের উদ্যেশ্যে কর্মসূচির আয়োজন করা হয়। এইভাবে প্রতিবছরের ন্যায় ৬ ই এপ্রিল অর্থাৎ গতকাল মহাবীর জয়ন্তী পালন করা হয়েছিল। তবে এই লকডাউনের বাজারে সেভাবে ধুমধাম করে পালিত না হলেও, মানুষজন নিজেদের ঘরেই মহাবীর উৎসব পালন করেছিল।