মেয়ের জন্মের পর মিষ্টি কেনার পর্যন্ত টাকা ছিল না, একটি আইডিয়ায় আজ কোটি টাকার মালিক

বাংলা হান্ট নিউজ ডেস্ক: কাজ তা যেমনই হোক না কেন, তাকে ছোট বা বড় করে দেখা উচিত নয়। কাজের প্রতি মানুষের মনোভাবই জীবিকাটিকে ছোট বা বড় করে তোলে। কিন্তু আজকের যুবসমাজের একটা বড় অংশ ছোটখাটো কাজ করতে লজ্জা পায়। এটি বর্তমান উচ্চ বেকারত্বের হারের একটি বড় কারণ। আজও সমাজে একটা বিশ্বাস আছে যে, একজন মানুষ ভালো অবস্থানে না পৌঁছানো পর্যন্ত সম্মান পায় না। কিন্তু আজকের প্রতিবেদনে যে গল্প বলতে চলেছি, তা আজকের তরুণদের জন্য একটি আয়নার কাজ করতে পারে। কারণ আজ আমরা সেই যুবকের কথা বলতে যাচ্ছি যে এই সব লাজলজ্জা উপেক্ষা করে একসময় চা বিক্রির ব্যবসা শুরু করেছিল। আজ হাজার হাজার মানুষ প্রতিদিন তার চা পান করে এবং তাদের মাসিক উপার্জন শুনে আপনি বিশ্বাস করবেন না।

আজকের গল্পের নায়কের নাম গোটা মহারাষ্ট্র জানে কিন্তু পশ্চিমবঙ্গ অবধি হয়তো তার গল্প এখনও হয়তো এসে পৌঁছয়নি। পুনের বাসিন্দা এই ব্যক্তির নাম নবনাথ ইয়েভলে। আজ ইয়েভলে তার তৈরি চায়ের গুণে মহারাষ্ট্রের প্রতিটি প্রান্তে পৌঁছে গিয়েছে। অথচ একসময় নিজের মেয়ের জন্মের পর মিষ্টি কিনে লোককে খাওয়ানোর সামর্থ্যও ছিল না। কিন্তু আজ আপনি বিশ্বাস করতে পারবেন না যে তিনি চা বিক্রি করে এত টাকা উপার্জন করছেন যার ফলে মহারাষ্ট্রের সবচেয়ে ধনী চাওয়ালা হয়ে উঠেছেন তিনি।

আপনি আপনার দেশের সর্বত্র চা প্রেমীদের খুঁজে পাবেন। ভারতের যে কোন কোণে আপনি সেখানে চায়ের দোকানে আড্ডার দৃশ্য দেখতে পাবেন নিশ্চিতভাবেই। অন্যান্য মানুষের মতো নবনাথও চা পছন্দ করতেন। এমতাবস্থায় তার মাথায় চা ব্যবসার চিন্তা আসে। তিনি পুনেতে চাপ রোটি বিক্রির ব্যবসা শুরু করার সিদ্ধান্ত নেন। তার ব্যবসা অন্যান্য ছোট চায়ের দোকানের মতোই চলছিল। কিন্তু নিজের মস্তিষ্ককে কাজে লাগিয়ে তিনি ব্যবসাকে অনেক বড় করে ফেলেছে। তিনি পুনেতে “ইয়েভলে চা” নাম দিয়ে একটি চায়ের দোকান খুলে ব্যবসা শুরু করেন। মানুষ যে তার চা পছন্দ করবে তা তিনি ভাবেনি। কিন্তু তার চা এতটাই মনোমুগ্ধকর যে মানুষ তার চায়ের স্বাদ খুব পছন্দ করেছে। ফলে দিনদিন তার দোকানের সুনাম বাড়তে থাকে। লোকেরা নিজের পরিচিতদের কাছে তার চায়ের প্রশংসা করত এবং তাদের তার দোকানে চায়ের জন্য নিয়ে আসত। গ্রাহকদের আগ্রহের কারণে তিনি তার ব্যবসা সম্প্রসারণের সিদ্ধান্ত নেন।

এই ব্যবসা শুরু করার আগেও নবনাথ ব্যবসা নিয়ে পড়াশোনা করেছিলেন। মানুষ কী ধরনের চা পছন্দ করে, চায়ে কী কী উপাদান রাখতে হয়, তিনি এই সমস্ত বিষয়গুলি মনোযোগ সহকারে অধ্যয়ন করেছিলেন। তিনি চা নিয়েও প্রতিনিয়ত পরীক্ষা-নিরীক্ষা করতেন, মানুষের প্রতিক্রিয়া নিচ্ছিলেন, তাই তাঁর চায়ের স্বাদ মানুষের জিভে লেগেই থাকত। দিন দিন তার দোকানে ভিড় বাড়তে থাকে।তিনি তার প্রথম দোকানে ৪ বছর ধরে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করেন এবং অবশেষে একটি বিশেষ ফর্মুলা প্রয়োগ করেন যা চা-প্রেমীদের পছন্দ হয়েছিল। তার দোকানে এত ভিড় হতো যে তাকে দোকানে কর্মচারী রাখতে হয়েছিল। কিছুদিন পরে তিনি তার দোকানের আরেকটি শাখা খুললেন। তিনি তার চায়ের ফ্র্যাঞ্চাইজির নাম দিয়েছেন ইয়েভালে নেক্টার। এখন তাদের প্রতিটি ফ্র্যাঞ্চাইজি ১০ থেকে ১২ জন লোক নিয়োগ করে। তার একটি দোকানে দিনে ৩,০০০ থেকে ৪,০০০ কাপ চা বিক্রি হয়। ফলস্বরূপ, তাদের বার্ষিক আয়ের পরিমাণ আজ ৪০ কোটি টাকার বেশি, তখন থেকে, ইয়েভালে টি হাউসের জনপ্রিয়তা এতটাই বেড়েছে যে তারা এখন এই চায়ের ব্র্যান্ডটিকে সারা বিশ্বে জনপ্রিয় করতে চায়।

ভবিষ্যতে বিদেশে তার ব্র্যান্ডের আরও অনেক কেন্দ্র খোলার এবং এটিকে একটি আন্তর্জাতিক ব্র্যান্ড করার পরিকল্পনা করেছেন তিনি। তিনি বিশ্বাস করেন যে এটি কেবল তার ব্র্যান্ডকে বড় করবে না, হাজার হাজার যুবকের কর্মসংস্থানেরও যোগান দেবে। নবনাথ প্রমাণ করেছেন যে পৃথিবীতে কোন কাজই ছোট বা বড়, বড় বা ছোট নয়, এটি কেবল মানুষের চিন্তাভাবনা এবং তাদের দৃষ্টিভঙ্গি। আপনি যদি আপনার দৃষ্টিভঙ্গি পরিবর্তন করেন, তাহলে হয়তো পুরো পরিস্থিতি বদলে যাবে। মানুষ অপেক্ষা করছে নবনাথের তৈরি অমৃতের মত স্বাদের চায়ের ফ্র্যাঞ্চাইজির আরও বেড়ে ওঠার, অথচ যাকে ঘিরে এতকিছু তার কাছে একসময় চায়ের সাথে বিস্কুট খাওয়ারও পয়সা থাকতো না।


Reetabrata Deb

সম্পর্কিত খবর