বাংলা হান্ট ডেস্কঃ বিগত দুদিন ধরে ‘কালী’ তথ্যচিত্র এবং এই সংক্রান্ত একটি পোস্টার নিয়ে উত্তপ্ত হয়ে রয়েছে দেশের পরিস্থিতি। এমনকি সেই আঁচ এসে পৌঁছেছে বাংলাতেও। সোশ্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল একটি পোস্টারে মা কালীকে সিগারেট খেতে দেখা যাওয়ায় ইতিমধ্যেই প্রতিবাদে সামিল হয়েছে বহু মানুষ। তার মধ্যেই আবার মা কালীকে ‘মদ ও মাংস ভক্ষণকারী দেবী’ বলে আখ্যা দিয়েছেন তৃণমূল সাংসদ মহুয়া মৈত্র, যা নিয়ে সরগরম বাংলার রাজনীতি। এমনকি তৃণমূল নেত্রীর গ্রেফতারির দাবিতে বাংলার বিভিন্ন প্রান্তে প্রতিবাদে নেমেছে বিজেপি। একাধিক থানায় তাঁর বিরুদ্ধে এফআইআর পর্যন্ত দায়ের করা হয়েছে আর এবার রাজ্যের বিরোধী দলকে চ্যালেঞ্জ ছুঁড়ে দিলেন মহুয়া মৈত্র। মা কালীকে নিয়ে তাঁর করা বক্তব্যে কোনরকম ভুল থাকলে বিজেপিকে তা প্রমাণ করার চ্যালেঞ্জ ছুঁড়ে দেন তিনি।
বর্তমানে মহুয়া মৈত্রের পাশে নেই তৃণমূল দল। গতকাল তারা টুইটার হ্যান্ডেলে তৃণমূল সাংসদদের মন্তব্যের পাশে না থাকার বার্তা দেয়। অপরদিকে বাংলা সহ বিজেপি শাসিত মধ্যপ্রদেশেও তাঁর বিরুদ্ধে একাধিক এফআইআর দায়ের করা হয়েছে। যদিও বর্তমানে এসকল ঘটনা নিয়ে চিন্তিত নন মহুয়া। বরং গতকাল তিনি বলেন, “আমি মা কালীর উপাসক। বিজেপি যা করতে পারে, ওরা করুক। আমি ওদের ভয় পাই না। ওদের গুন্ডা আমাকে ভয় পাওয়ায় না, ওদের পুলিশেও আমি ভয় পাই না। সমালোচনাতে তো নাই।”
উল্লেখ্য, তৃণমূল সাংসদের বিরুদ্ধে বর্তমানে রাস্তায় নেমেছে মানুষ। তবে এর মাঝেই আবার কৌশল নিতে দেখা যাচ্ছে মহুয়া মৈত্রকে। হোয়াটসঅ্যাপের ডিপিতে যেমন কালী ঠাকুরের ছবি দিয়েছেন, সেরকম ইতিমধ্যে তিনি নিজেকে মা কালীর উপাসক বলেও দাবি করেছেন। গতকাল তিনি বলেন, “রাজ্যে যেখানে খুশি এফআইআর দায়ের করুক বিজেপি। কিন্তু এটা মনে রাখতে হবে যেকোনো থানায় অভিযোগ দায়ের করলে তার পাঁচ কিলোমিটারের মধ্যে অন্তত একটি কালী মন্দির পাওয়া যায়। সেখানে দেবীকে কি দিয়ে পূজা করা হয়, সেটা ওদের জানা উচিত।”
গোটা দেশে এই বিতর্ক মাঝে গতকাল বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী তৃণমূল নেত্রীর গ্রেফতারি দাবি করেন। পয়গম্বর ইসুতে প্রাক্তন বিজেপি মুখপাত্র নূপুর শর্মার প্রসঙ্গ টেনে এনে তিনি রাজ্য সরকারকে ১০ দিনের সময় পর্যন্ত বেঁধে দেন। একদিকে যেমন পয়গম্বরকে নিয়ে নূপুর শর্মার মন্তব্যের পর গোটা দেশে বিতর্ক সৃষ্টি হয়েছিল, বর্তমানে মহুয়া মৈত্র কি সেই একই পথে হাঁটলেন?
সেই প্রশ্নের জবাবে অবশ্য মহুয়া মৈত্র বলেন, “কারোর ধর্মে কোন রকম আঘাত লাগুক, সেটা আমি চাই না। আমি নিজে হিন্দু ধর্মে বিশ্বাস করি। তবে নূপুর শর্মা যেভাবে পয়গম্বরকে অপমান করেছিলেন এবং মুসলমানদের ভাবাবেগে আঘাত এনেছিলেন, আমি সেটা করিনি। আমি শুধুমাত্র মা কালীকে পূজার কথা বলেছি। এই দুটি বিষয় এক নয়।”
প্রসঙ্গত, সম্প্রতি চিত্রপরিচালক লীনা মণিমেকলিয়ের কালী তথ্যচিত্র প্রদর্শিত হয় কানাডার একটি মিউজিয়ামে। এরপরেই সেই সংক্রান্ত একটি পোস্টার গোটা সোশ্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল হয়ে পড়ে, যেখানে মা কালীকে সিগারেট খেতে দেখা যায়। এই ঘটনা হিন্দু সম্প্রদায়ের মানুষের ভাবাবেগে আঘাত করেছে বলে অভিযোগ উঠতে থাকে। এই প্রসঙ্গে মন্তব্য করতে গিয়ে মহুয়ার দাবি, “মা কালী তো মদ মাংসের দেবী। সেখানে যদি সিগারেট খায়, তাহলে আর কিসের আপত্তি?” এরপরেই শুরু হয় বিতর্ক। অবশ্য শেষপর্যন্ত এই বিতর্ক কোথায় গিয়ে থামে, সেটাই দেখার।