বাংলা হান্ট ডেস্কঃ একের পর এক দুর্নীতি ইস্যুতে বেহাল দশা রাজ্যের। বিগত কিছুদিন ধরে লাইমলাইটে থাকা নিয়োগ দুর্নীতিকে ম্লান করে চারা দিয়ে উঠেছে আবাস দুর্নীতি (Awas Corruption) ইস্যু। যেদিকেই চোখ যাচ্ছে, সেদিক থেকে উঠে আসছে ভূরি-ভূরি আবাস দুর্নীতির ঘটনা। আর সেই অভিযোগের তীর গিয়ে পড়ছে বাংলার শাসক দলের ওপর। আবাস যোজনায় তালিকায় জ্বলজ্বল করছে তৃণমূল নেতা, কর্মীদের নাম। এবার এরই মধ্যে শাসক দলের অস্বস্তি আরও কিছুটা বাড়িয়ে আবাস যোজনার দুর্নীতির কথা মেনে নিয়ে পদত্যাগ (Resignation) করলেন মালদার (Malda) তৃণমূল (TMC) পঞ্চায়েতের সদস্য (Panchayat Member)।
জানা গিয়েছে, তৃণমূল নেতা মালদার হরিশ্চন্দ্রপুর ১ নম্বর ব্লকের বড়োই গ্রাম পঞ্চায়েতের চয়নপুর বুথের তৃণমূলের পঞ্চায়েত সদস্য টিঙ্কর মহালদার। এলাকায় আবাস দুর্নীতির অভিযোগে গত ২৫ তারিখ তাঁকে ঘিরে টায়ার জ্বালিয়ে বিক্ষোভ দেখান স্থানীয় মানুষজন। স্থানীয় বাসিন্দাদের অভিযোগ, টাকার বিনিময়ে সমীক্ষা হয়েছে আবাস যোজনার। ১৫-২০ হাজার টাকা কাটমানি নিয়ে ঘর দেওয়া হয়েছে সকলকে। যাঁদের প্রকৃত ঘরের প্রয়োজন, তাঁদের কারোর নাম তালিকায় নেই। অন্যদিকে বড়োলোকেদের নাম রয়েছে সেই তালিকায়।
এই প্রেক্ষিতেই কিছুদিন আগে কাটমানি নেওয়ার অভিযোগ উঠেছিল ওই এলাকার বুথে সমীক্ষার দায়িত্বে থাকা পঞ্চায়েতের গ্রাম সম্পদ কর্মী মুক্তার আলম ও টিঙ্কর মহলদারের বিরুদ্ধে। জানা গিয়েছে, এরা দু’জনই এলাকায় সক্রিয় তৃণমূল নেতা হিসেবে পরিচিত। এরপরই দুর্নীতির অভিযোগ তুলে এই নেতার বিরুদ্ধে চড়াও হন গ্রামের লোকজন। শুধু তাই নয়, এলাকায় স্থানীয় কয়েকজন তৃণমূল নেতাও কোণঠাসা করে রেখেছিল টিঙ্করকে। সামিল হয়েছিল বিক্ষোভে।
এরপরই আর কোনো কূলকিনারা না পেয়ে শেষমেশ বুধবার হরিশ্চন্দ্রপুর ১ নম্বর ব্লক অফিসে গিয়ে ইস্তফা দেন টিঙ্কর। তবে নিজের বিরুদ্ধে ওঠা যাবতীয় অভিযোগ অস্বীকার করেই ইস্তফা দিয়েছেন তিঁনি। এরপর সংবাদমাধ্যমের মুখোমুখি হয়ে দলের বিরুদ্ধে বিস্ফোরক অভিযোগ করে টিঙ্কর জানায় “প্রধানমন্ত্রী আবাস যোজনা নিয়ে সমস্যা চলছে গ্রামে। আমরা কিছুই করিনি। যা করেছে আশাকর্মীরা করেছে। কিন্তু গ্রামবাসীরা বিশ্বাস করতে চাইছেন না। জনগণ আমাকেই বলছে। গ্রামে গেলেই গালিগালাজ করছে। সেই কারণে ইস্তফা দিয়েছে। “পাশাপাশি তিঁনি আরও বলেন, “দুর্নীতি হয়েছে। আমাদের দলের লোকেরাই দুর্নীতি করেছে। তাই মানুষ বিক্ষোভ দেখাচ্ছেন। আমি পদ থেকে ইস্তফা দিলাম শুধু তবে এই দলই করব।”
তবে টিঙ্করের এই অভিযোগ মানতে নারাজ স্থানীয় তৃণমূল নেতৃত্ব। ঘটনার প্রেক্ষিতে হরিশচন্দ্রপুর ব্লক তৃণমূল সভাপতি মানিক দাস বলেন, “এটা বিজেপির চক্রান্ত। ওদের জন্যই চারিদিকে এই ধরনের একটা সমস্যা তৈরি হয়েছে। ঘরের যোগ্য যারা তাঁরা অবশ্যই ঘর পাবেন।” অন্যদিকে তৃণমূল পঞ্চায়েত সদস্যের এই ইস্তফার বিষয়কে হাতিয়ার করে ময়দানে নেমেছে স্থানীয় বিজেপি (BJP) নেতৃত্ব। এই বিষয়ে স্থানীয় বিজেপি নেতা রূপেশ আগারওয়াল বলেন, “ওরা বুঝতে পারেনি জনগণ ওদের সঙ্গে খেলা করবে। এরপর ইস্তফা দেওয়ার লাইন পড়ে যাবে। পঞ্চায়েত ভোটে প্রার্থী পাবে না।”