‘শিল্পই বাংলার লক্ষ্য এবং বিনিয়োগ আমাদের একমাত্র গন্তব্য’, এই বিশেষ মন্ত্র নিয়েই বাংলার বুকে আয়োজিত হল বিশ্ব বাংলা বাণিজ্য সম্মেলন। অতীতে বাংলায় শিল্পের জন্য উপযুক্ত পরিবেশ না থাকার কারণে বিরোধীরা অধিকাংশ সময়ে রাজ্য সরকারের উপর চাপ সৃষ্টি করে আসতো। ফলে তাদের উপযুক্ত জবাব দেওয়া এবং রাজ্যের শিল্পবান্ধব পরিবেশ বিশ্বের সামনে তুলে ধরাই প্রধান লক্ষ্য ছিল বাংলার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের। দুদিন ব্যাপী বিশ্ব বাংলা বাণিজ্য সম্মেলনে উপস্থিত বিশ্বের একাধিক প্রতিনিধিদের সামনে রাজ্যের পরিকাঠামো তুলে ধরেন তিনি। আর এদিন মুখ্যমন্ত্রী ঘোষণা করলেন যে, “বাণিজ্য সম্মেলন থেকে বাংলায় 40 লক্ষ কর্মসংস্থানের প্রস্তাব এসেছে।”
সরকার সূত্রে খবর, দুদিনব্যাপী চলা এই বাণিজ্য সম্মেলনে বিশ্বের 42 দেশ থেকে প্রায় চার হাজারেরও বেশি প্রতিনিধি অংশগ্রহণ করেন। মুখ্যমন্ত্রী বলেন, “দেশ-বিদেশের একাধিক প্রান্ত থেকে সকলের অংশগ্রহণই প্রমাণ করেছে আমাদের সম্মেলনের সফলতা। বর্তমানে এই সম্মেলন থেকে বাংলার প্রাপ্তি প্রায় 3 লক্ষ 42 হাজার 375 কোটি টাকার বিনিয়োগ।” এছাড়াও তিনি বলেন, “এইবার আমাদের সম্মেলনে প্রথমবারের জন্য গৌতম আদানি যোগদান করেন। তাঁর কোম্পানি আগামী দশ বছরের জন্য বাংলায় 10000 কোটি টাকার বিপুল অর্থ বিনিয়োগ করবে বলে জানিয়েছেন তিনি।”
এদিন মমতা ব্যানার্জি বলেন, “করোনার কারণে দেশে যেভাবে মানুষ কাজ হারিয়েছে, সেখানে বাংলায় কর্ম সংস্থানের মাত্রা প্রায় 40 শতাংশ হারে বেড়েছে। সবচেয়ে বড় কথা, এই বাণিজ্য সম্মেলনে আমরা 40 লক্ষ কর্মসংস্থানের প্রস্তাব পেয়েছি।” এবং ভবিষ্যতে রাজ্যে প্রায় দেড় কোটি ছেলেমেয়েরা কাজ পাবে বলেও জানান মুখ্যমন্ত্রী।
প্রসঙ্গত, করোনাকালীন সময় প্রায় দু’বছর বাংলায় বাণিজ্য সম্মেলন করা সম্ভব হয়ে ওঠেনি। এবারের অনুষ্ঠান নিয়ে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, “এই বছরের বাণিজ্য সম্মেলন আয়োজন করা নিয়ে অনেক চিন্তায় ছিলাম। বিদেশের একাধিক প্রতিনিধিরা তাদের আসার ব্যাপারে সংশয় প্রকাশ করেন। কিন্তু পরবর্তীকালে আমি সম্মেলন করার ব্যাপারে দৃঢ় মনোভাব দেখাই।” এছাড়াও সরকারের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, পরের বছর বিশ্ব বাংলা বাণিজ্য সম্মেলন হবে ফেব্রুয়ারি মাসের 1 থেকে 3 তারিখের ভিতর।
বাণিজ্য সম্মেলন থেকে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের এই ঘোষণা সত্ত্বেও এদিন বিরোধীরা তাঁকে কটাক্ষ করেন। এই বছরের বিশ্ব বাংলা বাণিজ্য সম্মেলনটি ছিল সরকারে প্রতিষ্ঠিত হওয়ার পর থেকে শাসক দলের ষষ্ঠ আয়োজন। ফলে বিরোধীদের মতে, প্রতিবারই সম্মেলন শেষে একাধিক বিনিয়োগের প্রস্তাব দেওয়া হলেও তার বাস্তবায়ন চোখে পড়ে না। ফলে এবারের বিনিয়োগের সম্ভাবনাও যে কতটা প্রকৃতপক্ষে সম্ভব হবে, সে বিষয়ে এদিন সংশয় প্রকাশ করে বিরোধী দলগুলি।